সন্দীপ্তা ভঞ্জ: আকাশে-বাতাসে আগমনীর সুর। শরতের কাশবন হয়তো ফিলাডেলফিয়া কিংবা ডেলাওয়্যারে নেই, তবে সেখানেও কিন্তু কলকাতার মতোই 'আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির'। কলকাতার মতো সেখানেও শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। পুজোর তিলোত্তমা থেকে দূরে থেকেও যেন মনের টানেই অনেকটা কাছে ফিলাডেলফিয়া! শারদোৎসবের(Probashe Durga Puja 2024) আয়োজন কেমন চলছে? খোঁজ নিল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
'ঘরোয়া' নামক একটি ক্লাব বিগত আট বছর ধরে দূর্গোৎসবের আয়োজন করে চলেছে। তবে এই ক্লাব নবীন হলেও আয়োজনের কলেবর নেহাত কম নয়! এবার নয় বছরে পড়ছে ফিলাডেলফিয়ার ঘরোয়ার পুজো। তবে ইতিমধ্যেই পুজো কমিটির সংখ্যা সদস্য ছাড়িয়ে গিয়েছে ১ হাজার। আর তাঁরাই হাতে হাতে এখানে প্রতিমাসজ্জা থেকে শুরু করে মন্ডপসজ্জা সবটা সারেন। উমা আগমনের মাসখানেক আগে থেকেই চলতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। খুদে থেকে বিভিন্ন বয়সের লোকজন অংশ নেন সেই অনুষ্ঠানে। তবে বড় চমক 'শিল্পী আকর্ষণ'। কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, হরিহরণ থেকে বহু তাবড় শিল্পী বিগত বছরগুলিতে ঘরোয়ার দুর্গোৎসবের অনুষ্ঠান আসর মাতিয়েছেন। এবারের বিশেষ আকর্ষণ যেমন বাবুল সুপ্রিয় এবং সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ যুগলবন্দি।
কবজি ডুবিয়ে ভূরিভোজ থেকে আড্ডা, নাচগানের আসর এখানকার দুর্গোৎসবে সব আয়োজনই থাকে। 'ঘরোয়া' ক্লাবের পুজো কমিটির কালচারাল সেক্রেটারি সুদীপ্ত দোলুই সূদুর ফিলাডেলফিয়া থেকে জানালেন, "আসলে বিদেশ-বিভুঁইয়ে এসে বাঙালিরা সবসময়েই আন্তরিকতা খোঁজেন। পুজো বা যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে পরিবার, স্বজনদের ভীষণ মিস করেন। আর সেখানেই আমাদের ঘরোয়ার সার্থকতা। আমরা একসূত্রে সকলকে বেঁধে রাখায় বিশ্বাসী। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতীপুজো হোক বা দোল সবরকমের উৎসব-অনুষ্ঠান আমরা এখানে একসঙ্গে পালন করি।" বিদেশের অনেক পুজো সাধারাণত সপ্তাহের ছুটিতেই হয়। কারণ ছুটি পাওয়া যায় না।
এবছরের পুজো প্রস্তুতি কেমন? সুদীপ্ত দোলুই জানালেন, "মাসখানেক আগে থেকেই প্রস্তুতি চলছে। এমনকী যাঁরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তাঁরা আগস্ট থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। আর সেপ্টেম্বর মাসের পয়লা সপ্তাহেই ভূরিভোজের মেন্যু একদম ফাইনাল।" বাঙালিরা যেমন আড্ডাবাজ, তেমনই খাদ্যরসিক। কলকাতা থেকে দূরে থেকেও কবজি ডুবিয়ে রসাস্বাদনের সুযোগ কী আর হাতছাড়া করা যায়! এবারে ঘরোয়ার শারদোৎসব স্পেশাল মেন্যুতে কী কী রয়েছে? লম্বা ফিরিস্তি দিলেন কমিটির সদস্য। প্রথমবার এখানে ৩ দিন পুজো পালিত হবে। তার মধ্যেই দুদিনই (৫ অক্টোবর) এবং রবিবার (৬ অক্টোবর) জম্পেশ মেন্যু! প্রাতঃরাশে থাকছে মোচার চপ, কড়াইশুঁটির কচুরি, আলুরদম, ভেজ চপের মতো পদ। অন্যদিকে মধ্যাহ্নভোজের তালিকায় একদিন খিচুড়ি ভোগের সঙ্গে লাবড়া, চাটনি, কাঁচাগোল্লা, নলেনগুড়ের পায়েস থাকছে। কারণ বাঙালির দুর্গোৎসবে ভোগ মাস্ট! আরেকদিন থাকবে বাসমতি চালের ভাত, তোপসে ফ্রাইস গন্ধরাজ রুইয়ের মতো নানা পদ। নৈশভোজেও এলাহি সব মেন্যু।
ঘরোয়া ক্লাব আয়োজিত সরস্বতীপুজোয় গিয়ে আন্তরিকতা মন ছুঁয়ে গিয়েছিল ফিলাডেলফিয়া নিবাসী রুচিরা বাগচীর। তাই এই প্রথমবার ঘরোয়ার পুজোয় যোগ দেবেন। অতঃপর কলকাতাকে মনেপ্রাণে মিস করলেও খুব উচ্ছ্বসিতও বটে তিনি। জানালেন, তাঁর দুই খুদে সন্তানও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে এখান থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত ডেলাওয়্যারেও দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আরেক বাঙালি কমিউনিটি ক্লাব। যার নাম 'উড়ান'। সেখানেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে ভূরিভোজ সবকিছুর আয়োজন থাকে বলে জানালেন রুচিরা। সেই ক্লাবে অবশ্য এবার তার পরের সপ্তাহান্তে ১২ অক্টোবর পুজো উদযাপন হবে। সেই ক্লাবের সদস্যরাও হাতে হাতে মন্ডপসজ্জার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। উড়ান কিংবা ঘরোয়ার দুর্গোৎসব, বিদেশে থাকলেও প্রতিটি নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন হয় এখানে। চণ্ডীপাঠ, অঞ্জলি, সন্ধিপুজো, থেকে মায়ের দর্পণ বিসর্জন, সিঁদুর খেলা কিছুই বাদ যায় না।