শংকরকুমার রায়, ইসলামপুর: কালিয়াগঞ্জের উত্তাপ আরও চড়ছে। থানায় আগুন ধরানোর পর অস্থায়ী ক্যাম্পের তক্তার নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন পুলিশ কর্মীরা। তারপরেও শেষরক্ষা হল না। তক্তার নিচ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনে চলল পুলিশ কর্মীদের মারধর। উন্মত্ত জনতার হাতে আহত অন্তত ১৬ পুলিশ কর্মী। তাঁদের অনেকেই হাসপাতালে ভরতি। এদিকে এই তাণ্ডবের ঘটনায় ইতিমধ্যে ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের এদিন আদালতে তোলা হবে। সবমিলিয়ে আদিবাসী ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ঘিরে বুধবারও থমথমে গোটা এলাকা। কালিয়াগঞ্জের ৪,৫,৬ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮ তারিখ পর্যন্ত জারি ১৪৪ ধারা।
মঙ্গলবার সন্ধেয় আদিবাসী সংগঠনের মিছিলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় কালিয়াগঞ্জ থানা চত্বর। থানায়, পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে থানা। জানা গিয়েছে, থানার ক্যাম্পাস চত্বর চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে উন্মত্ত জনতা। প্রাণ বাঁচাতে অস্থায়ী ক্যাম্পের তক্তার নিচে আশ্রয় নেয় বহু পুলিশ কর্মী। ক্যাম্পাস চত্বরের পাঁচিল ভেঙে, দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে উন্মত্ত জনতা। চালায় তাণ্ডব। পুলিশ লাঠি দিয়েই পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের মারধর করা হয়।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলকে নিশানা করতে বাসের ভুয়ো ছবি পোস্ট! চরম বিতর্কের মুখে সিপিএম]
এদিকে শুধু থানা নয়, পাশের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর-সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে ভয়ে লুকিয়ে পড়েন বহু পুলিশ কর্মী। তাতেও রেহাই মেলেনি। কাউন্সিলর-সহ সেই সমস্ত বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় কাউন্সিলরের দাদা দীপেশ সরকারকে। তিনি হাসপাতালে ভরতি। ভাঙচুর হয় দোকান, যাত্রী প্রতীক্ষালয়ও। সবমিলিয়ে কালিয়াগঞ্জে পরিস্থিতি ভয়াবহ।
পরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী, RAF এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। এডিজিরর নেতৃত্ব বিশাল পুলিশবাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভীত পুলিশ কর্মীদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তখন তাদের উন্মত্ত জনতা হিসেবে ভুল করেন আশ্রয়দাতা গৃহকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে আবার পুলিশকর্মীদের খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। এদিকে পরিস্থিতি বিস্তারিত জানতে চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিকে ফোন করে উদ্বিগ্ন রাজ্য়পাল সি ভি আনন্দ বোস।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির তলবে সাড়া, সাতসকালে হাজিরা অয়ন শীলের ছেলের বান্ধবী ইমনের]
বুধবারও কালিয়াগঞ্জের পরিস্থিতি থমথমে। দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় লোকের দেখা নেই। স্কুল খোলা থাকলেও উপস্থিতি নগন্য। একই পরিস্থিতি এলাকার সরকারি অফিসগুলিতেও। এদিন ধৃতদের আদালতে তোলা হবে। সেই সময় ফের একবার উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, “এই গুন্ডামির পরেও পুলিশ সংযত ছিল, গুলি চালায়নি। বামফ্রন্টের পুলিশ হলে গুলিতে মৃত্যুর মিছিল হত, যেমন হয়েছিল বারবার। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার চাই। যারা প্ররোচনা দিয়েছে, তাদেরকেও ধরা দরকার। ধর্ষণের মিথ্যা কথা রটানো, উত্তেজনা ছড়িয়ে এই হামলা কঠোর শাস্তিযোগ্য।”