shono
Advertisement

বেহালায় মা-ছেলের খুনি একাধিক? উধাও হয়ে যাওয়া চাবির গোছার খোঁজে পুলিশ

খুনিকে বাধা দেয় কিশোর, ঘুমন্ত অবস্থায় খুন মা, বেহালা জোড়া হত্যাকাণ্ডে নয়া তথ্য।
Posted: 09:11 AM Sep 09, 2021Updated: 07:45 PM Sep 09, 2021

অর্ণব আইচ: সামনে ছুরি হাতে খুনিকে দাঁড়াতে দেখেই তাকে বাধা দিয়েছিল ১৩ বছর বয়সের কিশোর। তমোজিৎ মণ্ডল নামে ওই ছেলেটির দেহে মিলেছে সেই ক্ষতচিহ্ন। যদিও গৃহবধূ সুস্মিতা মণ্ডলের দেহে বাধা দেওয়ার বিশেষ কোনও চিহ্ন মেলেনি। ময়নাতদন্তের পর পুলিশের হাতে এসেছে এই তথ্য। যেভাবে সুস্মিতার দেহটি বিছানায় পড়ে ছিল, তা থেকে পুলিশের ধারণা, ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে ও আঘাত করে খুন করা হয়েছে ওই মহিলাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিচার করার পর পুলিশ নিশ্চিত, খুনের পিছনে রয়েছে অতি পরিচিত ব্যক্তি। তবু বেহালার (Behala) পর্ণশ্রীর সেনপল্লিতে মণ্ডলদের ফ্ল্যাটে কারা কারা আসতেন, তা প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের কাছ থেকে জেনে তাঁদের তালিকা পুলিশ তৈরি করছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Advertisement

খুনির সংখ্যা দুই বা তারও বেশি, সেই সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। দুপুর দু’টো থেকে চারটে পর্যন্ত কে কোথায় ছিলেন, তা জানার জন্য প্রত্যেকের মোবাইলের কল লিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। সুস্মিতার মোবাইলের কল লিস্ট পরীক্ষা করে জানার চেষ্টা হচ্ছে, তিনি কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এখনও খুনের ‘মোটিভ’ ও খুনি আদৌ পেশাদার কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, পর্ণশ্রীতে মা ও ছেলেকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। খুনি কীভাবে সুস্মিতার ফ্ল্যাটে ঢুকল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সোমবার দুপুর দেড়টার মধ্যে বাড়ির মেন গেটে তালা পড়ে যায়। খুনি এতটাই পরিচিত, যে সুস্মিতা তাঁকে ব্যাগে করে চাবি নামিয়ে দেন অথবা নিচে এসে চাবি খুলে দেন। অথবা, খুনির সঙ্গে গেট ও ফ্ল্যাটের চাবি ছিল।

[আরও পড়ুন: ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া, ২৩ দিনে জমা পড়ল এক কোটির বেশি আবেদন পত্র]

ফ্ল্যাটের দরজা খোলা সম্পর্কে পুলিশের ধারণা, দুপুরে কোলাপসিবল গেটে তালা দেওয়া থাকলে তা খুলে দেওয়া হয়েছিল অথবা খুনির কাছে আগাম চাবি থাকলে সে খুলতে পেরেছিল। একই ধারণা ফ্ল্যাটের ইয়েল লকওয়ালা দরজার ক্ষেত্রেও। দেখা গিয়েছে, সুস্মিতার গলাকাটা দেহ ছিল একপাশে ফেরা। অর্থাৎ সুস্মিতা একপাশে ফিরে শুয়ে বা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকার সময়ই তাঁর গলা কাটা হয়, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। খুনিকে যদি সুস্মিতা দরজা খুলে দিয়েও থাকেন, তবুও তিনি এরপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই ক্ষেত্রে খুনি যে অতি পরিচিত, সেই সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো ঘুমন্ত অবস্থায় খুন বলেই পাশের ঘরে ছেলে অথবা প্রতিবেশীরা কোনও শব্দ পাননি। খুন যে আক্রোশ অথবা কোনও শোধ তুলতে, তার প্রমাণ সুস্মিতার দেহে আঘাতের চিহ্ন। গৃহবধূর মাথায় আঘাত করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতেই গলার নলি কেটে ফেলা হয়। এছাড়াও সুস্মিতার ঘাড় ও পিঠে রয়েছে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন। রীতিমতো আক্রোশ মেটাতেই এই আঘাতগুলি করা হয়েছে। মোট আঘাতের চিহ্ন কুড়িটি। সম্ভবত ঘুমন্ত অবস্থায় খুন বলেই বাধা দেওয়ার বিশেষ চিহ্ন সুস্মিতার দেহে পাওয়া যায়নি।

