মার্কেটে নবাগত? লগ্নির জন্য চাই লোন? ঘাবড়াবেন না। ভুল পথে যাতে পা না পড়ে, সামান্য বোকামিতে যাতে যাবতীয় উদ্যোগ নষ্ট না হয়ে যায়, তার জন্য রইল তিনটি বিশেষ ধরনের লোনের সন্ধান। যে কোনও পদক্ষেপ করার আগে খুঁটিয়ে পড়ে নিন জরুরি এই লেখা। সংকলনে নীলাঞ্জন দে
# বাজাজ ফিনান্স হাইব্রিড ফ্লেক্সি লোন
# ভোল্ট মানি লোন এগেন্সস্ট মিউচুয়াল ফান্ড
# আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক লোন এগেইনস্ট প্রপার্টি
বাজারে পা রাখার পর লোন নেওয়ার সুযোগ আজ কম নেই। নতুন-আসা বিনিয়োগকারীও আজকাল লোন নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটে নিজের লগ্নি বাড়াতে চান, আরও অ্যালোকেশন যাতে করতে পারেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান। আজ তিন ধরনের লোনের কথা বিশেষভাবে বলব। সঙ্গে অবশ্যই রাখব একটি ডিসক্লেমার যে-আমাদের এই ঝাড়াই-বাছাই সম্পূর্ণ পক্ষপাত-হীন। আর বিশদে জানতে চাইলে জানাব, লগ্নিকারী যেন অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নেন। এই তিনটি লোন নিয়ে আপনি বাজারে বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে পারেন।
বাজাজ ফিনান্স হাইব্রিড ফ্লেক্সি লোন
বাজাজ ফিনসার্ভ বিভিন্ন ফিনান্সিয়াল প্রোডাক্ট এবং পরিষেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের দেন। নিজেদের জরুরি তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক পার্সোনাল লোন তাঁরা পেতে পারেন বলে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন। সাধারণভাবে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়, সুদের হার ১২.৯৯% থেকে (বার্ষিক হার) শুরু। এছাড়াও প্রসেসিং ফি (GST থাকবে) চার্জ করা হয় বলে জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন লেন্ডিং পার্টনার আছে এই ক্ষেত্রে। ছোট এই তালিকায় তাদের কয়েকটির নাম দেওয়া হল।
বলা বাহুল্য, এগুলির মধ্যে একটি বড় অংশ এ যুগের ফিনটেক কোম্পানি, অর্থাৎ আধুনিক টেকনোলজির প্রয়োগ এখানে সহজেই হয়। বাজাজের মতে, যে কোনও ভারতীয় নাগরিক, ২৫-৫৮ বছর বয়সের মধ্যে এইভাবে লোনের জন্য দরখাস্ত করতে পারেন। সংস্থা জানাচ্ছেন যে, রিপেমেন্ট পিরিয়ড যথেষ্ট ফ্লেক্সিবল হতে পারে, ১২ মাসে থেকে শুরু করে ৬০ মাস হওয়াও সম্ভব। এই প্রসঙ্গে সঙ্গের চার্টে চোখ রাখতে পারেন। একটি উদাহরণ হিসাবে দেখুন।
এই উদাহরণে, গ্রাহকের জন্য EMI হবে ২,৩২৬ টাকা।
ভোল্ট মানি লোন এগেন্সস্ট মিউচুয়াল ফান্ড
মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ব্যবহার করে লোন নেওয়ার কথা অনেকেই জানতে চান। তাঁদের জন্য ভোল্টের পরিষেবার কথা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হতে পারে। চটজলদি লোন পাওয়া সম্ভব হবে, কারণ সংস্থার মতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ‘ক্রেডিট লাইন’ খোলা যাবে। গ্রাহকের মিউচুয়াল ফান্ডের ভ্যালু কষে নিয়ে এই লোনের ব্যবস্থা করা সোজা বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।
কয়েকটি জরুরি পয়েন্ট
* সুদের হার : ৯.৯৫% থেকে শুরু।
* এখানেও একগুচ্ছ ব্যাংক এবং ফিনান্স কোম্পানির পার্টনার হিসাবে অাছে।
* ইচ্ছামতো উইথড্র করা যাবে, রিপেমেন্টও করা যাবে সরল পদ্ধতি মেনে।
* মাসে শুধু ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী পেমেন্ট করলেই চলবে।
* সিবিল স্কোরের কোনও নূ্যনতম শর্ত নেই, এছাড়াও কোনও বিশেষ প্রফেশন সংক্রান্ত শর্ত নেই।
সংক্ষেপে বলতে গেলে গ্রাহক তাঁর নিজের ইউনিটগুলি ‘কোল্যাটেরাল’ হিসাবে গণ্য করতে পারেন ভোল্টের ক্ষেত্রে। প্রথমে লিয়েন চিহ্নিত করা হবে এবং তারপরই দ্রুত লোনের ব্যবস্থা করে দেবে সংস্থা এবং এই পর্যায়ে গ্রাহককে নিজের অধিকার (ইনভেস্টর হিসাবে) থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। ‘ওনারশিপ’ ছাড়ারও প্রশ্ন নেই। সোজা কথায়, ব্যাঙ্কের পরিভাষা থেকে ধার করে বলা যায়, ফান্ডের ইউনিট ব্যবহার করে ‘ওভারড্রাফ্ট’ পাবেন গ্রাহক। সুদ দিতে হবে শুধু ব্যবহৃত টাকার (Utilised amount) উপর।
