বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে রামমন্দির। রাজনৈতিক মহলের মত, মেরুকরণের লক্ষ্যেই রামমন্দিরকে সামনে রেখে এখন থেকেই দেশজুড়ে প্রচারের ঝড় তুলতে চাইছে বিজেপি। আর তার রাশ স্বয়ং নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। রামমন্দির উদ্বোধনের ২৩ দিন বাকি থাকলেও আজ, শনিবার অযোধ্যায় মোদির ১৫ কিলোমিটার রোড শো’র মধ্য দিয়েই বিজেপি কার্যত লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিতে চলেছে। একই সঙ্গে এদিন অযোধ্যার উন্নয়নের জন্য বিরাট অঙ্কের প্রকল্প ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, ১৫,৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করা হবে। তার মধ্যে রয়েছে রেল স্টেশন ও বিমানবন্দরের উন্নয়ন। শনিবার রামায়ণের স্রষ্টা মহর্ষি বাল্মীকির নামে বিমানবন্দরের উদ্বোধন করবেন মোদি।
রামমন্দিরের উদ্বোধনে মোদি যে হাজির থাকবেন, তা আগেই ঠিক হয়ে রয়েছে। এমনকী মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় যে হাতে গোনা পাঁচজন থাকবেন, সেখানেও প্রধান ভূমিকা পালন করবেন তিনিই। রামলালাকে আয়নার মাধ্যমে মুখমণ্ডল দর্শন করানো এবং কাজল পরানোর কাজ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই সারবেন বলে শোনা যাচ্ছে। রামমন্দির নিয়ে মানুষের মনে আগ্রহ তৈরি করতে বহুদিন ধরেই গোটা দেশজুড়ে প্রচার চালাচ্ছে সংঘ পরিবার। রাম মন্দির নিয়ে বিজেপির এই মেরুকরণের চেষ্টাকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “আমরা রামকে হৃদয়ে পুজো করি। কিন্তু বিজেপি তাকে ইলেকশন এজেন্ট বানিয়ে রোটি-কাপড়া-মকানের রাজনীতির বাইরে ধর্মের রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চাইছে। বিজেপির ইলেকশন কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।”
[আরও পড়ুন: যাদবপুরে ‘জাত গোখরো’ মিঠুন, ডায়মন্ড হারবারে দিলীপ! খসড়া প্রার্থী তালিকায় চমক বিজেপির]
রাম মন্দির নির্মাণ ও পরিচালন সংক্রান্ত প্রধান সংস্থা রাম জন্মভূমি ট্রাস্টও প্রতি ক্ষেত্রেই রহস্য জিইয়ে রেখে মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে ক্রমাগত। প্রচারের লক্ষ্যেই বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের তরফে মন্দির সংক্রান্ত প্রতিটি পা মেপে, পরিকল্পনামাফিক এগোনো হচ্ছে বলেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা। যেমন, শুক্রবারই রামমন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার কোন মূর্তি বসবে, ভোটাভুটির মাধ্যমে তা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনই তা প্রকাশ করতে রাজি নয় ট্রাস্ট। একেবারে প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময়েই মূর্তির মুখদর্শন হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, তিন শিল্পীর তৈরি রামলালার মূর্তি থেকে একটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে এদিনই। ৬২০ কোটি টাকা ব্যয় করে অযোধ্যা স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। রামমন্দিরের অনুরূপে তৈরি হচ্ছে অযোধ্যা স্টেশনের টার্মিনাল বিল্ডিং। অযোধ্যা রেল স্টেশনের নতুন নাম হয়েছে অযোধ্যাধাম। সমস্ত প্রস্তুতির তদারকি করছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজেই। রামমন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, টানা সাতদিন ধরে চলবে রামলালা প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান। ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠান শেষ হবে। কী কী উৎসব এই সাতদিনে, তার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, ১৬ জানুয়ারি দশবিধ স্নান দিয়ে শুরু হবে সাতদিনব্যাপী উৎসব। সরযূ নদীতে স্নান করবেন ভক্তরা। এছাড়াও বিষ্ণু আরাধনা ও গোদান হবে এই দিনে।
এদিকে, রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা কে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, কে সেখানে যাবেন, কে যাবেন না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেত্রী হিসাবে সোনিয়া গান্ধী এবং রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে মল্লিকার্জুন খাড়গে নিমন্ত্রণ পেয়েছেন বলে কংগ্রেস জানিয়েছে। নিমন্ত্রণ পেয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও।