বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: কেশুভাই প্যাটেল। নাকি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি (PM Modi)। গুজরাটে (Gujarat) পদ্ম ফোটানোর মূল কারিগর কে? ভোটের আগে এই প্রশ্নে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে বিজেপির (BJP) আঁতুড়ঘর গুজরাট। ‘এই গুজরাট আমি তৈরি করেছি।’ সম্প্রতি মোদি এই দাবি করায় বেজায় ক্ষুব্ধ দলের প্রবীণ নেতারা। ক্ষুব্ধ নেতৃত্বকে বোঝাতে আমেদাবাদ ছুটে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। দলের প্রবীণদের বোঝাতে প্রত্যেকের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করছেন। বিক্ষুব্ধ অনেকেই মোরবির সেতু দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন বলে সূত্রের খবর।
তবে গুজরাট নিয়ে মোদির দাবি অমিত শাহও ভালভাবে নিতে পারেননি। মোদি ও নাড্ডাকে এড়িয়ে আগ বাড়িয়ে শাহ মুখ্যমন্ত্রীর ‘মুখ’ ঘোষণা করে দেওয়ায় তেমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে মোদি-শাহর অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের সমীকরণ। ২৭ বছর আগে গুজরাটের বিজেপি সরকারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন কেশুভাই প্যাটেল।
[আরও পড়ুন: তৃণমূল নেত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে করা কটূক্তির জন্য ক্ষমা চাইতে পারবেন মোদি-শাহ-শুভেন্দু? চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন অভিষেক]
ক্ষমতায় এসে একের পর এক উন্নয়নে রাজ্যের মানুষের মন কাড়তে সফল হন তিনি। তাঁকেই উন্নত গুজরাটের কান্ডারি বলে মনে করতে গুজরাটি সমাজ। সেই সময় মোদি ছিলেন কেশুভাই প্যাটেলের ঘনিষ্ঠ শিষ্য। যদিও পরবর্তীকালে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে রাজনৈতিক গুরুকে অস্বীকার করে একচ্ছত্র ক্ষমতা কায়েম করেন নরেন্দ্র মোদি। তখন আবার মোদির ছায়াসঙ্গী ছিলেন অমিত শাহ। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। দলের ক্ষমতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে লালকৃষ্ণ আদবানি, বেঙ্কাইয়া নাইডু থেকে শুরু করে রবিশংকর প্রসাদ, মুক্তার আব্বাস নাকভি ও প্রকাশ জাওড়েকরদের।
এমনিতেই প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পর থেকে গুজরাতে বিক্ষুব্ধদের ক্ষোভের আগুনে পুড়তে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরকে। তার উপর মোদির বক্তব্য জ্বলতে থাকা আগুনে ঘৃতাহুতি বলেই মনে করছে দলের একাংশ। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনেও ‘উন্নয়নের গুজরাট মডেল’ ছিল বিজেপির স্লোগান। কিন্তু মোদি ‘এই গুজরাট আমার তৈরি’ দাবি করায় দলের অভ্যন্তরের অসন্তোষে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে।
তাঁদের বক্তব্য, গুজরাট ও রাজ্য বিজেপির বিকাশের আসল কারিগর প্রয়াত কেশুভাই প্যাটেল। তিনি দলকে প্রথম রাজ্যে ক্ষমতায় এনেছেন তাই-ই নয়, নব-গুজরাটের ভিত্তিও স্থাপন করেন তিনি। একই সঙ্গে দলও বিস্তার লাভ করে তাঁর সময়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন অমিত শাহ। বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। মোদির দাবির সঙ্গে যে তিনিও একমত নন, তাও স্পষ্ট করেছেন বলে সূত্রের খবর। এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কি এবার মোদি ও শাহর মধ্যে গুজরাট ভোটকে কেন্দ্র করে লড়াই শুরু হতে চলেছে? গেরুয়া শিবিরে ‘পাওয়ার সেন্টার’ দু’ভাগে ভাগ হতে চলেছে। অতীতে সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস বা বামেদের ক্ষেত্রে ক্ষমতার লড়াইয়ে দল আড়াআড়ি ভাগ হয়েছে। এক্ষেত্রে সংঘ পরিবারের কী ভূমিকা হয় তা-ও গুরুত্বপূর্ণ।