কিন্তু খুনিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিশোর তমোজিৎ। সেই আঘাতের চিহ্ন তার হাতে রয়েছে। খুনি সামনে থেকেই ছেলেটির গলা কেটে ফেলে। মোট আঘাতের চিহ্ন পাঁচ। খুনের সময় অনলাইন ক্লাস করছিল ছেলেটি। সম্ভবত তার কানে হেডফোন ছিল বলে পাশের ঘরে মাকে খুন করার কোনও শব্দ টের পায়নি। ময়নাতদন্তের পর পুলিশ জেনেছে, দুপুরের খাওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যে খুন হন মা ও ছেলে। যে অস্ত্রটি খুনি ব্যবহার করেছিল, সেটি ধারালো হলেও ভারী। সম্ভবত খুনের জন্য সেটি বাইরে থেকে কিনে আনা হয়। অবশ্য বাড়ির সব ছুরি ও বঁটি পরীক্ষা করার জন্য পুলিশ আটক করেছে। খুনের পর বেসিনে অস্ত্র ধোওয়ার পর খুনি সেটি নিয়ে যায়। প্রমাণ লোপাটের জন্য খুনি বাথরুমে গিয়ে স্নানও করে। পুলিশের মতে, মহিলা বা পরিবারের অতি পরিচিত হলেই তা সম্ভব। তবে বিকেল চারটের মধ্যে খুনের পর্ব সেরে খুনি চাবি দিয়েই গেটের তালা খুলে বেরিয়ে যায়। সেই চাবির গোছা এখনও নিখোঁজ।

মঙ্গলবার রাতে জেরার পর স্বামী তপন মণ্ডলকে লালবাজার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার ফের তাঁকে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাড়িতে গিয়েও তদন্ত চালান তাঁরা। সুস্মিতার স্বামী ব্যাংকের রিকভারি এজেন্ট তপন মণ্ডলের দাবি, তিনি সকাল থেকেই পেশার খাতিরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন। কোথায় কোথায় গিয়ে কাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, সেই জায়গাগুলিতে গিয়ে পুলিশ পরীক্ষা করছে। তপনের দাবি, দুপুর দু’টো থেকে চারটে পর্যন্ত তিনি রাস্তায় ছিলেন। ওই সময় তাঁর বিশেষ কোনও ফোন আসেনি। ওই সময় যে রাস্তাগুলিতে ছিলেন বলে তপনের দাবি, সেই রাস্তাগুলির সিসিটিভি ফুটেজ (CCTV Footage) পুলিশ জোগাড় করছে। সুস্মিতার মোবাইলে এমন কোনও তথ্য ও হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp) রয়েছে, তা পুলিশের হাতে যাক, এমনটা খুনি চায়নি। সম্ভবত সেই কারণেই খুনি মোবাইল লুঠ করে পালায়। যদিও ওই মহিলা হোয়াটসঅ্যাপে কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন কি না, সেই তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: West Bengal By Elections: ভোটের ফলের পর অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন মমতা! জানালেন নিজেই]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement