সুকুমার সরকার, ঢাকা: ৩০শে জানুয়ারি সরস্বতী পুজোর দিনে ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘিরে নানাজন নানা অভিমত দিচ্ছেন। এদিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তারিখ বদলানোর আবেদন হাই কোর্টে খারিজ করে দিয়েছেন। আর তারপরই এই নির্বাচন পিছনোর দাবি করেছেন ঢাকা উত্তরের আওয়ামি লিগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
অন্যদিকে সরস্বতী পুজোর দিন নির্বাচনের তারিখ হওয়ায় হিন্দুদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ পৌরনিগমের আওয়ামি লিগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস। পাশাপাশি বলেছেন. ‘আশাকরি সবাই নির্বাচনে অংশ নেবেন। আমি বিশ্বাস করি, ৩০ জানুয়ারি বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে। আমরা ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম দিন থেকে কাজ আরম্ভ করব এবং উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব।’
[আরও পড়ুন: ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, বাংলাদেশে গ্রেপ্তার বাউল শিল্পী শরিয়ত বরাতি ]
নির্বাচনের তারিখ বদলানোর আবেদন হাই কোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর এবার আপিল বিভাগে আবেদন হয়েছে। আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে এই আবেদন করেন। সেখানে ৩০ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিত চাওয়া হয়েছে। আগামী রবিবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। অশোক কুমার ঘোষের যুক্তি ছিল, EC’র ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ সংবিধানে বর্ণিত প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’। যদিও ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ধরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ পৌরনিগমে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী প্রার্থীরা প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছেন।
[আরও পড়ুন: ধর্ষকদের জন্য ‘হায়দরাবাদ এনকাউন্টার’, বাংলাদেশের সংসদে উঠল দাবি ]
এদিকে আবেদনকারী অশোক ঘোষ বলছেন, সরস্বতী পুজো শুরু হয় মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথি থেকে। তিথি শেষ হওয়ার আগে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যায় না। পঞ্জিকা অনুযায়ী, পঞ্চমী তিথি শুরু হবে ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে। শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টায়। আর নির্বাচন বিধি অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার অন্তত ১৫ দিন পরে নির্বাচন করতে হয়। সে অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারির আগেও ভোট করার সুযোগ রয়েছে বলে যুক্তি দেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র হবে। একারণে দুদিন আগে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ৩০ তারিখ নির্বাচন হলে পুজোটা আমরা কীভাবে করব! বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদও ভোটের তারিখ পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছিল EC’র কাছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী গত কয়েক দিন ধরেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে একই দাবি জানিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মহম্মদ আলমগীর বুধবারও সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোটের জন্য ৩০ জানুয়ারিই উপযুক্ত সময়। এই তারিখ এগিয়ে আনা বা পিছনোর কোনও সুযোগ নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার সময় মিরপুর ১২ নম্বরে আলুবদি ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশে এই প্রসঙ্গে অনুরোধ জানান ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসরাম। আতিকুল বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আমি চাই না, সরস্বতী পুজোর দিন নির্বাচন হোক। পুজোর কথা স্মরণ রেখে নির্বাচন পিছোনো হোক, এই দাবি করছি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, ধর্মপালনে কারও যেন কোনও বিঘ্ন না হয়। আমি চাই, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়টি বিবেচনা করুক।’
The post সরস্বতীর পুজোর দিন ঢাকায় পৌরনিগমের ভোট, প্রতিবাদে সরব হিন্দুরা appeared first on Sangbad Pratidin.