সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘গাঙুর হয়েছে কখনও কাবেরী/কখনও বা মিসিসিপি’…কল্পসুরে এই সঙ্গীত তো আমরা কবেই শুনেছি। ঠিক সেভাবেই এবছরের শারদোৎসবে মিলে যাচ্ছে গঙ্গা আর টেমস! শস্য-শ্যামলা, নদীমাতৃক বাংলার স্নিগ্ধতা বিলেতের মাটিতে নেই ঠিকই, কিন্তু উমা আগমনের খুশিতে কি আর প্রকৃতি বাধা হতে পারে? মোটেই না। তাই তো লন্ডন শারদ উৎসবে এবার একটুকরো বাংলাই উঠে আসছে। আগামী ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর – ষষ্ঠী থেকে দশমী, এই পাঁচদিন গ্রিনফোর্ড হলে জমজমাট শারদোৎসবের (Durga Puja) আয়োজন। পুজোর প্রতিটি নিয়মে একেবারে খাঁটি বাংলার ছোঁয়া।
১৫ তম বর্ষে এবার পা রাখছে লন্ডন শারদ উৎসব (London Sharad Utsav)। ইউবি সিক্স, নাইন কিউএন-এর গ্রিনফোর্ড হলে এবার পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত তা হতো ইলিংয়ে (Ealing)। এই স্থানবদলে আয়োজন একটু বেশি। চন্দননগরের বিখ্যাত আলো, টেরাকোটার মণ্ডপ, টেমসে নবপত্রিকা স্নান, ঢাকের লড়াই-ধুনুচি নাচ, ভোগ – কী নেই লন্ডন শারদ উৎসবে? এবারের আকর্ষণ ভুরি ভুরি।
চন্দননগরের বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো আর তার নজরকাড়া আলোর কথা কে না জানে? এবার লন্ডনের দুর্গাপুজোতেও সেই আলোকসজ্জা (Light)। দেবীর আগমনকে স্বাগত জানাতে থাকছে চন্দননগরের আলো। দিন কয়েকের জন্য সপরিবার উমা আসে বাপেরবাড়ি। তার জন্য আলাদা গৃহ গড়ে তোলেন মর্তবাসী। সেই ঘর কখনও থিমের, কখনও বা সাবেকিয়ানায় ঘেরা। লন্ডন শারদ উৎসবে এবারের মণ্ডপ সেজে উঠেছে টেরাকোটা (Terracotta) শিল্পে। ষষ্ঠী থেকে দশমী সেখানেই অধিষ্ঠান করবেন। বোধনের পর সপ্তমী পুজোর অন্যতম রীতি নবপত্রিকা স্নান। বাংলার মতো পবিত্র গঙ্গার ধারা সেখানে নেই। কিন্তু লন্ডনের বুক চিরে বয়ে গিয়েছে টেমস (Thames) নদী। এবার সেই টেমসেই নবপত্রিকা স্নান হবে। নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
[আরও পড়ুন: বাড়ল শব্দবাজির মাত্রা, এবার ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত ছাড় দিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ]
এর পর অষ্টমী পুজোর অঞ্জলি। আর সন্ধেবেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজোর আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলতে নাচ-গানের পাশাপাশি গানের লড়াই, কুইজ – হাজারও আয়োজন। আর ঢাকের বাদ্যি, ধুনুচি নাচ – এ সবই তো দুর্গাপুজোর আবহ তৈরি করে। বিলেতের মাটিতেও সেই আমেজ থাকবে তিন ঢাকির (Dhaki)হাত ধরে। কার হাতের বাজনা কেমন, তা দেখতে ‘তিন ঢাকির লড়াই’ও হবে লন্ডন শারদ উৎসবে।
পুজো হবে, আর পেটপুজো হবে না, তাও কি হয়? মোটেই না। তাই তো লন্ডন শারদ উৎসবে এবার পাঁচটি দিন ভরপুর খাওয়াদাওয়ার (Food)আয়োজন। দুবেলা ভোগের ব্যবস্থা থাকবে। পুজো দেখতে গেলে যে কেউ ভোগ পাবেন। এখানেই পেটপুজোর আয়োজন সীমিত নেই। লন্ডনের মাটিতে বসে একেবারে বাংলার পরিবেশ পেতে ঝালমুড়ি, ফুচকার স্টল থাকবে গ্রিনফোর্ড হলে। এছাড়া চপ, কাটলেট, বিরিয়ানি, মিষ্টি পানের মতো জিভে জল আনা সব মেনু পাওয়া যাবে এখানে। পুজোর সন্ধেগুলোয় মুখ চালানোর মতো স্ন্যাকসের অভাব হবে না।
[আরও পড়ুন: মামলা বেশি, লোকবল কম! চাপ সামলাতে রাজ্য পুলিশের কর্মী চাইছে CBI]
ধীরে ধীরে বিদায়বেলার বিষণ্ণতা। দশমী (Dashami) তিথিতে পান-মিষ্টি দিয়ে, সিঁদুর পরিয়ে কানে কানে বলা – আবার এসো মা। তবে এই বিষাদ সাময়িক। গ্রিনফোর্ড হলে এবার সিঁদুরখেলাও হবে। নারীরা একে অপরের সিঁথি রাঙিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে সমস্বরে বলে উঠবে – আসছে বছর আবার হবে। সবমিলিয়ে, লন্ডন শারদ উৎসবের হাত ধরে প্রবাস জীবনে কয়েকদিনের জন্য বাংলার রূপ-রস-স্পর্শ-গন্ধ পেতে চলেছেন বাঙালিরা।