প্রয়োজনীয় কয়েকটি কথা :
* (ক) পোর্টফোলিওর ভ্যালু পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি হওয়া দরকার।
* (খ) জয়েন্ট হোল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও এই পরিষেবা পাওয়া যাবে।
* (গ) এক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে ক্রেডিট লাইন।
* (ঘ) গ্রাহক যে কোন দিন বেছে নিতে পারেন মাসিক সুদ দেওয়ার জন্য।
* (ঙ) লিয়েন রিমুভাল চাইতে পারবেন গ্রাহক, যদি পেন্ডিং লোন আর না থাকে তাঁর।
[আরও পড়ুন: টু-হুইলার ইনসিওরেন্স: কী কী তথ্য না জানলেই নয়]
আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক লোন এগেইনস্ট প্রপার্ট
যাঁরা নিজেদের সম্পত্তি (রিয়েল এস্টেট) ব্যবহার করে লোন নেওয়ার কথা ভাবেন, তারা LAP অর্থাৎ Loan Against Property-র বিষয় চিন্তা করতে পারেন। আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাংকের মতে ৮০% পর্যন্ত (মানে প্রপার্টি ভ্যালুর) লোন পাওয়া সম্ভব। এবং দীর্ঘমেয়াদি লোনও পেতে পারেন গ্রাহক। এক্সটেন্ডেড লোন টেন্যুর ২৫ বছর পর্যন্তও পাওয়া যাবে যদি কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে পারেন তিনি।
রেসিডেনশিয়াল, কমার্শিয়াল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল -সবই ব্যবহৃত হতে পারে এই ক্ষেত্রে বলে জানা যাচ্ছে। কীভাবে গ্রাহক তাঁর লোনের টাকার সদ্ব্যবহার করবেন, তা তিনিই জানবেন। তবে ল্যাপ নিয়ে অন্য প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহক, এমন অনেক উদাহরণ আছে।
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রয়োজনীয় কথা। সঙ্গের তালিকায় দেখুন।
* দশ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যেতে পারে।
* স্যালারিড ব্যক্তি বা সেল্ফ-এমপ্লয়েড, যে কেউ শর্তাধীনভাবে এই সুবিধা পাবেন।
* রেন্টাল ইনকাম এক্ষেত্রে সুবিধাজনক বলে গণ্য।
* লোন ট্রান্সফারের সুযোগ নিতে পারেন গ্রাহক তাঁর যদি অন্য কোনও সংস্থায় লোন নেওয়া থাকে।
লোন ক্যালকুলেটর
এখানে আমরা বিভিন্ন ‘সিনারিও’ অনুমান করে, পাঠকদের সম্ভাব্য পরিস্থিতিগুলি জানাচ্ছি। লোনের পরিমাণ প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে আমরা ২৫ লক্ষ টাকা রেখেছি। বাড়ানো-কমানো হয়েছে ইন্টারেস্ট রেটের হার এবং টেন্যুর। উদ্দেশ্য, গ্রাহকদের নানা সম্ভাবনার হদিশ দেওয়া।
তাহলে ল্যাপের গ্রাহক কী খুঁজবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মনে করিয়ে দিই, লোনের টেন্যুর অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদের জন্য হয়। সেই জন্য আকর্ষণীয় হারে লোন নিলে তাঁর সুবিধা। শর্ট টার্মের জন্য লোন এবং সুদের হারও চড়া, এমন ক্ষেত্রে ইএমঅাইয়ের পরিমাণ বেশি হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। অনেক কিছুই অবশ্য নির্ভর করবে গ্রাহকের নিজের প্রয়োজনের উপর। তাঁর রিস্ক নেওয়ার ক্ষমতাও এখানে যাচাই করে নিতে হবে প্রথমেই। ইএমআই অনেকেই সংসারের মান্থলি বাজেটের অন্তর্গত করে নেন, যেখানে পরিকল্পিত উপায়ে সেভিংস করতে হয়। সব লোন সংস্থাই নিজস্ব শর্ত রাখে। যেমন মিনিমাম পিরিয়ড কত হবে, ম্যাক্সিমাম টেনু্যর কত হতে পারে, ব্যালেন্স ট্রান্সফার করতে গেলে কি করণীয় ইত্যাদি সবই জেনে নেওয়া দরকার। অাইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্কের মতে এখানে বিমার ভূমিকা থাকাও বাঞ্ছনীয়। প্রপার্টি ইনসিওরেন্সের খুঁটিনাটি গোড়াতেই জেনে রাখুন।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)