মাল্টি অ্যাসেট মানেই যে বহুমুখী লগ্নি কৌশল, তা সর্বজনবিদিত। যাঁদের স্বপ্ন বড়, লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদী, তাঁরা অবশ্যই আস্থা রাখবেন মাল্টি অ্যাসেট কৌশলের উপর। কীভাবে এইভাবে বৃদ্ধি করা যাবে পারফরম্যান্স, বিস্তারিত জানাচ্ছে টিম সঞ্চয়
মাল্টি অ্যাসেট। সোজা কথায়, একের বেশি অ্যাসেটের শ্রেণিভাগে লগ্নি করা যাতে সম্মিলিতভাবে রিটার্ন বাড়ার সুযোগ পাওয়া সম্ভব হয়। অতএব ইক্যুইটি, ফিক্সড ইনকাম, কমোডিটি – সব মিলিয়ে পোর্টফোলিও গঠন করে বড় মাপের লক্ষ্যপূরণ করার প্রয়াস। ইদানীং মাল্টি অ্যাসেট কৌশলের উপর আস্থা রাখছেন অনেকেই, আর বিভিন্ন ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্টও বাজারে উপস্থিত নাকি এই কারণেই। এবারের লেখায় দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে বহুমুখী কৌশলের উপর ভরসা রেখে পারফরম্যান্স বাড়ানোর কথা ভাবা যেতে পারে।
১. ইক্যুইটি: গ্রোথ আসবে (মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদে বিশেষত) তবে রিস্ক অবশ্যই আছে।
২. ফিক্সড ইনকাম: স্টেবিলিটি দেবে, পোর্টফোলিওর ভিত শক্তপোক্ত করে তুলবে।
৩. কমোডিটি : মূলত গোল্ড এবং সিলভার। রিস্ক বহন করবে, গ্রোথও আনবে।
পেশাদারদের মতে কেবলমাত্র একটি অ্যাসেট ক্লাস নিয়ে সম্পদ গঠন করার চেষ্টা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীর প্রয়োজন একত্রে একাধিক অ্যাসেট ক্লাস – যাতে অন্তত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে রিটার্ন যথাসম্ভব উন্নতমানের হতে পারে।
[আরও পড়ুন: QIP বাবদ ৮০০ কোটি উপার্জন জুপিটার ওয়াগনসের, হাসি ফুটল লগ্নিকারীদের মুখে]
এই প্রসঙ্গটি ভালো করে বোঝার জন্য আমাদের হাতের কাছেই বেশ কিছু সংখ্যক উদাহরণ আছে। একেবারেই বিনা পক্ষপাতে বেছে নিচ্ছি একটি মাল্টি অ্যাসেট পোর্টফোলিও – Sundaram Multi Asset Allocation Fund. নতুন ফান্ড এটি, এখন ন্যাভ ১১ টাকার সামান্য উপরে। সংক্ষেপে এটির বৈশিষ্ট্যগুলো পয়েন্ট আকারে দিলাম:
১. বিনিয়োগের কৌশল : অন্তত ৬৫% অ্যাসেট লগ্নি করা হয় ইক্যুইটি মার্কেটে। এর সঙ্গে ১০-২৫% দেওয়া থাকে ডেট এবং গোল্ডে।
২. প্রধানত লার্জ ক্যাপেই লগ্নি করেন সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজার, সাধারণভাবে ৭৫% স্টকই এই গোত্রের, তবে মিড ক্যাপও থাকে সঙ্গে।
৩. ডেটের অংশে মূলত AAA রেটিং প্রাপ্ত বন্ড থাকে, এছাড়াও নানা শ্রেণির গর্ভনমেন্ট সিকুইরিটিজও রাখা হয়।
৪. গোল্ড খুব জরুরি ভূমিকা পালন করে। সুন্দরম কর্তৃপক্ষের মতে সোনা এ ক্ষেত্রে ‘শক অ্যাবর্জভার’ হিসাবে কাজ করে, বিশেষত যখন স্টক মার্কেটে খুব ভোলাটিলিটি থাকে।
এখানে বলা উচিত যে, ইউনিট হোল্ডাররা সবাই ইক্যুইটি ট্যাক্সেশনের সুবিধা পান। তবে রিস্ক যে থাকে (‘হাই’ শ্রেণির, রিস্কোমিটারের নিয়ম অনুযায়ী) তা তো বলাই বাহুল্য। সুন্দরম-এই বিশেষ ফান্ডের ক্ষেত্রে যে বেঞ্চমার্ক ব্যবহৃত হয় তা Nifty 500 Total Return Index (ইক্যুইটির জন্য) এবং Nifty Short Duration Debt Index (ফিক্সড ইনকামের জন্য)। উল্লেখ্য, সাধারণ লগ্নিকারীরা সহজেই এখানে ইউনিট কিনতে পারবেন, নূন্যতম লগ্নির পরিমাণ ১০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও বলে রাখা ভালো যে ৩০% পর্যন্ত ইউনিট যদি কেউ বিক্রি করতে চান (এক বছরের আগে হলেও) তাহলে কোনও এক্সিট লোড দিতে হবে না। এবার আমরা বেছে নিচ্ছি এইচডিএফসি মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড।
অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমাণে হলেও (কেবল ২%) REIT বা রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট পোর্টফোলিওর অন্তর্গত করা ছিল। কর্তৃপক্ষের মতে, মাল্টি অ্যাসেট সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা রাখা উচিত, এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজনে অভিজ্ঞ পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করাই ঠিক হবে। সাধারণভাবে অনেক উপদেষ্টা বলেন, এককালীন টাকা লগ্নি করে নিয়মিতভাবে সিপ করলে উপকার হবে। সিপের মারফৎ ধীরে ধীরে তহবিল গঠন করা যেতে পারে। এবং এরই সাহায্যে নিজের বিনিয়োগের লক্ষ্যপূরণ করতে পারেন ইনভেস্টর।
সতর্কীকরণ
লগ্নির যাবতীয় সিদ্ধান্ত একমাত্র বিনিয়োগকারীর নিজের, দায়িত্বও তাঁর। ‘সংবাদ প্রতিদিন’—এর এতে কোনও ভূমিকা নেই। লগ্নি-জনিত ফলাফল বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্তের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, তাই বাজারের ঝুঁকির ব্যাপারে সব জেনে নিয়েই পদক্ষেপ করবেন।