শেয়ার বাজারে নানা ঘটনার জেরে স্টকের দাম উপর-নিচ হয়েই চলেছে। সাম্প্রতিক ট্রেন্ডের দিকে নজর দিলেন মহেশ পাটিল, চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার, আদিত্য বিড়লা সান লাইফ মিউচুয়াল ফান্ড। ‘সঞ্চয়’-এর আমন্ত্রণে তাঁর এই বিশেষ লেখা।
আপনাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাই গত মাসে, যখন ইকুইটি মার্কেটে নতুনভাবে অাশা জাগিয়েছিল একাধিক ঘটনা। অন্য অনেক ইমার্জিং মার্কেটের তুলনায়, ভারতীয় স্টক মার্কেট ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল। মার্চ মাস পর্যন্ত যে প্রায় টানা ‘অান্ডার-পারফরম্যান্স’ দেখেছিলাম অামরা, তার তুলনায় অন্য রকম ট্রেন্ডের আভাস পেয়েছিলাম।
কেন, কীসের ভরসায় এমন আশান্বিত সবাই? ভারতে কোর ইনফ্লেশন কমের দিকে এসেছে, সঙ্গে মার্কিন বাজারে স্লো-ডাউনের আশঙ্কাও স্তিমিত হয়েছে। আর রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া যে ইন্টারেস্ট রেট এখনই বাড়াবে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। সুদের হার অবশ্য এই মুহূর্তে কমবেও না, তাও স্পষ্ট। মোটের উপর গত দুই মাসের কথা যদি ধরেন, তাহলে দেখা যাবে কিছু ইতিবাচক ট্রেন্ড চলে এসেছে মার্কেটে। বর্হিবিশ্বে, গ্লোবাল ইস্যুগুলি এখন আর মাথা চাড়া দেবে না মনে হয়। বরং, ভারতীয় অর্থনীতিতে যে কিছুটা ‘রিকোভারি’ আসতে পারে, এমনই আশা করছে বাজারের একটি অংশ।
অন্যদিকে, যদি জিডিপি আলাদাভাবে দেখেন, তাহলে অর্থবর্ষ ২০২৩-এর শেষ কোয়ার্টারে (ইয়ার-অন-ইয়ার ভিত্তিতে) ‘গ্রোথ’ মোটামুটি সন্তোষজনক বলা চলে। কেবল কোয়ার্টারের ছবিটি যদি পরীক্ষা করেন, তাহলেও তা বোঝা যাবে। হালে নির্মাণ সেক্টরে ‘গ্রোথ’ দেখেছি অামরা, নেট এক্সপোর্টের পরিসংখ্যান ভালই বলা যায় আর গ্রস ক্যাপিটাল ফর্মেশনও ইতিবাচক। তবে, মানতেই হবে, এখনও প্রাইভেট কনসাম্পশন তেমন আশানুরূপ হয়নি। তার জন্য হয়তো কোনও বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হতে পারে কর্তৃপক্ষকে। যখন প্রাইভেট কনসাম্পশন জোরালো হয় না, তখন অার্থিক বৃদ্ধি যথেষ্ট হওয়া সম্ভব নয়। তার কারণ ‘কনজিউমার স্পেন্ডিং’ না হলে চাহিদা বাড়ে না এবং প্রোডাকশানও যথাযথভাবে হয় না।
এর উল্টোদিকে কিন্তু আমি নির্দিষ্টভাবে তিনটি ইন্ডিকেটরের কথা বলতে চাই।
#পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স
#ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজেশন
#নন-ফুড ক্রেডিট
এই তিন মাপকাঠির ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে যে, আগামিদিনে আমাদের গ্রোথের সম্ভাবনা আছে। আর এখন তো রিটেল ইনফ্লেশনও কমেছে। ইন্টারেস্ট রেটে যদি স্থিতাবস্থা থাকে, তাহলে বাজারের জন্য তা বেশ প্রাসঙ্গিক। রেট-নির্ভর সেক্টর, যেমন ধরুন নন-ব্যাংকিং ফিনান্স কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট, বা অটোমোবাইল-এগুলি উপকৃত হতে পারে।
[আরও পড়ুন: কোথায় করবেন লগ্নি, কোন পথে হবে লক্ষ্মীলাভ, রইল হদিশ]
অন্য প্রসঙ্গে চলে যাই। ডোমেস্টিক এবং এক্সপোর্ট-ভিত্তিক সেক্টরগুলির ফারাক দেখুন। এই ফারাক বাড়ছে, এবং অর্থবর্ষ ২০২৩-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ কোয়ার্টারে তা বেশ প্রকট। সফটওয়্যার, ফার্মা বা কেমিক্যালস দেখুন-এই সব ক্ষেত্রে ‘আর্নিংস’ কমেছে। আবার অন্য কয়েকটি ডোমেস্টিক সেক্টরে বেশ জোরালো ‘রেভিনিউ গ্রোথ’ দেখা গেছে। এ সব ক্ষেত্রে অর্ডার বুকের পরিস্থিতি বেশ তাগড়া, ‘ক্যাশ ইনফ্লো’র সম্ভাবনাও কম নয়।
মার্কেটে যদি গতি আসে (মোমেন্টাম), তাহলে তো ভালই হবে। ইনভেস্টররা অংশ নিতে পারবেন নতুন উদ্যোগে, তবে তাঁদের যথেষ্ট অনুশাসনের মধ্যে থাকতে হবে। অ্যাসেট অ্যালোকেশন যেন যথাযথ হয়, তাহলেই দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ধারাবাহিকভাবে রিটার্ন পাওয়া যাবে।
আমার ধারণা স্মল এবং মিডক্যাপ স্টকের একাংশের উপর আগামিদিনে নজর রাখবেন ইনভেস্টররা। খেয়াল রাখুন ইনভেস্টমেন্টের স্ট্র্যাটেজির দিকে, যার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার রিটার্ন। তাই অ্যালোকেশনের কৌশল যেন ঠিকঠাক থাকে।