সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাশ্মীরি নেতাদের দিল্লি ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে কাশ্মীরে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর বন্দোবস্ত এবং দ্রুত উপত্যকার পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস। আর এ সবটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) করলেন কোনওরকম বাহ্যিক চাপ ছাড়াই। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় এবং সহযোগিতাপূর্ণ বাতাবরণে। কাশ্মীর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তটি বেশ চমকপ্রদ এবং অ-মোদিসুলভ! প্রধানমন্ত্রী কোনও বিষয়ে আলোচনার জন্য বাহ্যিক চাপ ছাড়াই সর্বদলীয় বৈঠক ডাকছেন, গত সাত বছরে এমন উদাহরণ একেবারে বিরল। আর কাশ্মীরের মতো ইস্যু নিয়ে সম্ভবত এই প্রথম। এর মধ্য দিয়ে মোদি একাধিক লক্ষ্য হাসিল করতে চাইছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
প্রথমত, করোনা, আর্থিক মন্দার মতো বিষয় এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তাকে রীতিমতো ধাক্কা দিচ্ছে। এই সব ইস্যু রাজনৈতিকভাবে বিজেপির (BJP) ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই এই রাজনৈতিক সমস্যাগুলো থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর একটি সুযোগ কাশ্মীর বৈঠকের মাধ্যমে তৈরি করলেন মোদি। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে কাশ্মীরের (Kashmir) ভোটপ্রক্রিয়া শুরু করা গেলে উপত্যকার সমস্যার পুরোপুরি স্থায়ী সমাধান করার একটি দাবি তিনি করতে পারবেন। যা উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে ডিভিডেন্ট দিতে পারে।
[আরও পড়ুন: মোদির ডাকা সর্বদলে জোরাল কাশ্মীরের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি, কী জানাল কেন্দ্র?]
পাশাপাশি এই বৈঠকের ফলে আন্তর্জাতিক মহলে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারবে ভারত। এর ফলে ভারতের গণতান্ত্রিকতার চিত্র দেখানো গেল গোটা বিশ্বকে। সেজন্যই সম্ভবত বৈঠক শেষে টুইটে প্রধানমন্ত্রী দেশের গণতন্ত্রের জয়গান গাইলেন। দাবি করলেন, উপত্যকার তৃণমূল স্তরের গণতন্ত্র রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর তাঁর সরকার। বুঝিয়ে দিলেন, তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে বলেই জম্মু-কাশ্মীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে উদ্যোগী। জেলা উন্নয়ন পর্ষদের ভোটের পরের ধাপ বিধানসভা-লোকসভা নির্বাচন। তবে তার আগে হবে ‘ডিলিমিটেশন’। রাজনৈতিক মহলের দাবি, বিজেপির আসল উদ্দেশ্য এই ‘ডিলিমিটেশন’ অর্থাৎ বিধানসভার পুনর্বিন্যাস। যেটা করে জম্মু এলাকায় কাশ্মীরের থেকে বেশি আসন তৈরি করে দেওয়া হবে। যার ফলে ইতিহাসে প্রথমবার হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী পেতে পারে উপত্যকা।
[আরও পড়ুন: বিজেপিতেই আস্থা কর্পোরেটদের! ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের ৭৬ শতাংশ চাঁদাই পেয়েছে গেরুয়া শিবির]
কাশ্মীরের নেতাদের মত জানতে চেয়ে মোদি বোঝালেন মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও ভারত সমান মনোযোগী। কারণ, ট্রাম্প-জমানায় কাশ্মীর নিয়ে তিনি যতটা নিশ্চিন্ত ছিলেন, বাইডেন-যুগে ততটাই চিন্তিত। পালাবদলের পর ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটন তিন-তিনবার নয়াদিল্লিকে কাশ্মীর পরিস্থিতি ও মানবাধিকার নিয়ে সতর্ক করেছে। প্রশ্ন উঠেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও (EU)। এই বৈঠকের ফলে সেই চাপ খানিকটা সামাল দেওয়া গেল।