সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “ভারত ও চিনের উচিত একে অপরের আকাঙ্খা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে পরস্পরের প্রতি আরও সংযত হওয়া৷” জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে এক বৈঠকে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ভিয়েতনাম সফর শেষ রবিবার চিনের হুয়াংঝৌতে জি-২০ সামিটে যোগ দিতে উড়ে গিয়েছেন মোদি৷ নয়াদিল্লির সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্কের ডামাডোলের মধ্যে মোদির এই বার্তা চিনকে গঠনমূলক সম্পর্কের বার্তা দিল বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মহল৷ এদিন জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গেও একান্তে বৈঠক সেরে নেন মোদি৷
এদিন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চিনা প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, একে অপরের আকাঙ্খার প্রতি সম্মান দেখানোই এখন দুই দেশের কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত৷” মোদি আরও বলেছেন, “এশিয়া ও সমগ্র বিশ্বে শান্তি অটুট রাখতে জন্য ভারত ও চিনের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা দরকার৷” একই বার্তা দিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্টও৷ তিনি জানিয়েছেন, একে অপরের উদ্বেগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে৷ কোনও বিরোধিতার সূত্রপাত হলে গঠনমূলক পদ্ধতিতে তার সমাধান করতে হবে৷
সম্প্রতি কিরগিজস্তানে চিনা দূতাবাসে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মোদি৷ ভারত, রাশিয়া, চিনকে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷ ৪৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর তৈরির বিষয়ে উদ্বেগ চেপে রাখেননি মোদি৷ প্রায় অধঘন্টা বৈঠক হয় দু’জনের মধ্যে৷ গত তিন মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বৈঠকে মিলিত হলেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা৷ গত জুন মাসে তাসখন্দে অনুষ্ঠিত শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও সামিটে দু’জনের মধ্যে বৈঠক হয়৷
জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে এদিন ব্রিকস শীর্ষনেতাদের সঙ্গেও একপ্রস্থ বৈঠক সেরে নেন প্রধানমন্ত্রী৷ সেই বৈঠকেও দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ রুখতে সদস্য দেশগুলিকে একত্র হওয়ার ডাক দেন তিনি৷ বলেন, সন্ত্রাসে বিনিয়োগকারী ও সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থকদের একঘরে করে দিতে হবে৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, কোনও না কোনও বৃহৎ শক্তি জঙ্গিদের পুঁজির জোগান দেয়৷ কারণ, জঙ্গিদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক বা অস্ত্র কারখানা নেই৷ অন্য কেউ তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়৷ গোটা বক্তব্যে একবারও চিন বা পাকিস্তানের নাম না করলেও প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ যে তাদের দিকেই, সে কথা স্বীকার করছেন বিদেশমন্ত্রকের কর্তারাও৷
একাধিক ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক এখন নরমে-গরমে৷ কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করার বিরোধী চিন৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু ক্লাবেও নয়াদিল্লির প্রবেশ রুখে দিয়েছে বেজিং৷ পাল্টা চালে কিস্তিমাত করেছে সাউথ ব্লকও৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ভিয়েতনামকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে মোদি সরকার। উপকূলে টহল দেওয়ার দ্রুতগতির নৌকো কিনতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভিয়েতনাম। জানানো হয়েছে, আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে ভারত ও ভিয়েতনাম হাত মিলিয়ে চলবে। দক্ষিণ-চিন সাগরে চিনের দাদাগিরি রুখতে আমেরিকার সঙ্গে জোট করার বার্তাও দিয়ে রেখেছে নয়াদিল্লি৷ আমেরিকার সঙ্গে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আদানপ্রদান চুক্তি করায় উদ্বেগ চেপে রাখতে পারেনি বেজিং৷
The post সন্ত্রাসদমনে ভারত-চিন-রাশিয়াকে এককাট্টা হওয়ার ডাক মোদির appeared first on Sangbad Pratidin.