কোনও বিশেষ ঘটনা যদি ঘটে বা প্রেক্ষিত যদি বিশেষ হয়, সেক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমী শর্তাবলিও পূরণ করতে হয় বইকি! যেমন কোনও নির্দিষ্ট সেক্টরে যদি উপর্যুপরি সুযোগ আসে বা কোনও সংস্থা বাজারে নতুন কোনও পণ্য ছাড়ে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি মেপে পদক্ষেপ করাই বাঞ্ছনীয়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ রমাকান্ত মহাওয়াড়।
ইদানীং কর্পোরেট সেক্টরে কান পাতলেই জানতে পারবেন বিভিন্ন ‘স্পেশাল সিচুয়েশন’-এর খবর। কখনও মার্জার অথবা কখনও নতুন প্রযুক্তি, কিংবা ইক্যুইটির রিস্ট্রাকচারিং–সব সময়ই কিছু না কিছু দেখছি হয়েই চলেছে। খুব সক্রিয়ভাবেই তা হচ্ছে, এও বুঝতে পারছি। বিনিয়োগকারীদের জন্য তা এক অর্থে সুখবর – কারণ এইভাবেই পাওয়া যেতে পারে প্রচুর লগ্নির সুযোগ। এবং কর্মক্ষেত্রে তা হচ্ছেও। সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম থেকে তা সকলের কাছেই স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। এই পটভূমিকায় উঠে আসে একটি বিশেষ শ্রেণির বিনিয়োগ কৌশল। আমি ‘স্পেশাল সিচুয়েশনস’ বা ‘স্পেশাল অপরচুনিটিজ’-এর কথা বলছি।
১. বিশেষ কোনও ঘটনা ঘটলে তা কৌশলী লগ্নিকারীর কাছে অপরচুনিটি বা সুযোগ হিসাবে ধরা দেয়। সর্বদাই যে তা হয়, তা কিন্তু নয়। বিশেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেন অনেকেই, তবে অনুঘটক হিসাবে কাজ করে নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ।
২. মনে করুন এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে বড় মাপের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। হয়তো কোনও নতুন পণ্য বাজারে ছেড়েছেন কর্তৃপক্ষ। হয়তো বৃহৎ সংস্থা টেকওভার করতে চাইছে তুলনায় ছোট কোম্পানিকে। হয়তো ক্যাপিটালে বিরাট অদলবদল অন্য কোনও কারণে ঘটছে।
৩. কারণ যাই হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার স্টকের দামে পরিবর্তনও হতে পারে। সেই সম্ভাবনা তো সুযোগেরই নামান্তর বলে আমি মনে করি।
৪. হয়তো বিশেষ কোনও সেক্টরে উপর্যুপরি সুযোগ চলে আসে, এমনও দেখা যায়। গত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে এমন পরিবর্তন এসেছে সিমেন্ট, ফার্মা এবং টেকনোলজি ক্ষেত্রে। শুধু তিনটি মাত্র উল্লেখ করলাম, উদাহরণ হিসাবে দেখবেন।
৫. এবার মনে করুন কোনও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি একটি বিশেষ ফান্ড গঠন করল এমন সুযোগের সদ্বব্যবহার করার জন্য। ছোট, সাধারণ ইনভেস্টররা সেখানে লগ্নি করলে উপকৃত হবেনই। পেশাদার বিনিয়োগকারীর পরিচালিত ফান্ডে এমন হতেই পারে। সিপ করে, সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে তহবিল গঠন করতে পারেন সাধারণ লগ্নিকারীরা। আমি তেমনই পরামর্শ দেব তাঁদের। তবে হ্যাঁ, সব ইক্যুইটি ফান্ডেই রিস্ক থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হবে না, তা খেয়াল রাখতে হবে। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি দরকারি পয়েন্ট দিলাম, পড়ে নেবেন।
৬. রিসার্চ এবং তথ্যসমৃদ্ধ কৌশল, দুই-ই লাগে এই সব ক্ষেত্রে। পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার তা ভালো করে করবেন, এমন আশা করাই যেতে পারে। সেই জন্য সঠিক ফান্ডটি বেছে নিতে হবে। উপদেষ্টারা এই বিষয়ে অবশ্যই সাহায্য করতে পারবেন বলে আমি মনে করি।
কেন চাইবেন সাধারণ মানুষ এমন ফান্ড?
[আরও পড়ুন: বরাদ্দ বৃদ্ধি করুন ব্যাঙ্কিং বা ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসে, জেনে নিন লগ্নির খুঁটিনাটি]
উত্তর সহজেই অনুমেয়–রিটার্ন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা। সাধারণভাবে দেখলে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে তো বড় মাপের প্রফিট করেনই শেয়ারহোল্ডাররা। যেমন ধরুন, কোনও সংস্থা অন্য একটিকে কিনে নিচ্ছে, অথবা কোনও সংস্থা নিজের একটি অংশকে আলাদা করে (‘স্পিন অফ’) নতুন রূপ দিচ্ছে। এতে কী হতে পারে জানেন? ‘ভ্যালু আনলক’ হওয়া কি খুব অস্বাভাবিক? একেবারেই নয়। এভাবেই স্টকে লগ্নিকারীরা নিজেদের প্রফিট বাড়ান। ইতিহাস ঘাঁটলে তাই-ই দেখতে পারবেন। বহুক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পুরো ইন্ডাস্ট্রির চরিত্রই বদলে গেছে কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার জন্য। হয়তো কোনও সহায়ক নীতি ঘোষণা করেছেন দেশের সরকার। প্রচুর সুযোগ আসতে পারে সেই নীতির জন্য, এমনই বোঝা যাচ্ছে। তাই চটজলদি দামও বাড়তে শুরু হবে, এ-ও খুব স্বাভাবিক। পেশাদার ম্যানেজার এমন সুযোগই খুঁজে নেবেন।
ইতিমধ্যে দেখতে পারছি কয়কটি নতুন ফান্ড এমন প্রকল্প নিয়ে বাজারে পা রেখেছেন। উদাহরণ হিসাবে স্যামকোর কথা বলা যেতে পারে। হালে কোটাকও এমন ফান্ড নিয়ে এসেছে। আরও আগে আসা ফান্ডও আছে এই তালিকায়। আমার পরামর্শ এই প্রসঙ্গে, সংক্ষিপ্ত আকারে জানাচ্ছি :
১. স্পেশাল সিচুয়েশনস/অপরচুনিটিজ ফান্ডকে সঙ্গে রাখুন, নিজের মূল লগ্নি করবেন না। স্বল্প পরিমাণে হলেও নিজের সেভিংসের একটি অংশ এখানে রাখুন।
২. এককালীন লগ্নি করে ছোট পরিমাণে সিপ করা যেতে পারে। তহবিল বড় হবে যদি ধারাবাহিকভাবে তা করে যান।
৩. পোর্টফোলিও কেমনভাবে গঠিত হয়েছে, খোঁজ করুন। এইসব ফান্ডও কিন্তু ডাইভারসিফায়েড ইক্যুইটি শ্রেণির। সেই লক্ষ্য থেকে যেন বিচ্যুত না হয়ে যেতে হয়, মনে রাখবেন।
৪. এক্সপেন্স রেশিও পরখ করুন। খুব বেশি হলে আপনার পক্ষে তা ভালো হবে না, জানেনই তো। পারফরম্যান্স আগে কী হয়েছে তা যেন আপনার পক্ষে একমাত্র নির্ধারক না হয়। গতকাল যা রিটার্ন দিয়েছে ফান্ড, তা আগামিকাল নাও পেতে পারেন।