স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সংসদের নতুন ভবন উদ্বোধন। অথচ সেখানে ব্রাত্য সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের অধিকারী রাষ্ট্রপতি। যিনি আবার সংসদের অভিভাবক বা সর্বময় কর্তাও। কেন্দ্রের এই বঞ্চনা, উপেক্ষার প্রতিবাদে সরব হলেন বিরোধীরা। শুরু হয়ে গেল ২৮ মে সাভারকরের জন্মদিবসে সংসদ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বয়কট করার প্রাথমিক পরিকল্পনাও।
প্রধানমন্ত্রী নয়, পদমর্যাদা অনুযায়ী নব সংসদ ভবনের উদ্বোধন করার অধিকারী রাষ্ট্রপতি। রবিবারই দাবি তুলেছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। এরপর একে একে সেই সুরে বক্তব্য রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস, বাম-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল। সোমবার সেই বক্তব্যকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। একের পর এক চারটি টুইটে তিনি বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারকে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ও আরএসএস রাষ্ট্রপতি পদকে একটি নাম কা ওয়াস্তে এক স্মারকে পরিণত করতে চাইছে। উদাহরণস্বরূপ সংসদ ভবনের শিলান্যাসের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন খাড়গে। তাঁর বক্তব্য, শুধুমাত্র ভোটের অছিলায় দলিত ও জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে মোদি সরকার (Modi Govt)।
[আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন প্রেমিকা, নতুন করে সংসার পাতছেন আমাজন কর্ণধার বেজস]
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধীদের এই বক্তব্য যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। ভারতীয় সংবিধানের ৭৯ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে দেশের সংসদ গঠিত হয়েছে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যসভা এবং লোকসভা নিয়ে। যেহেতু রাষ্ট্রপতি সংসদের শীর্ষাসনে, তাই নয়া ভবন উদ্বোধন হওয়া উচিত তাঁর হাতেই। এই প্রসঙ্গে এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংসদ সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন রাজ্যসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা। কংগ্রেস নেতা মনে করিয়ে দেন, সংসদের যে কোনও অধিবেশন ডাকেন রাষ্ট্রপতি। প্রতি পর্বে অধিবেশন দুই কক্ষে সভাপতিত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত, রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান ও লোকসভায় স্পিকার অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করেন। কিন্তু সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি।
বছরের শুরুতে বাজেট অধিবেশনের আগে যে যৌথ অধিবেশন হয়, তার সূচনাও হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণের মাধ্যমে। সেই অনুষ্ঠান মঞ্চে তাঁর দু’দিকে থাকেন রাজ্যসভা চেয়ারম্যান ও লোকসভা স্পিকার। প্রথম সারিতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর স্থান হয় মঞ্চের নিচে, অন্য সাংসদদের সঙ্গেই। একটি অংশের দাবি, আদতে দলিত ও জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ আসনে বসালেও এখনও তাঁদের কাছে যেতে অনীহা রয়েছে আরএসএস-বিজেপির। তাই শুভ সূচনা তাঁদের বদলে করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে। এই প্রসঙ্গে আনন্দ শর্মার বক্তব্য, “আসলে ভবনের দেওয়ালে নিজের নাম দেখতে চান মোদি। তাই রাষ্ট্রপতির বদলে নিজেই শিলান্যাস ও এখন উদ্বোধন করতে চলেছেন।” একটি সূত্রের খবর, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে এদিন বিহার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বৈঠকেও উঠেছে এই প্রসঙ্গ।
[আরও পড়ুন: অনুষ্ঠান মঞ্চে হঠাৎ লোডশেডিং! ‘অন্ধকারে’ই গান গাইলেন ইমন, দেখুন ভিডিও]
সংসদ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বয়কটের আহ্বান করে খাড়গে ও নীতীশ অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও ঠিক হয়েছে। দেখার শুধু আরও একটি বিষয়ে জোটবদ্ধ হয়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির দিকে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারেন বিরোধী নেতারা।