সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: পুকুর খুঁড়তে গিয়ে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হল প্রায় ৯০০ বছরের পুরনো দুষ্প্রাপ্য কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি। ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে নদিয়ার (Nadia) নাকাশিপাড়া থানা এলাকার গাছাবেজপাড়া এলাকায়। এদিন সেগুলি নাকাশিপাড়া থানার তরফ থেকে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাস্টের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল বিপ্লব রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উদ্ধার হওয়া তিনটি বিষ্ণুমূর্তির আনুমানিক বাজারমূল্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮ থেকে ২০ কোটি টাকারও বেশি বলে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত ১৪ মার্চ গাছাবেজপাড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা জনৈক পুসি সর্দারের বাড়িতে একটি পুকুর খনন করতে গিয়ে মাটির নিচ থেকে তিনটি পাথরের প্রাচীন বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার হয়। এরপর উৎসাহী স্থানীয় মানুষজনের পরামর্শে পুসি সর্দারের পরিবারের সদস্যরা মূর্তিগুলি নিজেদের বাড়িতে স্থাপন করে পূজার্চনা শুরু করেন। যা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভীড় জমায় সর্দার বাড়িতে। খবর পেয়ে মূর্তিগুলি নিজেদের হেফাজতে নেয় নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ। সেগুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকে মূর্তিগুলি থানাতেই ছিল। রবিবার দুপুরে নিয়মমাফিক মূর্তিগুলি ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাস্টের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের ডিএনটি (ডিএসপি) এম রহমান-সহ নাকাশিপাড়া থানার আইসি-সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা।
[আরও পড়ুন: চোরাপথে পদ্মার ইলিশ পাচারের ছক! ২৯০ কেজি মাছ-সহ বিএসএফের জালে ১]
মূর্তিগুলি আনুমানিক হাজার বছরের প্রাচীন বা ঐতিহাসিকভাবে পাল যুগের শেষদিকের বলে মনে করা হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে ট্রাস্টের এজি বিপ্লব রায় জানান, “প্রাথমিকভাবে উদ্ধার হওয়া মূর্তিগুলি আনুমানিক হাজার বছর প্রাচীন পাল বংশের রাজাদের রাজত্বকালের শেষের দিকের হতে পারে। পাশাপাশি মূর্তিগুলি বহু মূল্যবান কষ্টিপাথরের তৈরি। ভারতীয় মুদ্রায় যার আনুমানিক বাজার মূল্য কমপক্ষে ৮ থেকে ২০ কোটি টাকারও বেশি। প্রাথমিকভাবে মূর্তিগুলি মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হবে। এবং পরবর্তী সময়ে এগুলি প্রদর্শন করার পাশাপাশি ইতিহাসবিদদের গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে বিচার করতে গেলে মূর্তিগুলির নির্মাণশৈলীতে হিন্দু এবং বৌদ্ধধর্মের ছাপ মিলেছে বলেও জানান তিনি। যা একেবারেই নজিরবিহীন ঘটনা।” মূর্তিগুলি থেকে প্রাচীন পালবংশের ইতিহাস, তৎকালীন সংস্কৃতি, ধর্মসংস্কার, জীবনশৈলী সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য উন্মোচিত হবে, আশা ইতিহাসবিদদের।