প্রথম বার বিদেশ ঘুরতে যাচ্ছেন? সঠিক ট্রাভেল ইনসিওরেন্স কীভাবে বেছে নিতে পারেন? ‘সঞ্চয়’-এর জন্য বিশেষ এই লেখায় পাঠকদের জানাচ্ছেন ড. সন্তোষ পুরী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, হেলথ প্রোডাক্ট অ্যান্ড প্রসেস, টাটা এআইজি
প্রথম বার বিদেশ ভ্রমণের স্মৃতি সারা জীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকে। তবে সেই স্মৃতি যাতে দুর্বিষহ কিংবা ভোলার মতো না হয়ে ওঠে, তাই যাওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা করা খুব জরুরি। বেশ কিছু সতর্কতা আগাম নিতে হবে। নির্দিষ্ট কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই ‘জার্নি’ নিরাপদ এবং সুখকর হবে। ভারতীয়রা অর্থবর্ষ ২০২২-এ এপ্রিল থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিদেশযাত্রায় ১১.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯৪,০০০ কোটি টাকা) খরচ করেছিলেন, যা আগের বছর ঠিক এই সময়কালের তুলনায় ১২২ শতাংশ বেশি। রিজার্ভ ব্যাংকের পরিসংখ্যানই এ কথা বলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ব্যুরো অফ ইমিগ্রেশন-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ ট্রিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় বিদেশে গিয়েছেন, ২০২১ সালে একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৭.৭২ মিলিয়ন। এই ‘গ্রোথ’ চোখে আঙুল দিয়ে বোঝাচ্ছে-ভারতীয়দের মধ্যে পৃথিবীর নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখা, সেখানকার সংস্কৃতিকে জানার আগ্রহ বাড়ছে। তবে বিদেশযাত্রায় যে ঝুঁকি অনেক, সে কথা কারও অজ্ঞাত নয়। এই কারণেই জরুরি হল ট্রাভেল ইনসিওরেন্স কভার থাকা। ভ্রমণ বিমা। এর দৌলতে সফরকালে কেবলমাত্র যে অজানা এবং অবাঞ্ছনীয় যাবতীয় ঘটনা এড়াতে পারবেন, তাই-ই নয়! এর ফলে আপনি মনের শান্তি নিয়ে বিশ্বভ্রমণ করতে পারবেন।
প্রথম বার বিদেশ যাত্রা যাঁরা করতে চলেছেন, সঠিক ট্রাভেল ইনসিওরেন্স নির্বাচন করতে গিয়ে কোন কোন দিকে মনোযোগ দেবেন, দেখে নিন-
# তুল্যমূল্য বিচার : অজস্র পলিসি আছে চোখের সামনে। কোনটা আপনার জন্য সঠিক, বুঝতে গেলে তুলনা জরুরি। তুল্যমূল্য বিচার করুন প্রতে্যকটি পলিসি। বিচার্য হবে কী কভারেজ দেওয়া হচ্ছে, ‘ডিডাক্টেবল’স, ক্লেম প্রসেস, অ্যাসিস্ট্যান্স সার্ভিসেস এবং প্রিমিয়াম। আপনার বিদেশ ট্রিপে ঠিক যা যা করার পরিকল্পনা আছে আপনার, সেগুলি পলিসিটি কভার করছে কি না, দেখে নিন। তাছাড়া সংস্থার ব্র্যান্ড পরিচিতির দিকেও নজর রাখা দরকার।
