এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দের পুজোর প্রস্তুতি৷
সুচেতা সেনগুপ্ত: ‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ’, জীবনানন্দ কবিতার শব্দগুলো আজ যেন বড় বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। চারপাশে সত্যিই বড় আঁধার। করোনা ভাইরাস (Coronavirus), সংক্রমণ, লকডাউন, আর্থিক মন্দা সাধারণ জনজীবনে একের পর এক খাঁড়ার ঘা। তবু তো মানুষ আলোর পথগামী। ‘চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ’-এর মতো আলো আর অন্ধকারও বৃত্তাকারে পরিক্রমা করে, এই স্থির বিশ্বাস নিয়েই এই আঁধারের মাঝেও আলোর দীপ জ্বালিয়ে দেবী দুর্গার (Durga Puja) আবাহনে মেতে উঠেছে কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দ। ১৮ তম বর্ষে তাদের থিম – আঁধার থেকে আলোর সন্ধানে। জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি।
উৎসব তো আসবে, যাবে। সকলকে নিয়ে হই-হুল্লোড়ে মেতে ওঠার সময়ও পড়ে থাকবে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এমন সংকটের বিরুদ্ধে লড়াই এখন মূল লক্ষ্য। কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দের (Kestopur Prafulla Kanan Adhibashi Brinda) সম্পাদক রঞ্জিৎ চক্রবর্তীর। তাঁর কথায়, ”সামাজিক দায়িত্ব পালন তো বড় বিষয়। পুজো একটা উপলক্ষ। এবার বেশি জোর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধিতে। দর্শনার্থীদের মাস্ক না থাকলে মাস্ক দেব আমরা। থাকছে থার্মাল স্ক্রিনিং, অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা, স্যানিটাইজার। এমনকী দুটো বেডও থাকছে, যাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দিতে পারি।” করোনা কালে দুর্গাপুজো আয়োজনে এ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
[আরও পড়ুন: নিউ নর্মালে পালটে দেওয়ার ডাক, সতর্ক হয়েই আনন্দে ভাসতে প্রস্তুত কলকাতার এই বিখ্যাত পুজো]
করোনার ধাক্কায় লকডাউন, তার জেরে আচমকা কাজ হারিয়ে দূরদূরান্ত থেকে বাড়ির পথ ধরা পরিযায়ী শ্রমিকরা সংগ্রাম করেই ফিরেছেন। কেউ বা ফিরতে পারেননি। বহু দূর হেঁটে এসে ক্লান্ত শ্রমিকের দল নতজানু হয়ে মা দুর্গার পদতলে বসে একটু আলোর সন্ধান চাইছেন। এই ভাবনা থেকেই ‘আঁধার থেকে আলোর সন্ধানে’ থিম নিয়ে কাজ করছে কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দ। ক্লাব সদস্য কুট্টির হাতে ফুটে উঠছে থিম। সাবেকি ধাঁচে প্রতিমা গড়ছেন মৃৎশিল্পী নবকুমার পাল। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন মেনে একেবারে খোলা মণ্ডপ হচ্ছে এখানে। প্রতিমা যেখানে বসানো হবে, সেখানে শুধুমাত্র পুরোহিতের উপস্থিতিই গ্রাহ্য হবে। অন্য কেউ সেখানে যেতে পারবেন না, তিনি ক্লাব সদস্যই হোন বা কোনও দর্শনার্থী, ভিতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
[আরও পড়ুন: মৃন্ময়ী নয়, সুপারি দিয়েই নদিয়ার পাপিয়ার হাতে রূপ পাচ্ছেন দশভুজা]
আরও একটি বিষয়ে ১৮ তম বর্ষে অনন্য নজির রাখতে চলেছে এই ক্লাব। করোনা কালে ঘরবন্দি বাসিন্দাদের একঘেয়েমি কাটাতে তাঁদের গান শুনিয়ে শিল্পীসত্ত্বার বিকাশ ঘটানো বারাকপুর কমিশনারেটের এএসআই অপূর্ব মজুমদারের হাতে থিম সংয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে এই ক্লাব। গান লেখা, সুর বাঁধা, গাওয়া – সবই একা হাতে তিনি করে ফেলেছেন। চতুর্থী থেকে খুলে যাবে কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দের পুজো মণ্ডপ। করোনা কালে সামাজিক দায়িত্ববোধকে প্রাধান্য দিয়েই উৎসবে শামিল হওয়ার ডাক দিচ্ছে কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দ।
