কৃষ্ণকুমার দাস: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে রাজ্যবাসীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) পুজো উপহার - খাদির পোশাকে কার্যত ৫০ শতাংশ ছাড়। বিশেষ করে শিল্পীদের আঁকা মনকাড়া ডিজাইনের জনতা শাড়ি ও পুরুষের খাদি (Khadi) কুর্তা-জামা মিলবে প্রায় হাফ দামে। রাজ্য সরকারের খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের সমস্ত শোরুম এবং মেলার স্টলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে। খাদি পর্ষদের চেয়ারম্যান বিধায়ক কল্লোল খাঁ সোমবার জানিয়েছেন, ‘‘খাদির শাড়ি-জামা বাংলার অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুজোর আগেই এখনকার চেয়ে শোরুমে অর্ধেক দামে পাওয়া যাবে। বঙ্গনারীর অতি প্রিয় দুর্দান্ত ডিজাইনের যে জনতা শাড়ি এতদিন তিন হাজার টাকা দাম ছিল, সেটাই এবার দেড় হাজারে পাবেন সাধারণ মানুষ। ৬০০ টাকার খাদির শার্ট মিলবে ৩০০ বা তারও কম দামে।’’
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই শুধুমাত্র স্বদেশি টান নয়, পরতেও অতি আরামপ্রিয় (Comfort) হওয়ায় খাদি পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু সাধ থাকলেও দাম চড়া থাকায় সাধ্যের নাগালের বাইরে ছিল সাধারণের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের নয়া চেয়ারম্যান কল্লোল খাঁ সুতোর মানের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে জনতা শাড়ির মতো জনপ্রিয় বস্ত্রসম্ভারের দাম অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন। দুর্গাপুজোয় (Durga Pujo) খাদির নানা মানের শাড়ি, কুর্তি ও ‘ক্রিয়েটিভ ডিজাইন’ নিয়ে জেলার শিল্পীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মেদিনীপুর ও বর্ধমানের হস্তশিল্পীদের শিল্পকলাও উঠে এসেছে নয়া ডিজাইনের (Design) শাড়িতে।
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্ট আরবি পড়ে কোরানের অর্থ বলতে পারে না’, হিজাব মামলায় দাবি মুসলিম পক্ষের]
মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভাগীয় মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা গ্রামীণ শিল্পীদের ডিজাইনকে বেশি করে খাদি পর্ষদের উৎপাদনে ফুটিয়ে তুলতে নির্দেশ দেন। বস্তুত এই কারণেই এবার পুজোয় খাদির যে সমস্ত শাড়ি আসছে তাতে জেলার শিল্পীদের সৃজনশীল ডিজাইন অনেক বেশিমাত্রায় থাকছে। নয়া ডিজাইনের খাদির শাড়ি দেখে উচ্ছ্বসিত স্বয়ং অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এদিন বিধানসভায় বলেন, ‘‘জেলার মেয়েদের হাতে বোনা শাড়িগুলির মেটিরিয়াল যেমন ভাল, তেমনই দামও কম। সব চেয়ে বড় কথা এত সুন্দর ডিজাইন এবং রঙের ব্যবহার করেছে যে শাড়িপ্রেমীরা চমকে যাবেন।’’ খাদিকে আরও জনপ্রিয় করতে রাজ্যের সমস্ত বিধায়ককেই খাদির উৎপাদন সামগ্রীতে ছাড়ের পরিমাণ ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে পর্ষদ। নিবন্ধীকৃত সাংবাদিকরাও একই ছাড়ের সুবিধা পাবেন বলে কল্লোল জানান। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও এতটাই আপ্লুত যে পুজোর ক’দিন খাদির নয়া ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরে মণ্ডপে ঘুরবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
[আরও পড়ুন: পুজোয় সরকারি অনুদানে বাধা নেই, রায় জানাল হাই কোর্ট]
খাদির পাশাপাশি গত কয়েক বছরে বাংলায় মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মসলিনের চাহিদা যথেষ্ট হারে বেড়েছে। বস্তুত এই কারণে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম ও মালদহে চারটি ‘মসলিন তীর্থ’ গড়ে তুলেছে রাজ্য সরকার। খাদি পর্ষদের শীর্ষ আধিকারিকরা স্বীকার করেন, ‘‘২০১১ সালের আগে বাংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত মসলিন পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহে তা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং বিস্তার ঘটেছে।’’ পুজোর পরেই খাদির নতুন ডিজাইন ও বস্ত্রসম্ভার নিয়ে জেলায় জেলায় মেলা শুরু করছে পর্ষদ। মন্ত্রী ও বিধায়কদের নিয়ে ফ্যাশন শো করারও ভাবনা রয়েছে পর্ষদের।
রাজ্য পর্যায়ের খাদি মেলা এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর শুরু হবে দক্ষিণ কলকাতার ইডিএফ লাগোয়া তালতলা মাঠে। পর্ষদ চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘এতদিন বছরে ছ'টি জেলায় খাদি মেলা হত। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ১৬টি জেলায় হস্তশিল্পীদের নিয়ে মেলা হবে। প্রতিটি মেলায় যেমন নতুন ডিজাইন থাকবে তেমনই যথারীতি ছাড়ের সুবিধাও থাকবে।’’