# সর্বাঙ্গীণ কভারেজ : ট্রাভেল ইনসিওরেন্সের প্রথম এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা হল, অজানা এবং অনিশ্চিত ঘটনার মোকাবিলায় এটি সর্বাঙ্গীণ কভারেজ দেয়। এই তালিকায় রয়েছে মেডিক্যাল খরচ বহন, ‘এমার্জেন্সি মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন’, ট্রিপ বাতিল বা মাঝে কোনও বিপত্তি ঘটলে তা সামাল দেওয়া, মালপত্র বা নিজের কোনও জিনিস চুরি যাওয়া প্রভৃতি। ভাল করে পলিসির বৃত্তান্ত পড়ে নেবেন, দেখে নেবেন আপনার যে বিষয়গুলি দরকার, সেগুলি সব ‘কভার’ করা হয়েছে কি না।
# বর্জনীয়তে নজর : প্রতিটি ট্রাভেল ইনসিওরেন্সে কিছু না কিছু পরিষেবা বাদ দেওয়া হয়। তাই যেটা বেছে নিয়েছেন, তার বাদের তালিকা ভাল করে দেখে নিন। বর্জনীয় তালিকার কোনওটি আপনার চাহিদা ছিল না তো? বহু ইনসিওরেন্সেই ‘প্রি এক্সিসটিং মেডিক্যাল এক্সপেন্সেস’ কভার করা হয় না, আবার কিছু কিছুতে হয়। তাই দেখে নেওয়া জরুরু।
[আরও পড়ুন: অভিভাবক হিসাবে সেরা উপহার, সুফল লাভ করুন ‘সুকন্যা সমৃদ্ধি’ স্কিমে]
# ‘এক্সট্রা’ কী? : বেশিরভাগ ইনসিওরেন্সে কিছু ‘এক্সট্রা’ পরিষেবা থাকে, যা জরুরি সময়ে কাজে লাগে। যেমন মালপত্র বা পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়া বা শেষ মুহূর্তে বিমান টিকিট জোগাড় করা বা হোটেল পাওয়া প্রভৃতি। আপনি যেটা নিচ্ছেন, তাতে কী কী সুবিধা থাকছে, চোখ অবশ্যই বুলিয়ে নেবেন।
# প্রিমিয়াম বিবেচনা : প্রিমিয়াম হল সেই অর্থ, যা আপনি ইনসিওরেন্স পলিসির জন্য পে করে থাকেন। ট্রাভেল ইনসিওরেন্স যখন কিনবেন, প্রিমিয়ামের দিকে অবশ্যই চোখ রাখবেন। তা আপনার বাজেটের মধ্যে ফিট হচ্ছে কি না, অতিরিক্ত খরচ যেন না হয়ে যায়-সে দিকে দেখা খুব দরকার।
# ক্লেম সেটলমেন্ট : ট্রাভেল ইনসিওরেন্স চয়ন করতে গেলে ক্লেম সেটলমেন্টের দিকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। যে সংস্থার বিমা নিচ্ছেন, তার ক্লেম সেটলমেন্ট প্রসেস যাতে সহজ-সরল হয়, তা দেখতে হবে। অবাঞ্ছিত অভিজ্ঞতা সামলানোর জন্য ইনসিওরেন্স প্রোভাইডারের কাছে ক্লেম ফাইল করতে হবে। ওরাই বিষয়টা দেখে নেবেন।
# শান্তি, স্থিতিশীলতা : বাড়ি থেকে দূরে আছেন বিদেশ-বিঁভুইয়ে। ঘুরে দেখছেন নতুন নতুন স্থান। সেই সময়টুকু যাতে শান্তিতে কাটে, কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তা নিশ্চিত করে, এমন ইনসিওরেন্স বেছে নিতে হবে।
কোভিড অতিমারীর সময় ট্রাভেল ইনসিওরেন্স ইন্ডাস্ট্রি আমূল পরিবর্তনের মধে্য দিয়ে গিয়েছে। সেই সময় ইনসিওরেন্স কভারেজ তালিকায়, বিদেশে ঘোরার সময় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খরচেরও যোগান ছিল। তাই মনে রাখবেন, আপনি যে ইনসিওরেন্সই নির্বাচন করবেন, শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক খতিয়ে অবশ্যই দেখবেন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্যও নিন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।