অপরিবর্তনীয় সুদের হার তথা ফিক্সড রেট নিয়ে জেনেছেন সবিস্তারে। তাহলে এর বিপরীতধর্মী ধারণা অর্থাৎ ‘ফ্লোটিং রেট’-টিই বা বাদ যায় কী করে? লগ্নিকারীরা জেনে রাখুন, ‘ফ্লোটিং রেট’ ডেট ফান্ডে লগ্নি করার উদ্দেশ্যই হল উন্নততর রিটার্ন প্রাপ্তি। লিখছেন নীলাঞ্জন দে
সঞ্চয়-এর পাঠকের জন্য এতদিন ডেট মার্কেট নিয়ে যা আলোচনা করেছি, সে বন্ডই হোক বা ডিপোজিট, সবের মূলে ছিল ‘ফিক্সড রেট’-অর্থাৎ সুদের হারের পরিবর্তন না হওয়া। এর বিপরীতধর্মী ধারণাটি, মানে ‘ফ্লোটিং রেট’ নিয়ে কখনওই কিছু বলা হয়নি। আজ যখন ইন্টারেস্ট রেটের অনিশ্চয়তা নিয়ে মানুষের এত কৌতূহল, ফ্লোটিং রেট নিয়ে চর্চা করা উচিত বলেই মনে হয়। আমাদের এই লেখার গোড়ার দিকে প্রাথমিক কিছু আলোচনা করে নিয়ে, ফ্লোটিং রেট-ভিত্তিক প্রোডাক্ট সম্বন্ধে জানাতে চাই।
প্রথমেই বলি, সুদের হার কখনওই কোনও স্থায়ী ধারণা নয়, মার্কেটের পরিস্থিতির অদলবদলের সঙ্গে সঙ্গে সুদের হারও বদলায়। বস্তুত, ‘ইন্টারেস্ট রেট রিস্ক’-এই ধরনের পরিবর্তনের জন্যই তৈরি হয়। এবং ঋণপত্রের বাজারে এটি একেবারেই একটি রূঢ় সত্য তথা বাস্তব। ঋণপত্র, মানে ডেট ইনস্ট্রুমেন্ট, গঠনও করা হয় ফিক্সড বা ফ্লোটিং রেট সম্বল করে।
[আরও পড়ুন: কীভাবে বিমার ভরসার সঙ্গেই পাবেন লগ্নির উপহার? জেনে নিন খুঁটিনাটি]
ধরা যাক, আপনার সামনে একটি Floating Rate Bond আনা হল। জেনে রাখুন, এটির সুদের হার বদল হবে মার্কেট ট্রেন্ড অনুযায়ী, যখন বেঞ্চমার্ক রেটের পরিবর্তন হবে। এই বেঞ্চমার্ক রেট ‘রেপো রেট’ হতে পারে। সংক্ষেপে, Repo Rate-এর ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া সব ব্যাংককে টাকা ধার দেয়।
এবার পরবর্তী পয়েন্টগুলি দেখুন–
১. ফ্লোটিং রেট ঋণপত্রের রিটার্ন বেঞ্চমার্ক রেটের উপর নির্ভরশীল।
২. যদি ফিক্সড এবং ফ্লোটিং, দুই-ই বেছে নেন, এবং নিজের জন্য দু’ধরনেরই ঋণপত্র কেনেন, তাহলে আপনার পোর্টফোলিও আরও ডাইভারসিফায়েড হবে, তাতে লাভবানই হবেন আপনি।
৩. সরাসরি যদি এমন ঋণপত্র ডেট মার্কেট থেকে কিনতে চান, তাহলে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারেন। ফান্ড ম্যানেজারের উপর সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিন।
৪. সেক্ষেত্রে আপনি ফ্লোটিং রেট ডেট ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। উদ্দেশ্য হল উন্নততর রিটার্ন।
বুঝতেই পারছেন, এ ধরনের লগ্নির ভবিষ্যৎ জুড়ে রয়েছে ইন্টারেস্ট রেটের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে। এদেশে, ইনফ্লেশনের চাপ যথেষ্ট থাকলেও ইন্টারেস্ট রেটের হার বাড়ছে না। তবে অনেকেই মনে করেন সামগ্রিকভাবে সুদ আগামীতে বাড়বে। কবে তা হবে বলা মুশকিল, কিন্তু অর্থনীতির নানা টানাপোড়েনে সুদ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তবে কেবল সুদের ওঠানামার কথা ভেবেই এখানে বিনিয়োগ করবেন না। আপনার রিস্ক প্রোফাইলের সঙ্গে মিলে গেলে তবেই লগ্নির কথা ভাববেন, নচেৎ নয়। আরও জেনে নিন, ট্যাক্সের নিয়মটি। ফ্লোটিং রেট ফান্ড মূলত ডেট ফান্ড, তাই আয়করের নীতি অনুযায়ী সেভাবেই ট্যাক্স ধার্য করা হয়। সেক্ষেত্রে তিন বছর না পেরিয়ে গেলে ‘লং টার্ম ক্যাপিটাল গেনস’ গণ্য করা হয় না। আপনার ট্যাক্স পরামর্শদাতার সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলে নেবেন।
আপনার কৌশল কী হবে?
১. সুদের দিকে নজর রাখুন, বাড়ার সুবিধা দেখলে লগ্নির পরিকল্পনা করুন।
২. সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে ফিক্সড থেকে ফ্লোটিংয়ে আসুন।
৩. যখন সত্যিই শুরু করবেন, কত দিনের জন্য বিনিয়োগ করবেন, তার যেন পরিষ্কার একটি উত্তর জানা থাকে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি কিছু না করাই হয়তো সমীচিন হবে। স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ, ধরুন ২৪ মাসের বেশি নয়, করাই উচিত হবে। তবে এ ব্যাপারে মনের জানলা খোলা রাখাই শ্রেয়।
৪. ফ্লোটিং রেট ফান্ডগুলি কী অবস্থায় আছে, দেখে নিন। বাজারে বেশ কিছু ভাল ফান্ড পাওয়া যাচ্ছে, নানা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এগুলি এনেছে। বেছে নেওয়ার দায়িত্ব আপনার।
নিচে বাছাই করা কিছু ফ্লোটিং রেট ফান্ডের উল্লেখ করছি।
এই চার্টের বাইরে গিয়ে আমরা একবার প্রামাণ্য একটি ফ্লোটার ফান্ডের পোর্টফোলিও দেখে নিই। এর জন্য বেছে নিলাম SBI Floating Rate Debt Fund, যার প্রধান হোল্ডিংগুলি এই রকম–
কেন্দ্রীয় সরকার বন্ড ৪১.২৫%
রাজ্য সরকার বন্ড ১৮.৩০% (বড়গুলির মধ্যে)
এই দুই ধরনের হোল্ডিং মিলিয়ে ফান্ড ম্যানেজার মোট ৭৬.৫২% বিনিয়োগ করেছেন ‘সভেরেন’ জাতীয় সিকিউরিটিতে।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)