গোবিন্দ রায়: আগেই স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২১ জুলাই ভারচুয়াল জনসভা করার আবেদনে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court)। আর এবার সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপির বিরুদ্ধে ‘জোহাদ’ ঘোষণার মন্তব্য নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল আদালতে। এফআইআর দায়ের করে সিবিআই তদন্তের আরজি জানানো হয়েছে ওই মামলায়। বুধবার মামলার শুনানি শেষ করে রায়দান স্থগিত রেখেছে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
গত ২৮ জুন পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে এক দলীয় কর্মিসভা থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই কর্মিসভায় দলের কর্মী ও সমর্থকদের বার্তা দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেছিলেন, “সামনেই ২১ জুলাই। আপনারা জানেন ২১ জুলাই আমাদের শহিদ তর্পণের দিবস। ওই দিন কলকাতায় শহিদ দিবস পালন করা হবে৷ ওই দিনটিই হবে বিজেপির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার দিন৷” এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেই মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। মামলা করেন নব্যেন্দুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলাকারীর বক্তব্য, জেহাদ কথার অর্থ হল সশস্ত্র সংগ্রাম৷ তাই আশঙ্কা প্রকাশ করে মামলাকারীর দাবি, যিনি দল চালান, তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। অনেকের মনে উস্কানি ছড়াতে পারে। ভোট পরবর্তী অশান্তির কথা বলছি আগের ঘটনা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। বৃহস্পতিবার এমন না হয় তার জন্য এই আবেদন।
[আরও পড়ুন: কয়লা-গরুপাচারে যুক্ত বিজেপি নেতারাও! সময়মতো প্রমাণ প্রকাশ্যে আনার হুঁশিয়ারি অভিষেকের]
আশঙ্কা প্রকাশ করে তাঁর আর দাবি, ওই ‘জেহাদ’ মন্তব্যের জেরে যদি ২১ জুলাই সত্যিই কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে, তাহলে তার দায় কে নেবে? দলনেত্রীর এমন মন্তব্য শুনে তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা বিজেপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারেন। তাই অবিলম্বে মমতার ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত৷ অথবা তিনি কী অর্থে ‘জেহাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, মমতাকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে৷ এমনকি সিবিআই তদন্তের আরজি জানিয়েছেন মামলাকারী। যেহেতু ২১ জুলাই সম্পর্কে ওই মন্তব্য করা হয়েছিল, তাই ওই দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাজ্যজুড়ে সিআরপিএফ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করারও আবেদন জানানো হয়েছে।
তবে হাই কোর্টে রাজ্যের ব্যাখ্যা, “‘জেহাদ’ মানে আসলে ‘স্ট্রাগল’ এবং ‘ফাইট’। তাদের যে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে সেটা আবেদনে কোথাও নেই।” আরও দাবি,”বিজেপি একমাত্র হিন্দু, তৃণমূল অন্য ‘কিছু’, এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে আবেদনে। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করা হয়েছিল, সাধারণ মানুষকে নয়। এই মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে। তা নাহলে ২৮ জুন মন্তব্য করেছিলেন। আর আজ তাদের মনে হচ্ছে অশান্তি ছড়াতে পারে।” এর আগেও হাই কোর্টে এই একই ইস্যুতে আরও একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। নাজিয়া এলাহি সেই মামলা করেছিলেন। সেই মামলা অবশ্য বিচারাধীন রয়েছে হাই কোর্টে।