সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্রাবণের ধারায় ভিজছে চরাচর। ছাপোষা মানুষ ছাতার আশ্রয়ে সেই বৃষ্টিকে হার মানাতে চাইছেন। চপলা বারি ধারা ঝিরিঝিরি রবে আকণ্ঠ ভিজিয়ে দিতে গিয়ে যেন ভালবাসার বার্তাই দিচ্ছে। ত্রস্ত গৃহস্থ যখন বৃষ্টি বাঁচিয়ে বাড়ির পথে তখন বইখাতার বাহুল্যকে সরিয়ে জোড়া ঠোঁটে লেখা হচ্ছে প্রেমের জয়গান। ব়্যাবের দাপাদাপি, বুলেটের ক্ষত, বেয়নেটের খোঁচা তুচ্ছ করে জীবন আবার আশায় বাঁচছে। যেখানে ব্যথাতুর হৃদয় খুঁজে নিচ্ছে প্রেমের পরশ। ঘটনাস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। মাসখানেক আগেও ছাত্র আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করতে প্রাতিষ্ঠানিক সরকার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ক্ষমতার দম্ভে রক্তাক্ত হয়েছিল ক্যাম্পাস। আরও অভিযোগ, যেখানে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে মুড়ি-মড়কির মতো খুন হচ্ছে প্রাণ। সেখানে প্রকাশ্য প্রেম তো সোনার পাথরবাটি। বৃষ্টিভেজা বিকেল যদি চুম্বনে ডুবে যায় তাহলে রক্তাক্ত নদী তো শুকিয়ে যাবে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় চুম্বনরত তরুণ-তরুণীর ছবিতে উত্তাল বাংলাদেশের রাজ্য রাজনীতি। কট্টরপন্থী, রক্ষণশীলরাও জমি দখল করতে আসরে নেমে পড়েছে। রণক্ষেত্রের আবহাওয়ায় প্রেমের জন্ম হতে দেখে চিত্রগ্রাহকের শিল্পী মন উদ্বেল হয়ে। ওঠে শ্রাবণে ধারার মাঝেই লেন্সবন্দি হন চুম্বনরত যুগল।
[তালিবান-আইএসের দেশ চায় বিএনপি, তোপ হাসিনার আইনমন্ত্রীর]
তবে ছবি তুলেই বিপদে পড়েছেন তিনি। প্রেমের মুহূর্তকে ইতিবাচক করতে গিয়ে খুইয়েছেন উপার্জনের রাস্তা। সহকর্মীদের তিরস্কার, সম্পাদক মহাশয়ের তাচ্ছিল্যে মর্মাহত বাংলাদেশের তরুণ সম্ভাবনাময় চিত্রগ্রাহক জীবন আহমেদ। বাংলাদেশে নিউজ পোর্টাল ‘পূর্ব-পশ্চিম বিডি’তেই কর্তব্যরত জীবন সেদিন ছবিটি সম্পাদক খুজিস্তা-নুর-ই-নাহারিনকে দেখান। ছবি দেখে তৎক্ষণাৎ বাতিল করে দেন তিনি। ছবি বাতিল হতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন জীবন। তবে তার উত্তর দেননি সম্পাদক। খবর ছড়াতে সময় নেয়নি। অফিসের সহকর্মীরাও বাঁকা চোখে দেখতে থাকে জীবনকে। মর্মাহত জীবন নিজের শিল্পী সত্ত্বার প্রতি দুঃখ অনুভব করেন। যে ছবি আজ উদার মনোভাবাপন্ন কোনও দেশে আদরণীয় হত। সেই ছবিই কিনা তাঁর চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। তবে শিল্পীসত্ত্বা তো স্বাধীনতার পূজারী, তাই পোর্টালে বাতিল হলেও প্রেমের প্রকাশ তো রোখা যায় না। নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ও ফেসবুকে চুম্বনরত যুগলের ছবি পোস্ট করে দেন জীবন আহমেদ। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই পাঁচ হাজার শেয়ার হয়ে যায়। নেটিজেনদের একাংশ ভালবাসার ইমোজি দিয়ে তাঁকে অনুপ্রাণীত করেন। ঠিক একইভাবে বিরোধিতাও লক্ষ্য করা যায়।
