সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুহূর্তে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত দেশ! তুরস্ক (Turkey) ও সিরিয়ার (Syria) মানুষ তখন ঘুমন্ত। কেউ কেউ প্রাতঃভ্রমণে যাবেন বলে তৈরি হচ্ছেন, কেউ বা সবে মাত্র স্বাস্থ্যচর্চা শুরু করছেন। একটু পরেই সূর্য উঠবে, মিষ্টি ভোর হবে। রাত ডিঙিয়ে শুরু হবে মানুষের নতুন যাপন। কিন্তু স্থানীয় সময় ভোর চারটে নাগাদ কেঁপে উঠল পায়ের তলার মাটি। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল অসংখ্য বাড়ি। নিমেষে মাটিতে মিশে গেল বহুতল। চারদিকে শুধু ধ্বংস্তূপ। তার নিচে চাপা পড়া মানুষ, মৃত্যু, রক্ত আর বুক ফাটা কান্না।
রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮। প্রায় ৪৫ সেকেন্ড ধরে চলে মারণ কম্পন। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তী পাঁচ ঘণ্টায় ২২ বার ‘আফটার শকে’ চলতে থাকে ধ্বংসলীলা। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভের মতে, প্রথম আফটার শকের কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৭। দ্বিতীয় কম্পনে সবচেয়ে বেশি কেঁপে ওঠে লেবানন, সিরিয়া এবং সাইপ্রাসের বিভিন্ন অংশ। ভূমিকম্প অনুভূত হয় ইজিপ্টেও।
[আরও পড়ুন: উড়ান ধরতে না পেরে বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ, গ্রেপ্তার মহিলা যাত্রী]
তবে কম্পনের উৎসস্থল ছিল দক্ষিণ তুরস্ক। গাজিয়ানতেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে। স্বভাবতই তুরস্কে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবেচেয়ে বেশি। কোনও কোনও পরিবারের সকল সদস্যই মৃত। আত্মীয় বিয়োগে কাঁদবার মানুষটিও জীবিত নেই। কোনও পরিবার একজনই হয়তো জীবিত। তিনিও ভারী কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্প মৃতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৯১২ জন তুরস্কের নাগরিক, ৩২৬ জন সিরিয়ার বাসিন্দা। দুই দেশে গুরুতর আহতের সংখ্যা অসংখ্য। তুরস্কে সংখ্যাটা হাজারের কাছাকাছি। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে এখনও সব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি। ফলে ভেতরে বহু মানুষ আটকে রয়েছেন বলে ধারণা দুই দেশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর।
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে কাজ শুরু নতুন ৫ বিচারপতির, শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধান বিচারপতি]
এই ঘটনা তুরস্কবাসীদের ১৯৩৯ সালের ভয়ংকর ভূমিকম্পের স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে। সেবার ৩০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। যদিও গত ২৫ বছরে বার সাতেক ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্কে। তবে এবারের ভূমিকম্প নারকীয়, বলছেন স্থানীয়রা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এর্ডোগান টুইট করেছেন, “ভূমিকম্পের ফলে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে দেশের। দেশবাসীদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার কর্মীরা সতর্ক রয়েছেন। উদ্ধারকাজে কোনও ত্রুটি নেই।”
তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পের শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। টুইট করেছেন, ‘‘তুরস্কে ভূমিকম্পে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। শোকপ্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সহানুভূতি রইল। আশা রাখি, আহতরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’’ এর মধ্যেই দক্ষিণ তুরস্কে নতুন করে ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যার ফলে গ্যাসের লাইনে বিস্ফোরণে আগুন ধরেছে। এবারে রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। নতুন করে কতখানি ক্ষতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।