সুমনা আদক: সময়টা ১৯৬৩, ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকার তুষারকান্তি ঘোষ মহাশয়ের হাত ধরে ‘উমা’ পাড়ি দিয়েছিলেন টেমসের (Thames) পাড়ে ক্যামেডেনের মাটিতে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি পর্ব। দেখতে দেখতে ৫৯ শরৎ পেরিয়ে ‘সুইস স্কটিস লাইব্রেরির’ অলিন্দে এবছর ষাটতম দুর্গোৎসবের মাতৃপ্রতিমা সেজে উঠবে আটপৌরে সাবেকিয়ানায়। লন্ডনের দুর্গাপুজোর (Probashe Durga Puja) ইতিহাসে ‘ক্যামডেন দুর্গোৎসব’কে প্রাচীন নিদর্শন বললেও কোনও ভুল হবে না।
একসময় অতিমারীর কালো ছায়ায় ঢাকা পড়া গোটা ইউরোপীয় (Europian) দুর্গোৎসব কমিটি আরেকবার নতুন করে সেজে উঠতে সকলে এক হয়েছিল এই পুজোর মাতৃ আরাধনায়। ছোট-বড়ো মিলিয়ে এদেশের চৌষট্টি পুজোর অধিকাংশই হল উইকেন্ড দুর্গাপুজো, তবুও সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে বাঙালি রীতি, পঞ্জিকা মেনে মিত্তলদের পুজোটা আজও নিজস্ব বৈচিত্র্যে অমলিন। প্রতিবারের মতো খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু করে ষষ্ঠী থেকে দশমী – এখানকার পুজোর পাঁচদিন হবে বেশ জমজমাট। এখানে এলে মায়ের বোধন, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, সিঁদুরখেলা – সবই মনে করায় ফেলে আসা কলকাতার (Kolkata) দিনগুলোর কথা। আসলে কর্মসূত্রে দেশ ছাড়লেও মনেপ্রাণে সকলে কিন্তু একেবারে খাঁটি বাঙালি। এখানকার পুজো স্পেশাল খাওয়াদাওয়া (Puja Special Food) বলতে ঝালমুড়ি দিয়ে শুরু হয়ে পুঁটিরাম, দিলখোশ, বসন্ত কেবিন, কফি হাউসের আড্ডার সঙ্গে বাঙালি-অবাঙালি মিলিয়ে মিশিয়ে সারা ভারতের একাধিক খাবারের পসড়া থাকবে প্রত্যেক ফুড স্টল গুলোতে।
[আরও পড়ুন: ১২৮ বছর পরে অলিম্পিকে ফের ক্রিকেট, চলতি সপ্তাহেই জানিয়ে দেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত]
এবছর ক্যামেডেনের দুর্গোৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হলো ‘দুগ্গা দুগ্গা’। অর্থাৎ দুর্গাপুজোর সামগ্রী দিয়ে সাজানো থাকবে সমস্ত পুজো মণ্ডপ; দুর্গা কখনও কিশোরী, কখনও রমণী। আবার বিদায়বেলায় তাঁর নাম নিয়ে যাত্রা করলে আসন্ন বিপদ যায় কেটে। আজও অনেক বাঙালির ঘরে এমন পৌরাণিক বিশ্বাসগুলোই শিল্পেরচিহ্নরূপে ছত্রে ছত্রে স্থান পেয়েছে মণ্ডপের আনাচে-কানাচে। শুধু তাই নয়, ক্যামডেন পুজো উদ্যোক্তারা পাবলিশ করেছে তাদের ‘থিম সং’, যা আরেকটা বিশেষ আকর্ষণ।
ক্যামেডেন দুর্গাপুজো বিশ্বের একাধিক মিডিয়ার নজর টানে প্রতিবার, মিত্তল পরিবারের সদস্যরা সপরিবারে হাজির থাকেন মায়ের আগমনে। এছাড়া প্রত্যেক দিনের সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে নৃত্য-গীতি আলেখ্য, বর্ষা আসে বসন্ত, আর সপ্তকের সুরের শেষে ঘোষিত হবে শারদ সুন্দরীর সম্মান। এছাড়া সিরাজদৌল্লা নাটক মাতিয়ে রাখবে সপ্তমীর সন্ধ্যাকে, সবশেষে মহিষাসুরমর্দিনীর সুরের ঝংকারে স্কটিশ লাইব্রেরির অন্দরমহল তখন হবে আলো-আঁধারির জীবন্ত এক মায়ানগরী, নীলাম্বরী, অসুরনাশিনী, রূদ্ররূপী, সিংহবাহিনী মা দুর্গা আসবেন অশুভকে নাশ করতে।
[আরও পড়ুন: বাড়ির উঠোনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশাল কুমির! সাতসকালে মূর্তিমান আতঙ্ক কালনায়]
প্রেসিডেন্ট ডক্টর আনন্দ গুপ্ত জানিয়েছেন এবারের ৬০ তম বর্ষপূর্তির আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ – ট্রাম্পেল পিয়ার থেকে জাহাজে করে প্রতিমা নিয়ে টেমসের উপরে রিভার কার্নিভাল (River Carnival) সঙ্গে মায়ের বিদায় বেলায় বরণ করে সিঁদুরখেলা। সবমিলিয়ে, একেবারে নির্ভেজাল পুজোর আনন্দে ভরপুর ক্যামেডেন প্রাঙ্গণ, রিভার কার্নিভাল বাঙালির মনে রেড রোডের আভাসটা খানিকটা হলেও মেটাবে, এতেই খুশি সকলে। লন্ডনে ক্যামেডেন দুর্গোৎসব হতে চলেছে জমজমাট।