নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ‘বহিরাগত’ ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেই তাদের কোণঠাসা করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিষয়টি উপলব্ধি করে পালটা রণকৌশল তৈরির কাজ শুরু করে দিল বিজেপিও (BJP)। তৃণমূলের বহিরাগত অস্ত্র ভোঁতা করতে পালটা ‘বাঙালি আবেগ’কে উসকে দেওয়া ও বাঙালির মন ছুঁয়ে যাওয়ার রাস্তা অবলম্বন করেই চলতে হবে। এই বার্তাই দলের কর্মী-সদস্যদের সামনে তুলে ধরার লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)।
বৃহস্পতিবারই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার (JP Nadda) কনভয়ে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে ধুন্ধুমার ঘটে গিয়েছে। যার জল গড়িয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। কিন্তু এসবের মধ্যেই যে টিকে থাকতে হবে, সেই পরামর্শই মোদি বাংলার ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির কনভয়ের উপর হামলার ঘটনার খোঁজ নিতেই তিনি নাড্ডা ও কৈলাসকে ফোন করেছিলেন। সেই সময়েই কৈলাসকে তিনি বার্তা দিয়েছেন, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, কোনওভাবেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবে না। শুধু দলকে বার্তা দেওয়া নয়, তিনি নিজে যে সেই কাজ লাগাতার করে যাবেন সেই উদাহরণও প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিকালের প্রায় প্রতিটি কর্মকাণ্ডেই উঠে এসেছে। বিজেপির দিকে বহিরাগত বলে যে আঙুল তোলা হচ্ছে, তার পালটা কোনও প্রচার নয়। বরং বিষয়টিকে ‘গুরুত্বহীন’ করার জন্য পাত্তা না দিয়ে বাঙালির মনের কাছাকাছি পৌঁছনোর দিকে নজর দেওয়ার উপরেই জোর দিয়েছেন মোদি।
[আরও পড়ুন: কৃষক আন্দোলনের দখল নিয়েছে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’, বিস্ফোরক অভিযোগ রবিশংকর প্রসাদের]
তৃণমূল (TMC) তাদের ‘দিল্লির দল’ বলে যতই প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করুক বিজেপি যে বাঙালির কথা ভাবে, এই বিষয়টি তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক পদক্ষেপ করছেন। দলকেও সেই রাস্তাতেই হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন। রেডিওতে নিজের ‘মন কি বাত’ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিককালের প্রধানমন্ত্রীর প্রায় সমস্ত ভাষণেই বাংলার মনীষীদের উল্লেখ। বৃহস্পতিবার সংসদের নতুন ভবনের উদ্বোধনের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিবেকানন্দ স্মরণের পরেই এদিন ইন্দো-উজবেকিস্তান ভার্চুয়াল সামিটে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাকড্রপ হিসেবে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর মন্দিরের ছবি দেখা গিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম। অতীতে প্রধানমন্ত্রীর অন্য দেশের নেতার সঙ্গে আলোচনায় ব্যাকড্রপে কোনও মন্দিরের ছবি দেখা যায়নি। এবং এই বিষয়টি যে কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়, পুরোটাই বাংলা বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে হিসেব করে পা ফেলা, তা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ভুয়ো খবর ছড়ানোর সেরা উদাহরণ পাকিস্তান! ইসলামাবাদকে তুলোধোনা ভারতের]
একদিকে রাজ্য বিজেপির তরফে সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই ছবি পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। আবার প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টেও তা দেখা গিয়েছে। আবার এদিনই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের (Pranab Mukherjee) জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গ বিজেপি নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর ছবিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে পোস্টও করেছে। প্রণববাবুকে নিয়ে বাঙালির আবেগকে কাজে লাগাতেই এহেন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রণববাবুর পরিচয় ছিল কংগ্রেস নেতা। কিন্তু সেই বিষয়টি পাশ কাটিয়ে বিজেপির এই প্রণব বন্দনা তাদের বঙ্গ-মন পাওয়ার আরেক কৌশল বলেই রাজনৈতিক শিবিরের মত। আগামিদিনেও বাঙালির আবেগ উস্কে দিতে এমন বহু চমক অপেক্ষা করে আছে।