নানা ধরনের পলিসিও পাওয়া যাচ্ছে কারণ বিমা সংস্থাগুলি নিজেদের পরিকল্পনার মধ্যে শপ ইনসিওরেন্সকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বুঝতেই পারছেন, ‘শপ ওনার’ অথবা দোকানঘরের মালিকদের সুবিধার্থে এই বিমার সৃষ্টি, যাতে তাঁরা সুরক্ষিত থাকেন, যাতে নিজেদের এবং তাঁদের কর্মচারীদের স্বার্থে কোনও আঘাত না আসে। কলমে অনিমেষ সেন।
লাইফ এবং হেলথ নিয়ে তো আমি আপনাদের জন্য আগে লিখেছি। পাঠকদের মধ্যে যাঁরা কমার্শিয়াল এস্টাব্লিশমেন্ট পরিচালনা করেন, তাঁদের উদ্দেশে আজ আমার এক লেখা একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে, যার নাম ‘শপ ইনসিওরেন্স’। আজকের দিনে যে দোকানপাট ইত্যাদির গুরুত্ব অসীম, তা দু’বার বলতে হয় না। আর সেই সুবাদে ‘শপ ইনসিওরেন্স’-এর সঙ্গে পরিচয় থাকাও উচিত বলে আমি মনে করি। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের দেশে এই নিয়ে অনেক নতুন গ্রাহক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, বিমার প্রকল্পে শামিল হয়ে নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছেন। নানা ধরনের পলিসিও পাওয়া যাচ্ছে কারণ বিমা সংস্থাগুলি নিজেদের পরিকল্পনার মধ্যে শপ ইনসিওরেন্সকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
বুঝতেই পারছেন, ‘শপ ওনার’ অথবা দোকানঘরের মালিকদের সুবিধার্থে এই বিমার সৃষ্টি, যাতে তাঁরা সুরক্ষিত থাকেন, যাতে নিজেদের এবং তাঁদের কর্মচারীদের স্বার্থে কোনও আঘাত না আসে। এ যুগে (যদি বিভিন্ন ঘটনার কথা স্মরণ করেন) আগুন এবং ভাঙচুর (অর্থাৎ Vandalism বলে যাকে সাধারণভাবে চিহ্নিত করি আমরা) ইত্যাদি তো হয়েই চলেছে। যে কোনও দোকানঘরের মালিক এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। খুব সাবধানী মানুষও এই সমস্ত কারণে ক্ষতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, এমনও বহু ক্ষেত্রে দেখেছি আমরা। অনেক সময় অসহায় হয়ে দূরে থাকতে হয়েছে সেই রকম সাবধানী মালিকদেরও। তাহলে, সামান্য খতিয়ে দেখলেই বুঝবেন, কেন ‘শপ ইনসিওরেন্স’ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় এক বিমা প্রকল্পে।
এই প্রসঙ্গে দু’টি জরুরি বিষয় জানিয়ে রাখি।
# ‘আনফোরসিন সারকামস্ট্যানসেস’ অর্থাৎ অবাঞ্ছিত কোনও পরিস্থিতি বা বিপদ, হঠাৎ করে চলে এলে সম্ভাব্য সুরক্ষা।
# স্বাধীনভাবে কার্যকলাপ বিঘ্নিত হলে তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য সুরক্ষা।
আশা করি, এই দু’টি বিষয়ের ব্যাখ্যা আরও প্রাঞ্জলভাবে করতে হবে না। তবে এগুলির ভিত্তিতে যা অবশ্যই বলা দরকার, তা হল ‘কভারেজ’ নিয়ে বিশদ আলোচনা। স্থানাভাবে খুব সংক্ষেপে কয়েকটি কথা উল্লেখ করছি, অবশ্যই নজর রাখুন।
l আগুন এবং সংশ্লিষ্ট বিপদ-শপ এবং তার মধ্যে অবস্থিত জিনিসপত্র।
l ‘ইনবিল্ট কভার’-ভূমিকম্প এবং সন্ত্রাস, এই দুইয়ের ক্ষেত্রে শর্তাধীনভাবে প্রযোজ্য।
l ডাকাতির মতো ঘটনা।
যদি আরও জানতে চান, তাহলে বিভিন্ন বিমা সংস্থার প্রকল্প নিয়ে পড়াশোনা করে নিতে পারেন। সামগ্রিকভাবে, মনে রাখতে হবে যে, শপ বা অনুরূপ সংস্থার মধ্যে বহু ধরনের জিনিসপত্র থাকতে পারে। সাধারণত তাই-ই দেখতে পাই আমরা। যেগুলি সুরক্ষিত না হলেই নয়, সেই তালিকায় পাবেন কাচের দরজা-জানলা বা পার্টিশন, নিওন সাইন, গ্লো সাইন, পার্সোনাল কম্পিউটার এবং বিভিন্ন ধরনের মেশিনারি। এছাড়াও থাকতে পারে আনুসঙ্গিক অনেক কিছু। কর্মচারীদের নিজস্ব জিনিসপত্রের কথাও বলে রাখা উচিত এই প্রসঙ্গে।
[আরও পড়ুন: নামে ছোট, কাজে নয়, মাইক্রো ক্যাপে বাড়ছে অ্যালোকেশন]
এই যে শপের কথা বলছি, মানে বিল্ডিং এবং কনটেন্টস-এর অর্থে, তার আওতায় নানা শ্রেণীর সামগ্রী বা কাঠামো আসতে পারে। আসবাবপত্র, ফিটিংস, স্টক-ইন-ট্রেড ইত্যাদির কথাও ভুলবেন না। আর হ্যাঁ, শুধু ভাঙচুর কেন! আগুনও এক বিরাট বড় বিপদের কারণ হতে পারে। প্রপার্টি অথবা স্টকের ক্ষতি হলে গ্রাহকের প্রবল অসুবিধা হয়। আর টাকা পয়সাও শর্তাধীনভাবে কভারেজের মধ্যে আসতে পারে। মানি-ইন-ট্রানসিট (যেমন ধরুন, দোকান থেকে ব্যাঙ্কে যাওয়ার ব্যবস্থা) এবং মানি-ইন-সেফ, এই দুই দরকারি বিষয়ও এখানে উল্লেখ্য।
আরও একটি ব্যাপারে দোকানঘরের মালিক এবং কর্মচারীরা সতর্ক থাকেন। নানা শ্রেণির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে কমার্শিয়াল এস্টাব্লিশমেন্টে। সেগুলির খারাপ হয়ে যাওয়া খুব দুর্ভাগ্যজনক। ব্রেকডাউন হলে পরিষেবা দিতে অসুবিধা হবেই, আর সেই প্রসঙ্গেও বিমা খুব জরুরি।
পরিশেষে বলি, কোন শর্ত প্রযোজ্য হতে পারে বিমার ক্ষেত্রে আর কোনগুলি নয়, তা স্পষ্টভাবে জেনে নিন। বিমার প্রকল্পের খুঁটিনাটি বুঝে নিয়ে এগিয়ে গেলে মালিকেরই সুবিধা। গ্রাহক হিসাবে তাঁর কী করণীয়, তা গোড়াতেই জেনে নিলে পরে অসুবিধা এড়িয়ে যেতে পারবেন। এছাড়াও আমি বিশেষভাবে গ্রাহকদের অনুরোধ করব, পার্সোন্যাল অ্যাক্সিডেন্ট এবং পাবলিক লায়াবিলিটি-এই দুই দরকারি বিষয় নিয়ে বিমা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে নিন।
(লেখক বিমা বিশেষজ্ঞ)
onimeshsen@gmail.com