অর্ণব আইচ: একটি ভিডিও দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেল। তাতেও থেমে থাকেনি জালিয়াত। লালবাজারের (Lalbazar)এক পুলিশকর্তার ছবি পাঠিয়ে তাঁর নাম করেই দেওয়া হয় হুমকি। এই মানসিক চাপ আর নিতে পারেননি নারকেলডাঙার যুবক। বুধবার সন্ধে নাগাদ বাথরুম থেকে উদ্ধার হয় বছর ছত্রিশের পিন্টু দে ওরফে বাপ্পার দেহ। পেশায় ওই যুবক ছিলেন অভিনেতা অঙ্কুশ (Ankush Hazra) ও অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলার আপ্তসহায়ক। এই ঘটনার পর অঙ্কুশ সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, কাছের মানুষকে হারিয়ে তাঁরা শোকাহত।
বাড়ির ভিতর যেমন মা-বাবা খেয়াল রাখেন, গত দশ বছর ধরে তেমনই বাড়ির বাইরে তাঁদের প্রিয় ‘বাপ্পা’দা তাঁদের দেখভাল করতেন। লালবাজারের এক কর্তা জানান, অভিনেতা অঙ্কুশ তাঁদের ফোন করে বিষয়টি জানান। পুলিশকর্তার নাম করে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি ঘিরে তদন্ত চলছে। এই ঘটনার পিছনে রাজস্থানের ভরতপুরের একটি গ্যাংয়ের যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। নারকেলডাঙা থানায় বিষয়টি জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলার চাই বাংলার মেয়ে’, একুশের নির্বাচনে মমতার জন্য গান বাঁধলেন কবীর সুমন]
পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙা নর্থ রোডের একটি বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন বাপ্পা। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তাঁর সাড়াশব্দ না পাওয়ায় পরিবারের লোকেরা বাথরুমের দরজা ভাঙেন। সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বাপ্পাকে। নারকেলডাঙা থানার পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশের দাবি, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। বাপ্পার পিসতুতো দাদা রাজু দাস জানান, তাঁর ভাইয়ের মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপে দু’টি নম্বরে চ্যাট দেখেই মৃত্যুরহস্যের মোড় ঘোরে। চ্যাটগুলিতে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করে বলা হয়েছে, ভিডিও আপলোড করে দেওয়া হবে। বাপ্পা বারবার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে ভিডিওটি মুছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। বলেছেন, তিনি অত্যন্ত গরিব।
কিন্তু এও প্রমাণিত হয়েছে যে, ভিডিওটি আপলোড করার ভয় দেখিয়ে অন্তত এক মাস ধরে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে। কখনও দুই, কখনও তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়। ক্রমে দুই দফায় তিনি ৫ হাজার টাকা ও এক দফায় দশ হাজার টাকা ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে জালিয়াতদের পাঠান। এমনকী, তিনি অভিনেতার কাছ থেকে টাকা চেয়েও জালিয়াতদের দেন বলে দাবি পরিবারের। এর পরও তাঁর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ওই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তখন জালিয়াত হোয়াটস অ্যাপে লালবাজারের এক পুলিশকর্তার একটি ভুয়া পরিচয়পত্র পাঠায়। এমনকী, ওই পুলিশকর্তার ছবি পাঠিয়ে সে হুমকি দিয়ে জানায়, দু’মিনিটের মধ্যে টাকা না দিলে দু’ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। পরিবারের দাবি, বাপ্পা এই চাপ নিতে পারেননি বলেই আত্মহত্যা করেন।
[আরও পড়ুন: Exclusive: এবার তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’! তুঙ্গে জল্পনা]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে আসা অজ্ঞাতপরিচয় সুন্দরী মহিলাদের ডিপি দেখে অনেকেই সাড়া দেন। নিজেকে মহিলা বলে দাবি করে চ্যাট করে জালিয়াত। মহিলার অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে ব্যক্তিকেও তাঁর অশ্লীল ভিডিও পাঠাতে বলে। এই ফাঁদে পড়লেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেল ও ভয় দেখানো। বাপ্পা কী ধরনের ভিডিও পাঠান, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।