পিচে ধরে খেলতে সকলে পারেন না। এই গুণ যাঁদের থাকে, ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হিসাবেই কাজে আসে। বিষয়টি খাটে ডিভিডেন্ড ইল্ডের ক্ষেত্রেও। যদি চান, ভাল কোম্পানির শেয়ার তাড়াতাড়ি বিক্রি না করে, ভ্যালুয়েশন বৃদ্ধি দেখে এগোতে, তাহলে ডিভিডেন্ড ইল্ড অবশ্যই বেছে নিন। চুলচেরা বিশ্লেষণে নীলাঞ্জন দে
স্টক হোল্ড করেন কিন্তু ভাল কোম্পানির শেয়ার চট করে বিক্রি করতে চান না? বরং চান ভ্যালুয়েশন বাড়ুক, পোর্টফোলিওর সমৃদ্ধি হতে থাক। তখন আপনার সহায় হতে পারে ডিভিডেন্ড ইনকাম, অবশ্য যদি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি মোটা রকম ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে থাকে তবেই। ডিভিডেন্ড প্রফিটেরই এক অংশ, যেটি কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান। ‘ক্লাসিকাল’ ভাষায়, Dividend is an appropriation of profit। এহেন ডিভিডেন্ড পেলে শেয়ারহোল্ডারদের সামনে একটি মোক্ষম প্রশ্ন চলে আসে – ‘আমার ডিভিডেন্ড ইল্ড কি যথেষ্ট ভাল?’
ডিভিডেন্ড ইল্ড কী? যদি সাদামাটা ফর্মুলায় ফেলেন, তাহলে শেয়ার-প্রতি ডিভিডেন্ড যদি কারেন্ট মার্কেট প্রাইস (শেয়ারের দাম) দিয়ে ভাগ করেন, একটি সংখ্যা পাবেন। তা দেখলে বোঝা যাবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি কেমনভাবে শেয়ারহোল্ডারদের পুরস্কৃত করছে। শেয়ারের চালু দামের ভিত্তিতে এই সংখ্যাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। যে ইনভেস্টররা বিনিয়োগ করার পর থেকে যেতে চান, এবং বিক্রি করে মুনাফা করতে তখনই চান না, তাঁদের জন্য ডিভিডেন্ড ইল্ড একটি জরুরি মাপকাঠি। অতীতে মোটা ডিভিডেন্ড অনেক কোম্পানিই দিয়েছে। কান পাতলে শোনা যাবে কেমন ইল্ড দিত পুরনো দিনের অয়েল কোম্পানি বা কনজিউমার পণ্য সংস্থা। এ যুগের ইনফোটেক বা ফার্মা স্টকের ক্ষেত্রেও কথাটি বেশ যুতসই হবে। ভাল ডিভিডেন্ড ইল্ডের খোঁজ রাখেন, এমন বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কম নয়। অবশ্য ইদানীং মার্কেটের মন অনেকটাই দ্রুত প্রফিট তথা লাভের দিকে ধাবমান, ডিভিডেন্ড নিয়ে কৌতুহল আজও বহাল আছে পূর্ণ মাত্রায়।
[আরও পড়ুন: আর্থিক লক্ষ্যপূরণে পরিশ্রমের বিকল্প নেই, শিখে নিন লগ্নির সহজপাঠ]
যেমন Vedant Ltd। একটি উচ্চ-হারে ডিভিডেন্ড দিয়েছে, এমন কোম্পানির কথা বলা যাক। সম্পূর্ণ পক্ষপাতশূন্য হয়ে বলি বেদান্ত লিমিটেডের কথা। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সেকেন্ড ইন্টারিম ডিভিডেন্ড (Second interim dividend) ঘোষণা করল সংস্থাটি – শেয়ার পিছু ১৯.৫০ টাকা। অর্থবর্ষ ২০২২-২৩-এর জন্য।
এক টাকা হল প্রতি শেয়ারের ফেস ভ্যালু। আর আজ সেই শেয়ারের মূল্য প্রায় ২৭০ টাকা। রেকর্ড ডেট (এক্সচেঞ্জে খোঁজ করলেই জানতে পারবেন) অনুযায়ী ডিভিডেন্ড ইল্ড কেমন হচ্ছে সেই অঙ্কটি করে নিতে পারেন। সারা বছরের ডিভিডেন্ড কত তা দেখে নিন।
এ তো হল গোড়ার কথা। জরুরি প্রশ্নটি এবার উঠবেই- লগ্নিকারীরা কি ডিভিডেন্ড ইল্ডের উপর ভরসা করে অন্য কয়েকটি বিনিয়োগের পদ্ধতি পরিত্যাগ করবেন? না কি তাঁরা এটিকে অন্যতম বিকল্প হিসাবে বেছে নেবেন মাত্র? আরও পরিষ্কার করে জিজ্ঞাসা করলে-ডিভিডেন্ড ইল্ড কি (ধরা যাক) ফিক্সড ডিপোজিটের ইল্ড থেকে ভাল? এই প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা মাথায় রাখুন–
#একগুচ্ছ হাই ডিভিডেন্ড ইল্ড স্টক থাকলে আপনার পোর্টফোলিও শক্তিশালী হবে, সে ব্যাপারে দ্বিমত নেই।
#তবে তার মানে এই নয় যে অন্তত সাময়িকভাবে সেই পোর্টফোলিওর সার্বিক ভ্যালুয়েশন কমবে না।
#মার্কেটে উপর-নিচ হওয়াটা অনিবার্য-কেউ তা আটকাতে পারে না। যদি ইনভেস্টর সেদিকেই প্রধানত মন দেন (স্বাভাবিক ঘটনা) তাহলে তাঁর উদ্দেশ্য ভ্যালুয়েশন-সংক্রান্ত, অন্য কিছু নয়।
#যে কোনও সেক্টর থেকেই উঠে আসতে পারে হাই ডিভিডেন্ড ইল্ড শেয়ার। তবে নির্দিষ্টভাবে বললে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কেমন নীতি মেনে চলেন, তার উপর নির্ভর করবে অনেক কিছুই। অবশ্য, ভাল প্রফিট ব্যতীত ভাল ডিভিডেন্ড হয় না, এও মাথায় রাখতে হবে সবসময়।
ভাল ডিভিডেন্ড পেতে হলে কয়েকটি অনুশাসন মেনে চলুন। মনোপলি সংস্থার খোঁজ রাখুন, বা এমন কোম্পানির স্টক বেছে নিন যেগুলি আগে অগুনতিবার (বা ধারাবাহিকভাবে) ডিভিডেন্ড দিয়ে এসেছে, শেয়ার হোল্ডাররা খুশি হয়েছেন। উদাহরণ দেওয়া যাক – Coal India. আবার বলি, এখানে আমাদের কোনও বিশেষ পক্ষপাত নেই। ইনভেস্টররা চাইলে দেখে নিতে পারেন Coal India-র পারফরম্যান্স এবং কোম্পানিটির বর্তমান পরিস্থিতি। এমনই আরও এক কোম্পানি হল RITES, যা রেলের জন্য কনসালটেন্সি প্রদান করে থাকে। সময় হাতে নিয়ে এমন স্টকের একটি তালিকা প্রস্তুত করে রাখতে পারেন, ভ্যালুয়েশনের গতিপ্রকৃতি বুঝে সুবিধামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অবশ্যই হোল্ডিং নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন, কারণ ডিভিডেন্ড নিয়মিতভাবে পেতে গেলে বিক্রি করা চলবে না। সঙ্গের চার্টে কিছুটা হদিশ পেতে পারেন।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)