রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: স্কুলের বুক লিস্টে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (WB CM Mamata Banerjee) ছবি ছাপিয়ে বিতর্কের মুখে প্রধান শিক্ষক। স্কুল বইয়ের তালিকা বা বুক লিস্ট প্রকাশ করার পর দেখা যায় প্রথম পাতাতে মনীষীদের বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছাপানো হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে বিতর্কের মুখে নদিয়ার হোগলবেড়িয়া থানার হোগলবেড়িয়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক গিরীন্দ্রনাথ দাস।
স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নিজের মর্জি মতো স্কুলের সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন। পরিচলন সমিতি বা কারও সঙ্গে কোনও আলোচনার ধার ধারেন না। প্রতি বছর এলাকার অন্যান্য স্কুলের মত এই স্কুলের বুক লিস্টের প্রথম পাতায় কোনও মনীষীর ছবি ছাপা হত। কিন্তু এবছর স্কুলের বুক লিস্ট প্রকাশের পর দেখা যায় প্রথম পাতাতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক দানা বাঁধে।
[আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে প্রশ্ন ফাঁস রুখতে সমস্ত স্কুলে CCTV, পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ নিয়ম চালু পর্ষদের]
স্কুলের প্রধান শিক্ষক গিরীন্দ্রনাথ দাসের দাবি, “আমি মুখ্যমন্ত্রীর অন্ধ ভক্ত। তিনি রাজ্যের উন্নয়নের কাণ্ডারী। রবীন্দ্র-নজরুলের চেয়ে তিনি কোনও অংশে কম নন। তাছাড়া আমাদের মুখ্যমন্ত্রী একজন রাষ্ট্রনায়ক। সেই হিসেবে স্কুলের বুক লিস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছাপানো কোনও অপরাধ নয়। উনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ওঁর ছবি দেওয়া খাতা তো আমরা স্কুলে পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করছি। তাহলে বুক লিস্টে তাঁর ছবি থাকলে আপত্তি কোথায়?” একইসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট কথা, “আমার কাজের মধ্যে কোন ভুল নেই।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সনৎ সরকার জানান, “সাধারণত স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের তালিকাতে মণীষীদের ছবি ছাপানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। তবে আমাদের স্কুলের বুক লিস্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছাপানো ভুল না ঠিক, বলতে পারব না। তিনি তাঁর মর্জিমতো স্কুল চালান, কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেন না। আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সকলের সঙ্গে যদি আলোচনা করে বিষয়টি করতেন তাহলে এই নিয়ে বিতর্কে সৃষ্টি হত না।”
[আরও পড়ুন: দীর্ঘ অসুস্থতার পর প্রয়াত বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী]
এ প্রসঙ্গে সিপিএমের করিমপুর-১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সন্দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের ইন্ধন ছাড়া এটা কখনওই সম্ভব না। সারা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শিক্ষাব্যবস্থাটাই দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে। এবারে বুক লিস্টে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাটাকে কলুষিত করেছে।” নদিয়া জেলা উত্তর বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের কথায়, “যে সমস্ত তৃণমূল কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে তাঁরা বিভিন্নভাবে দলের প্রথম সারিতে আসার চেষ্টা করছে। প্রধান শিক্ষকও তেমনই একজন। বুক লিস্টে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাপিয়ে দলের প্রথম সারিতে আসার চেষ্টা করছে। এই প্রধান শিক্ষক এর আগেও স্কুলের বিভিন্ন ঘটনায় বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন। এই ধরনের শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার বদলে অশিক্ষার পাঠ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি ফিরছে।” তৃণমূল কংগ্রেসের করিমপুরে -১ ব্লক সভাপতি আশিস কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের বিষয়ে দল সরাসরি কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথা ঘামায় না। এটা স্কুলের একান্ত নিজস্ব বিষয়।”