রাহুল রায়: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose) সম্পর্কে মিথ্যে তথ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে ভুয়ো তথ্য দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে বই। বিকৃত তথ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে সিনেমা। যারা একাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court) দায়ের হল জনস্বার্থ মামলা। মামলা দায়ের করেছেন নেতাজির পরিবার ও নেতাজি প্রেমীরা। আগামী সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
মামলাকারী তথা নেতাজির পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসুর কথায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে তদন্ত হয়েছে। কিছু তথ্যও সামনে এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নেতাজিকে সম্মান জানাতেও সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক উদ্যোগ। মামলকারীর অভিযোগ, নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে কিছু প্রতারক আজগুবি লিখিত গল্প ও সিনেমা প্রকাশ করেছে। ব্যবসার জন্য নেতাজিকে ব্যবহার করে, অন্তর্ধান রহস্য বিতর্ক তৈরি করে, নিজেদের স্বার্থে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা। চন্দ্র বসুর আরও দাবি,এটা বন্ধ করার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।
[আরও পড়ুন: কাতার যাত্রায় কাঁটা বিধানসভা অধিবেশন, বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার সফর পিছোলেন মদন মিত্র]
তাই নেতাজিকে নিয়ে যারা তথ্য বিকৃত করছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। চন্দ্রবাবুর দাবি, ৩৫ বছর তিনি নাকি পর্দার আড়ালে ছিলেন। এটা কি সম্ভব? একজন দেশনায়ক যিনি স্বাধীনতার আগে এতো আত্মত্যাগ করলেন, তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার ভয়ে কেন পরদার আড়ালে চলে যাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে মামলার শুনানি। কেন্দ্র যাতে এধরনেক অসাধু বিষয়ের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়, সেই আরজিও জানানো হয়েছে।
১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর। সিঙ্গাপুরের ক্যাথে সিনেমা হলে আজাদ হিন্দ সরকারের ঘোষণা করেছিলেন নেতাজি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন নিজে। ঠিক দু’দিন বাদে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এরপর ৩০ ডিসেম্বর আন্দামানের জিমখানা গ্রাউন্ড, যা বর্তমানে নেতাজি স্টেডিয়াম হিসাবে পরিচিত, সেখানে উত্তোলন করেছিলেন দেশের জাতীয় পতাকা। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জকে শহিদ এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে স্বরাজ হিসাবে উল্লেখ করে আজাদ হিন্দ বাহিনীর জেনারেল এ ডি লোগানাথানকে গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন।
ভারতীয় ইতিহাসে এই অধ্যায়ের অস্তিত্ব এতদিন ছিল শুধু ঘটনার উল্লেখ হিসাবেই। আগেই একে মান্যতা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্দামানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর দেওয়া ভাষণে নেতাজিকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উল্লেখও করেছিলেন। সেই ঘটনাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার কাজ শুরু করে দিল কেন্দ্র।