অর্ণব আইচ: ঘরের মধ্যে পড়ে ছিল ব্যক্তিটির দেহ। তাঁর গলা কাটা। মাথায় আঘাত। প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিল খুনের মামলা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েই চমকে যান পুলিশ আধিকারিকরা। এটি আদৌ খুনের ঘটনাই নয়। নিছক আত্মহত্যা।
খুনের অভিযোগ, তবু খুন নয়। এরকম একের পর এক ‘ভুয়ো খুন’-এর তদন্ত করতে গিয়েই নাকাল হতে হয় পুলিশকে। পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন মাসে ২৫টি খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে কলকাতায়। কিন্তু এর মধ্যে সাতটি খুনের অভিযোগ ঘিরেই দেখা দিয়েছে ধন্দ। তদন্ত শুরু হওয়ার পর এই ‘খুন’গুলো আদৌ খুন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশই।
সম্প্রতি অপরাধ দমন বৈঠকে লালবাজারের কর্তারাও এই খুনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখেন। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে যে ২৫টি খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার মধ্যে একটি অভিযোগ হয় দক্ষিণ কলকাতার চেতলা থানায়। যদিও তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে, একটি রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় রেললাইনের কাছ থেকে। তাই সেটি যে রেল পুলিশের আওতায়, তা নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়। তাই মামলাটি জিআরপিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
[বিস্তারিত পড়ুন: সাংসদের বিরুদ্ধে করা মামলা সরানোর আর্জি, ‘আদালত সরতে পারে না’, মন্তব্য হাই কোর্টের]
কিন্তু সাতটি ‘ভুয়ো খুন’ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যেমন, মার্চ মাসে বাঁশদ্রোণীর একটি বাড়ির ভিতর থেকে রামকৃষ্ণ নন্দী নামে এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলা কাটা ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন। খুনের অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু ময়নাতদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে যে, ওই ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় হতাশায় নিজের গলা কেটে ফেলেন। মধ্য কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলে ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। ঝাড়খণ্ড থেকে তাঁর পরিবারের লোকেরা এসে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা যায়, এটি খুনের ঘটনা নয়।
গত এপ্রিল মাসে দক্ষিণ কলকাতার কসবায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জেরে বৃদ্ধের এক মেয়ে অন্য মেয়ের বিরুদ্ধে বাবাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। খুনটি আসলে কে করেছেন, তা নিয়ে সন্দিহান পুলিশ। এপ্রিলেই কসবায় শম্পা হালদার নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ পুলিশ উদ্ধার করে। খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। যদিও গৃহবধূ আত্মঘাতীই হয়েছেন বলে সন্দেহ পুলিশের। গত মে মাসে মধ্য কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট এলাকায় মণ্ডপ বাঁধার সময় পড়ে গিয়ে বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
ওই মাসেই দক্ষিণ শহরতলির সরশুনায় এক মাদকাসক্ত যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। বাঁশদ্রোণীতে সৌরভ বিশ্বল নামে এক তরুণের ঝুলন্ত দেহ পুলিশ উদ্ধার করে। এই তিনটি মৃত্যুর ঘটনায়ই পরিবারের লোকেরা খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে ও তদন্তের পর পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয় যে, এগুলো খুনের ঘটনা নয়। তবে ‘ভুয়ো খুন’-এর ঘটনা হলেও সেগুলো খুনের ঘটনার মতোই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।