সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেশার কারণে শিকড়ের টানকে পিছনে ফেলে বহু দূরে তাঁরা। দেশ ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইকে করতে হয়েছে আপন। কিন্তু পুজো এলেই মন যে বড় উদাস হয়ে যায়। কাশফুল, উমার আবাহন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা ছেড়ে এত দূরে মন যেন হু হু করে। মনে হয় সবই ফাঁকা ফাঁকা। সেই আক্ষেপ কাটাতেই বিদেশের মাটিতেই উমা আরাধনার সূচনা। এডিনবরার বাঙালি তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সেই পুজোই এবার পা দিল দশম বর্ষে।
সময়টা হবে ২০১৪। বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমানো কয়েকজন বাঙালি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ আড্ডা দিচ্ছিলেন। কফিতে গলা ভেজানোর ফাঁকে দুর্গাপুজো নিয়েই চলছিল কথাবার্তা। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এডিনবরাতেও শুরু হবে পুজো। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে দশ বছর। এখনও উদ্দীপনায় কোনও ভাঁটা নেই।
[আরও পড়ুন: মেট্রোয় জনজোয়ার! যাত্রীর নিরিখে গত বছরের ষষ্ঠীর রেকর্ড ভাঙল তৃতীয়া]
এডিনবরা দুর্গোৎসবের আয়োজক স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলিস আর্টস অ্যান্ড সাংস্কৃতিক হেরিটেজ। প্রথম চার বছর শহরের একমাত্র হিন্দু মন্দিরে পুজোর (Durga Puja 2023) আয়োজন করা হয়। আমেরিকার জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু রিলিজিয়াস স্টাডিজের প্রধান পণ্ডিত ব্রজবিহারী শরন ছিলেন পুরোহিত। দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় শহরের কমিউনিটি হলে পুজো আয়োজনের সিদ্ধান্ত। মাঝে কোভিড আবহে ২০২০ সালে পুজো হয় ভারচুয়াল। ২০২১ সালে কড়া করোনাবিধি মেনে পুজোর আয়োজন। গতবার পুজো হয় সেন্ট কাথবার্থ চার্চ কমিউনিটি হলে। এবার পুজো হচ্ছে ক্র্যামোন্ড কার্ক হলে। পৌরহিত্য করবেন বাঙালি কমিউনিটির অন্যতম সদস্য সুমনা সিনহা এবং এডিনবরার চিকিৎসক ডাঃ গৌরব চৌধুরী।
বিদেশের পুজোয় সাধারণত তিথি মেনে পুজোর চল নেই। তবে এডিনবরার পুজো এবিষয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। তিথি মেনে হয় বোধন থেকে নবপত্রিকা স্নান, সন্ধিপুজো, কুমারী পুজো থেকে দধিকর্মার আয়োজন সবই। দশমীতে ধুনুচি নাচ এবং সিঁদুরখেলার আয়োজনও হয়। পুজোপাঠের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। নাচ, গান, আবৃত্তি থেকে ফ্যাশন শো বাদ যায় না কিছুই। এছাড়া উৎসব প্রাঙ্গণে থাকে আড্ডা জোন, রকমারি স্টল, ফটোবুথ, আর্ট গ্যালারি। পুজোয় খাওয়াদাওয়া হবে না, তা তো ভাবাই যায় না। তাই দেশ বিদেশের নানা পদে খাবার নিয়ে ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজনও করা হয়। ফুড ফেস্টিভ্যাল থেকে সংগৃহীত অর্থ ম্যাকমিলান ক্যানসার সাপোর্ট চ্যারিটিতে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বলাই যায় উমা আবাহনে এক্কেবারে সাজ সাজ রব এডিনবরায়।