সুকুমার সরকার, ঢাকা: দেশ ও মানুষকে ভালবেসে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কর্তব্য পালন করতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ৭৯তম বিএমএ (BMA) দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি প্যারেড অনুষ্ঠানে রাখা প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি। ঢাকার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত প্যারেডের অভিবাদনও গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আর বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) বলেন, ‘দায়িত্ব পালনের সবসময় এই কথা মনে রাখতে হবে যে দেশকে ভালোবাসতে হবে আর তার জন্য কর্তব্য পালন করতে হবে। তোমরা যে শপথ গ্রহণ করেছ তার মধ্যে দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিরাট দায়িত্ব কাঁধে পড়ল। সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, তোমরা এদেশের সন্তান, এদেশের গ্রামে, গঞ্জে, শহরে তোমাদের মা-বাবা সবাই ছড়িয়ে আছেন। দেশের উন্নতি হলে সবার উন্নতি হবে। দেশ শান্তিতে থাকলে সবাই শান্তিতে থাকবে। সে কথা সব সময় মনে রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যথাযথভাবে অবদান রেখে যাবে। এটাই আমরা চাই।’
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে অস্ত্র বিক্রি করতে চায় তুরস্ক, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী আঙ্কারা]
প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এপ্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষের জন্য সব কিছু করা আমাদের সেনাবাহিনী মানুষের জন্যই। জনগণের সেনাবাহিনী, জনগণের পাশেই দাঁড়াবে। এজন্যই যে কোনও দুর্যোগের মোকাবিলায় আমাদের সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে।’ ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পার্সিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালোবাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, সৎ পথে থেকো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা।’
সততা-নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে জীবন চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বলেন, ‘জীবনে সবচেয়ে বড় কথা সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং দেশ মাতৃকাকে ভালবাসা। জাতির পিতার এই নির্দেশ, এই উপদেশ চলার পথে সব সময় মনে রাখবে। আমি তোমাদের পরিবারেরই একজন। তোমাদের প্রতি আমার সব সময় দোয়া ও আর্শীবাদ থাকবে। তোমরা দেশকে ভালবাসবে, দেশের মানুষকে ভালবাসবে। মানুষের জন্য কর্তব্য পালন করবে। যেন এদেশ এগিয়ে যেতে পারে, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হতে পারে। তোমরা নেতৃত্বে আরও সফল হও, দক্ষ হও, সুশিক্ষিত হও, দেশ-জাতি তোমাদের জন্য সব সময় গর্ববোধ করবে, সেটাই আমরা চাই। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ। এ কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। এ কথা মাথায় রেখে আমরা বিশ্ব দরবারে যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি, সেভাবে নিজেদের তৈরি করতে হবে এবং দেশের মান মযার্দা সমুন্নত রাখতে হবে। দেশে বিদেশে আমাদের সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই সর্বক্ষেত্রে তারা দক্ষ থাকবে, উপযুক্ত থাকবে। আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হবে। সারা বিশ্বের যেখানেই যাবে, সেখানেই যেন বাংলাদেশের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখে, সেদিকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ আরও উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। তখন আরও উঁচুমানের অফিসার হিসেবে তোমরাই দায়িত্ব পালন করবে। আজকে যারা নবীন, তাদের উপরই দায়িত্ব আসবে। আমার ২০৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হিসেবে তোমরাই কাজ করবে, তোমরাই দায়িত্ব পালন করবে। সুতরাং সে কথা মাথায় রেখে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।’
বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি ভাটিয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিএমএ ৭৯তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ১১৬ জন বাংলাদেশি, তিনজন ফিলিস্তিনি এবং একজন শ্রীলঙ্কান ক্যাডেট-সহ সর্বমোট ১২০ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ক্যাডেটদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।