অন্যদিকে রক্ষণশীলদের একাংশ ছবিতেই কমেন্ট করে জানিয়ে দেয়, এই ছবি দেখে প্রেমিক প্রেমিকারা আরও বেশি সাহসী হয়ে যাবে। এতদিন লুকিয়েচুরিয়ে যা চলত এই ছবি দেখে তা তারা দিনের আলোতেই শুরু করবে। প্রকাশ্যেই চলবে প্রেম, এমন দিন আর বেশি দূরে নেই। এই বক্তব্যের পরেই নীতি পুলিশের বিরোধিতায় পালটা দেন চিত্রগ্রাহক। তিনি বলেন, চুম্বনরত প্রেমিক-প্রেমিকা ছবি তুলতে যেখানে বাধা দিলেন না, সেখানে নীতি পুলিশগিরি সহ্য করব না। বিকৃত মূল্যবোধ থেকে আর যাই হোক শিল্পীর সৃজনের মূল্যায়ণ হয় না। যুগলকে অঝোর শ্রাবণের মধ্যে চুম্বনরত অবস্থায় দেখে তাঁর মনে হয়েছিল। বারুদের গন্ধ যেখানে এখনও টাটকা সেখানে এই মুহূর্ত তো অমূল্য। তাই লেন্সবন্দি করতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি। তাই সম্পাদক এই ছবিতে অশ্লীলতা দেখলেও তিনি দেখেছেন নিখাদ প্রেম। আদি অকৃত্রিম ভালবাসা। সেই ভালবাসা দেখতে গিয়েই চাকরি গিয়েছে তাঁর। অভিযোগ, একবাক্যে জীবন আহমেদের অফিস আইডি কার্ড ও ল্যাপটপটি কেড়ে নিয়েছেন সম্পাদক। কেন নিলেন তার কোনও কারণ দর্শাননি। সোমবার ছবি তুলেছেন। আর ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার। ২৪ তারিখ থেকে তিনি অফিসে আসছেন না। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হতেই দায় এড়াতে চাইছেন সম্পাদক। তাঁদের দাবি, নিজে থেকেই অফিসে আসছেন না ওই চিত্রগ্রাহক।
[বাংলাদেশে কয়লা দুর্নীতি, ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ক্ষুব্ধ হাসিনার ]
এই ঘটনায় চিত্রগ্রাহকের পাশে দাড়িয়েছেন সে দেশের সাংবাদিকরা। চুম্বনের স্বাধীনতা চলে গেল? শিরোনামে কলাম লিখলেন ঢাকা ট্রিবিউনের বিশেষ করেসপন্ডেন্ট তানিম আহমেদ। লিখলেন, ‘দমবন্ধকারী আবহাওয়ায় এই প্রেমের ছবিই ভরসা জোগায়। মৃত্যুমুখে চলে যাওয়া আশা ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে। এই ধরনের মানুষরাই জীবন যৌবনের পথ উন্মুক্ত করেন। হৃদয়কে উষ্ণতায় ভরিয়ে দেন।’ পলেস্তারা খসা দেওয়াল ফাটিয়ে অশ্বত্থ চারার মতো প্রেম জাগে পুরোনো বাড়ির পোষা পায়রার পালকে। আরও একটি নতুন দিনের জন্ম হয় জীবন আহমেদদের ক্যামেরায়।
The post বৃষ্টিতে চুম্বনরত যুগলের ছবি ভাইরাল, চাকরি খোয়ালেন বাংলাদেশের চিত্রগ্রাহক appeared first on Sangbad Pratidin.