তপন বকসি, মুম্বই: প্রিয়া দত্ত কথা দিয়েছিলেন তিনি একান্ত আলোচনায় মুখোমুখি হবেন। বলেছিলেন, আপনি আমার গাড়িতে আমার সঙ্গে সওয়ার হয়ে যান, কথা হবে। পূর্ব বান্দ্রার খেড়ওয়াড়ির তস্য বস্তির গলিঘুঁজিতে ভোটপ্রচার সেরে উঠে বসলেন গাড়িতে। গাড়ি চলার সঙ্গে শুরু করে দিলেন সাক্ষাৎকার দিতে।
গত বছর বিজেপির পুনম মহাজন ছিলেন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী। এবারেও তাই। এবারেও কতটা শক্তিশালী মনে হচ্ছে বিপক্ষকে? আপনার অঞ্চলের প্রায় সবাই তো আপনাকে চেনে দেখলাম? জনপ্রিয়তাও বেশ ভাল। তবুও?
প্রিয়া: আমি আফসোসে বিশ্বাসী নই। (হেসে) আমি মনে করি যিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, তিনি যিনি-ই হোন না কেন, তিনি বেশ শক্তিশালী। বিরোধীদের হালকাভাবে নেওয়ার কোনও মানে নেই। আর মানুষ যাঁকে পছন্দ করবেন, সেই সিদ্ধান্ত আমি তাঁদের কাছেই ছেড়ে দিতে চাই। আমি যদি তাঁদের জন্য সত্যিই কিছু করে থাকি, তাঁরা আমাকে বেছে নেবেন। যদি তা না করি, আমাকে নেবেন না।
সঞ্জয় নিরুপম, যিনি শিবসেনায় থাকতে আপনাদের পারিবারিক ‘শত্রু’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন, পরে তিনিই কংগ্রেসে এসেছেন। ওঁর সঙ্গে একই দলে চলতে গিয়ে অসুবিধা হয় না?
প্রিয়া: তা কেন হবে, আমি কোনওদিনই রাজনীতির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিশ্বাস করি না। এসবের থেকে দূরে রাখি নিজেকে। আমাদের কংগ্রেস পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব যা ঠিক করেন, সেটাকেই মেনে চলা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। সঞ্জয় নিরুপমকে নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই।
[ আরও পড়ুন: গেরুয়া শিবিরের হয়ে ভোটপ্রচারে দীপিকা-রণবীর!]
আপনি যে এবার লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে চাননি, সেকথা তো রাহুল গান্ধীও জানতেন?
প্রিয়া: জানতেন। এটাও জানতেন যে কেন আমি ভোটে দাঁড়াতে চাইছিলাম না। কিন্তু দলের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারিনি।
এবারের ২০১৯-এর ভোটে দাঁড়াবেন না বলেই দিয়েছিলেন। কেন? গতবার (২০১৪) ভোটে পুনম মহাজনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন বলে?
প্রিয়া: সাধারণভাবে বাইরে থেকে এটাই ধারণা হতে পারে। কিন্তু সেজন্য আদৌ নয়। আমার দুই ছেলের এমন একটা বয়স, যখন মা’র সান্নিধ্য ভীষণভাবে ওদের দরকার। তিন- চার বছর পর তো উচ্চশিক্ষার জন্য কোথায় চলে যাবে আমরা জানি না। ওদেরকে এরকমভাবে হয়তো এত কাছে পাব না। তাই ওদের আর আমার দু’দিক থেকেই কাছে থাকাটা জরুরি মনে হয়েছিল।
আপনার ছেলেরা কি ঠিক বুঝতে পারেন আপনার রাজনৈতিক কাজের ধারা?
প্রিয়া: আগে পারত না। এখন অনেকটা বোঝে। (হাসি) কেন না আমি বুঝিয়েছি। কিছুটা আমার স্বামী বুঝিয়েছেন, তাই।
আর স্বামী কী বলছেন ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে?
প্রিয়া: বলেছিলেন মনস্থির করে নিয়ে কাজ করো। তাতে যা তোমার বিবেক বলবে সেভাবেই এগিয়ে যেও।
ভাইয়াকে প্রচারে আনবেন না?
প্রিয়া: ইচ্ছা আছে ভোটের ঠিক আগে আগে কয়েক দিন যদি আনা যায়। ওরও তো শুটিং থাকে।
[ আরও পড়ুন: ভোটের আগে রাজনীতি থেকে রামগোপাল ভার্মা, খোলা আড্ডায় উর্মিলা]
বাবার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে তাঁর উত্তরাধিকার ধরে রাখার দায়িত্ব নিতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি নিশ্চয়?
প্রিয়া: সত্যি কথা বলতে কী খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তার কারণ বাবা থাকতে ভাইবোনের মধ্যে আমি বাবার সঙ্গে বেশি থেকেছি তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যকলাপে।
বাবার মৃত্যুর পর আপনি কংগ্রেসের হয়ে লড়াইয়ের পারিবারিক ধারা ধরে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কেমন সেই অভিজ্ঞতা?
প্রিয়া: ২০০৫-এ যখন আমাকে বাবার কেন্দ্র থেকে (তখন উত্তর-পশ্চিম। এখন উত্তর-মধ্য) ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি তখন চার মাসের প্রেগন্যান্ট। ওই অবস্থায় প্রত্যেকটা স্পটে গিয়ে প্রচার করতে গিয়ে আমার বেশ ধকল গিয়েছিল (হাসি)। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় সেই কষ্টকে কষ্ট বলে মনেই হয়নি। এটা বাবার শিক্ষা।
The post ‘প্রতিপক্ষকে দুর্বল মনে করি না’, একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট প্রিয়া দত্ত appeared first on Sangbad Pratidin.