সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার খবর পেয়েও, শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ নরেন্দ্র মোদিকে কাঠগড়ায় তুলে এমনই অভিযোগ করেছে কংগ্রেস৷ মোদির শুটিংয়ের ছবি টুইটারে প্রকাশ করে গতকাল তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ বলেও কটাক্ষ করেন রাহুল৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, কংগ্রেস যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগে সরব হয়েছে, তা কতটা সত্যি? এই উত্তরেরই খোঁজ করেছে সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’৷ এবং তাতে প্রকাশ পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য৷
[কাশ্মীরের কারাগারে ছড়াচ্ছে জেহাদের বিষ, পাক জঙ্গিদের তিহারে সরানোর আবেদন]
‘স্ক্রল ডট ইন’কে উদ্ধৃত করে কংগ্রেস অভিযোগ করে, ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩.১০ নাগাট পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা হয়৷ এবং জঙ্গি হানার খবর পাওয়ার পরেও তিন ঘণ্টা করবেট ন্যাশনাল পার্কে শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ সন্ধ্যা ৬.৪৫ পর্যম্ত চলে সেই শুটিংপর্ব৷ যখন সিআরপিএফ জওয়ানদের মৃত্যুশোকে মুষড়ে পড়েছিল গোটা দেশ, তখন বোটে সওয়ার হয়ে কুমির সাফারিতে বেরিয়েছিলেন মোদি৷ প্রধানমন্ত্রীর শুটিংয়ের ছবি দেখিয়ে, তাঁর সমালোচনা করেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা৷ বিজেপি জানিয়েছিল, পুলওয়ামার ঘটনার পর কোনও খাবার মুখে তুলতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী৷ বিজেপির সেই দাবিকেও মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন কংগ্রেস মুখপাত্র৷ কিছু সংবাদপত্রের কাটিং দেখিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, জওয়ানদের মৃত্যুর খবর পেয়েও রামপুর গেস্ট হাউসে খাবার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ শুক্রবার মোদির বিরুদ্ধে একই অভিযোগে সরব হন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও৷ প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রাইম টাইম মিনিস্টার’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি৷ কংগ্রেসের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, বিজেপির দেশভক্তি নিয়ে৷ অভিযোগ করা হয়, দেশকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার৷ প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত শুটিংয়ে৷
প্রশ্ন ওঠে, তবে কংগ্রেসের এই অভিযোগ কতটা সত্য? ‘ফ্যাক্ট চেক’ করতে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে সংবাদপত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়ার হাতে৷ জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের অধিকাংশ অভিযোগই ভ্রান্ত৷
[‘গদ্দার সিধু’ পোস্টারে ছয়লাপ জলন্ধর]
প্রথমত, ওইদিন সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত করবেট ন্যাশনাল পার্কে শুটিং করেননি প্রধানমন্ত্রী৷ সরকারি সূত্রে খবর, ডিসকভারি চ্যানেলের জন্য ওইদিন পরিবেশ সচেতনতা সংক্রান্ত একটি ভিডিও-র শুটিং করছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ তারপর রুদ্রপুরে একটি জনসভায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর৷ বিকাল চারটা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী করবেট পার্ক থেকে রুদ্রপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন৷
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে দুপুর ৩টে ১০ মিনিটে হামলা হয়েছে৷ কিন্তু ইকোনমিক টাইমসের সূত্রে বলছে, আসলে হামলার সময় দুপুর ৩টে ৩৩ মিনিট৷ অর্থাৎ কংগ্রেসের দাবি করা সময় থেকে ২৫ মিনিট পর৷
তৃতীয়ত, ছবি দেখিয়ে কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে হামলার পরেও শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু টুইটার বলছে ছবিটি ওইদিন দুপুর ১টা বেজে ৫২ মিনিটের আগে তোলা৷ কারণ ছবিটি ওই সময় টুইটারে আপলোড করেছিলেন নৈনিতাল বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া কো-অর্ডিনেটরক বিশ্বকেতু বৈদ্য৷ ফলে একথা স্পষ্ট যে, হামলার পর শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন না মোদি৷ তার আগেই তিনি বোটে সওয়ার হন এবং শুটিং করেন৷
[গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যু নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, সমন রাহুল ও ইয়েচুরির বিরুদ্ধে]
চতুর্থত, ইন্ডিয়া টুডে সূত্রে খবর, ওইদিন হামলার খর পাওয়ার পর কোনও খাবার মুখে তোলেননি প্রধানমন্ত্রী৷ সর্বক্ষণ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন তিনি৷
পঞ্চমত, মোদি ওই সময় কোনও মন্ত্রিসভার বৈঠক করতে পারেননি কারণ, তিনি তখন নয়াদিল্লিতে ছিলেন না৷ উত্তরাখণ্ডে ছিলেন৷ কিন্তু সেখান থেকেই সমস্ত বিষয়য়ের উপর ক্রমাগত নজরদারি চালিয়ে যান৷ এমনকী, রুদ্রপুরে জনসভায় যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করেন৷কিন্তু প্রচুর মানুষ জমা হয়ে যাওয়ায়, মাত্র ৫-৭ মিনিট ফোনে বক্তৃতা দেন তিনি৷
The post জঙ্গি হামলার সময় আদৌ কি শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন মোদি? জানুন সত্যি ঘটনা appeared first on Sangbad Pratidin.