সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বুথফেরত সমীক্ষা ইতিমধ্যেই আভাস দিয়েছে মোদি ঝড়ের। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে চলেছে এনডিএ সরকার। তারপরই কন্যাকুমারিতে ৪৫ ঘণ্টার ধ্যান শেষে দিল্লি ফেরার পথে স্বাধীনতার শতবর্ষে উন্নত ভারতের রূপরেখা তৈরির বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যেখানে ৩ টি বিষয়ের উপর জোর দিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে এই ৩ বিষয় হল 'রিফর্ম, পারফর্ম এবং ট্রান্সফর্ম'। দেখে নেওয়া যাক, এই ৩ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোন কোন ক্ষেত্রগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য মোদি সরকারের?
রাজনৈতিক মহলের দাবি, 'রিফর্ম' অর্থাৎ দেশের 'সংস্কার' মূলক পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে চিরাচরিতভাবে চলে আসা বহু ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চায় মোদি সরকার। অনুমান করা হচ্ছে, এই তালিকায় প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে জাতীয় পরিচয়পত্র। বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশের পাশাপাশি পাকিস্তান, বাংলাদেশ এমনকী আফগানিস্তানের মতো দেশেও রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র ভারত। সর্বশেষ আধার কার্ড চালু হলেও তা নিয়ে বিতর্ক কম নেই। উন্নত ভারতের অংশ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে পারে সরকার। এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বদল। রাজ্য তথা জেলাগুলিকে ভাগ করার পাশাপাশি বাড়ানো হতে পারে লোকসভা আসন। সেদিক থেকে কেন্দ্রে সরকার গঠনে প্রতিটি রাজ্যকে দেওয়া হতে পারে সমান গুরুত্ব। এর পাশাপাশি, দেশে বাড়তে থাকা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও এক দেশ এক আইনের হিসেবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করা হতে পারে দেশজুড়ে।
[আরও পড়ুন: অবিলম্বে যমুনা রিভার বোর্ডের বৈঠকের নির্দেশ, দিল্লির জল সংকট মেটাতে আসরে সুপ্রিম কোর্ট]
এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পারফর্ম বা জনগণের সার্বিক উন্নয়নে সরকারি পরিষেবা। এক্ষেত্রে সরকারি পরিষেবাগুলিকে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আরও সহজ প্ল্যার্টফর্ম তৈরির পথে এগোতে চায় সরকার। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা অনুযায়ী রাজনৈতিক মহলের অনুমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানুষের কাছে সহজলভ্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চায় সরকার। দেশের বহু জায়গায় প্রবল জলসংকট মেটাতে স্বচ্ছ পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে কাজ করতে চায় মোদি সরকার। একইসঙ্গে দেশে বাড়তে থাকা বেকারত্বে রাশ টানতে নেওয়া হতে পারে বড়সড় কোনও পদক্ষেপ। অনুমান করা হচ্ছে, চিনকে টেক্কা দিয়ে এক্ষেত্রে ভারতকে 'ইন্ডিয়াস্ট্রিয়ান মেনুফেকচারিং হাব' বা 'উৎপাদনের বৈশ্বিক কেন্দ্র' হিসেবে গড়ে তোলা হতে পারে। যা একদিকে যেমন দেশে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনবে, অন্যদিকে বৈশ্বিক বাজারে দেশ আলাদা জায়গা পাবে। এক্ষেত্রে খোদ প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, 'আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদনের পাশাপাশি উৎকর্ষের ওপরও জোর দিতে হবে। আমাদের ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট’ মন্ত্র নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।'
[আরও পড়ুন: ছক্কা হাঁকিয়েই লুটিয়ে পড়লেন ব্যাটার, সতীর্থরা ছুটে গিয়ে দেখলেন সব শেষ!]
এই তালিকায় সব শেষে রয়েছে ট্রান্সফর্ম বা আমূল বদল। স্বাধীনতার শতবর্ষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একাধিক ক্ষেত্রে প্রয়োজন রয়েছে আমূল বদলের। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে সরকার। যেমন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রয়েছে আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য। রাজনৈতিক মহলের দাবি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা একেবারে বন্ধ করে দিতে উদ্যোগী সরকার। জোর দেওয়া হতে পারে বিকল্প শক্তির ক্ষেত্রে। কচ্ছ্বের পাশাপাশি লাদাখেও সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প লাগু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের নাব্যতা হারিয়ে ফেলা নদীগুলিকে পুনরায় ড্রেজিং করে করে আভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করে তোলা হতে পারে। বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেও। এছাড়া রাজনৈতিক মহলের দাবি, দেশকে তৃতীয় বৃহত্তম তথা ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে পারে মোদি সরকার। শুধু তাই নয়, উন্নত ভারতের পাশাপাশি দেশের জমি ফেরানোর প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে নয়া সরকারের শাসনকালে। এক্ষেত্রে চিনের দখলে থাকা ভারতের জমি আকসাই চিন, পাকিস্তানের কবলে থাকা অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েও বড় পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার।