তরুণকান্তি দাস, হলদিয়া: রাজ্যের ভোট ঘোষণা যে কোনও মুহূর্তে। তার ঠিক আগেই, বঙ্গ দখলের লক্ষ্যে বিজেপির প্রচার কোন সুরে বাঁধা থাকবে তা ঠিক করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তাঁকে দিয়েই কার্যত শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোট প্রচার। কারণ, হোক না রাজ্যের কুরসি দখলের লড়াই, দলের কাছে তিনিই মুখ। তাই আজ, রবিবার হলদিয়ার হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে তিনি কী বার্তা দেন সে দিকে যেমন তাকিয়ে রয়েছে রাজ্য বিজেপি (BJP), তেমনই শাসকদল তৃণমূলও। হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে রাজনৈতিক সভার পর মোদির সরকারি অনুষ্ঠান রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ আছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তবে নবান্ন সূত্রে শনিবার পর্যন্ত তাঁর এই অনুষ্ঠানে আসার কোনও খবর নেই।
যে জেলা থেকে মোদির তথা বঙ্গ বিজেপির প্রচার সফর শুরু হচ্ছে, তার এবার বাড়তি গুরুত্ব নন্দীগ্রামের জন্য। এবং এই সভার উপর প্রচারের একটু হলেও বেশি আর্কলাইট অবশ্যই যার জন্য, তিনি হলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari), যিনি শাসক শিবির ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানোর পর বিভিন্ন জেলায় সভা করলেও হলদিয়ায় নতুন ভূমিকায় প্রথম পা রাখবেন মোদির সভামঞ্চেই। এই সভামঞ্চের লাগোয়া যে অনুষ্ঠানস্থল সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন তিনটি বড় প্রকল্পের, যা কিছুটা বদলে দেবে হলদিয়ার আর্থিক পরিস্থিতি এবং শিলান্যাস করবেন আরও একটি বড় প্রকল্পের। সেই সরকারি মঞ্চে আবার থাকতে পারেন সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে। থাকবেন বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)-সহ একগুচ্ছ নেতা-নেত্রী।
[আরও পড়ুন: ফ্রন্টের সঙ্গে নয়, আপাতত জোট নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা চায় কংগ্রেস]
তবে কারা থাকবেন মোদির মঞ্চে অথবা কাদের জায়গা হবে লাগোয়া ভিআইপির চেয়ারগুলিতে, তার চেয়েও বড় কথা হল প্রধানমন্ত্রী আজ কী বার্তা দেন এবং কতখানি আক্রমণ শানান রাজ্যের শাসকদলকে লক্ষ্য করে। তুলে ধরেন কোন কোন ইস্যু। বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, শনিবার দিনভর বিজেপির তরফে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে যা রাতেই পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট জায়গায়। সকালেই সেটিতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারবেন মোদি। সেখানে রাজ্যের কিছু প্রকল্প ঘিরে অনিয়ম এবং ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়েছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গত কয়েক বছর নতুন কোনও প্রকল্প আসেনি তাও রয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো বিশেষ নোটে। রাজ্যের শাসকদলের আরও যেসব নেতানেত্রী বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন তাঁদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তৃণমূলের ঘর যে ভাঙছে তা প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতেই এই বিশেষ নোট। আর যেহেতু হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের জনসভা তাই স্থানীয়দের কাজ না পাওয়া বেকারত্ব এবং শিল্পায়নে রাজ্যের ব্যর্থতার বিষয়টিও যাতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরতে পারেন সেদিকে নজর দিয়েছে দল।
[আরও পড়ুন: কালো পতাকা-ঝাঁটা-জুতো হাতে বিক্ষোভ, শোভন-বৈশাখীর রোড শো ঘিরে মহেশতলায় ধুন্ধুমার]
ভোট প্রচারে ঝড় তুলতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah), বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা তো আছেনই, বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মন্ত্রীদেরও এখানে আনা হচ্ছে। তারা এবং রাজ্যের নেতারাও ভোট প্রচারে গিয়ে কোন সুরে কথা বলবেন তা স্থির হয়ে যাবে রবিবাসরীয় দুপুরে হলদিয়া হেলিপ্যাড ময়দান থেকে, যা হলদি নদী লাগোয়া এবং উলটো দিকেই নন্দীগ্রাম। নদীর ওপার থেকেই সবচেয়ে বেশি লোক আনতে তৎপর বিজেপি নেতৃত্ব। শনিবার দিনভর এখানে এসপিজি অথবা সরকারি কর্তাদের মধ্যে যে তৎপরতা, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ব্যস্ততা বিজেপি নেতাদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেল সেই নন্দীগ্রামের জন্য। দলের অভ্যন্তরীণ মিটিংয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলল রাজ্যের ভূমি আন্দোলনের পীঠস্থান বলে পরিচিত এই এলাকা থেকে কীভাবে কত বেশি লোক আনা যাবে। কারণ মোদির বক্তৃতায় ঠাঁই পাবে নন্দীগ্রাম। সেখানে যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নিজে ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সেই বিষয়টিও রাজ্য নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীকে তথ্য-সহ জানিয়েছে বলে খবর। ফলে সব মিলিয়ে এই সভা রাজ্যের শাসকদলের আপাতত প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির নির্বাচনী প্রচারের সুর-তাল-লয় বেঁধে দেওয়ার অগ্নিপরীক্ষা।