shono
Advertisement

প্রত্যাঘাতের ‘পুরস্কার’দিতেই নির্বাচন কেন্দ্রে যাবেন পুলওয়ামা হামলায় স্বজনহারারা

দেশের জন্য ছেলেদের পাঠাতে সবসময় তৈরি, বলছেন পুলওয়ামায় শহিদের বাবা। The post প্রত্যাঘাতের ‘পুরস্কার’ দিতেই নির্বাচন কেন্দ্রে যাবেন পুলওয়ামা হামলায় স্বজনহারারা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:51 PM Mar 26, 2019Updated: 12:51 PM Mar 26, 2019

নন্দিতা রায়, শ্যামলী: ৭০৯ বি জাতীয় সড়কে উঠেই গাড়ির গতি কমল। ট্রাক্টর থেকে শুরু করে ট্রাক, লরির মাথায় বোঝাই আখ। বোঝা এতটাই যে চলতে চলতে তার যন্ত্রযানও যেন ক্লান্ত। তার মধ্যে দিয়েই চলেছি আমরা। দু’পাশে আখের খেতে ফসল তোলার কাজ চলছে। মাঝে মাঝেই হাওয়ায় ভেসে আসছে গুড়ের গন্ধ। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মীরাট, মুজফফরনগর পার করে শ্যামলী পৌঁছলাম। শহিদ অমিত কোরি-র বাড়ির হদিশ পেতে বিশেষ বেগ পেতে হল না, সে বাড়ি এখন সবার চেনা। রেলপারের গলি, মহল্লা পার হয়ে চওড়া সদর রাস্তার ধারেই দোতলা বাড়ি। সামনেই ছবি-সহ বিশাল পোস্টার শহিদ অমিতের। বৈঠকখানায় তাঁর ছবির সামনে ধুপ-ধুনো, প্রদীপ জ্বেলে রাখা হয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন- ১৮ বছরে সতেরোবার পাকিস্তানে গিয়েছিল চরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত রাজস্থানের বাসিন্দা ]

অমিতের বাবা সোহনপাল শোক সামলে উঠেছেন ! সামনের ঘরে বেশ কিছু লোকজন ছিলেন তাই বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলেন নিজেই। কারণ, ইতিমধ্যে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাঁদের অনেকেই নিজেদের অভিযোগের ঝাঁপি খুলতে শুরু করেছেন। ভিতরে চওড়া উঠোনের একদিকে দোতলা পাকা বাড়ি। উঠোনে খাটিয়া পাতা। অমিতের মা উর্মিলাদেবী পাশে ডেকে নিয়ে বসালেন। শুরু থেকেই খেয়াল করেছি অমিতের বাবার পাশে এক যুবক রয়েছেন সবসময়। তাঁর পরামর্শেই সম্ভবত আমাকে অন্দরে নিয়ে আসা। এখন জানলাম তিনি অমিতের দাদা। বললেন, “বাইরের লোকের কথায় কান দেবেন না। যা বলার বাবাই বলবেন। বাবা সব জানেন কী পেয়েছি, কী পাইনি। এরা সব উলটোপালটা কথা বলে।” এর আগে বৈঠকখানায় নিজেকে ভগত সিং শহিদ কমিটির চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দিয়ে রজনীশ শর্মা নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছিলেন, সরকার নাকি শহিদ অমিতের পরিবারকে কোনও সাহায্য করেনি। তাঁরা এখনও প্রাপ্য টাকা-পয়সা পাননি।

সোহনপাল শক্ত মনের মানুষ। সদ্য যুবক পুত্রকে হারিয়ে তাঁর শোক কোথায়, বরং গর্বই তো! ছেলে দেশরক্ষার কাজে প্রাণ দিয়ে শহিদ হয়েছে, বলেন বাবা। অন্য ছেলেদেরও সেনাবাহিনীতে পাঠাতে চান তিনি। বলছেন, “দেশের জন্য ছেলেদের পাঠাতে সবসময় তৈরি। ছেলেরা তো দেশসেবার জন্যই। আমি গর্বিত, আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। সবাইকে তো একদিন যেতে হবে। তবে, ছেলে কিছু করে গিয়েছে।” অথচ, পাঁচ ছেলের মধ্যে একমাত্র অমিতই চাকরি করতেন। বাকি তিন ছেলে ছোটখাটো কাজ করেন। একজন পড়াশোনা করছে। অমিত অবিবাহিত থাকার কারণে কেন্দ্র তথা আধাসেনা পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি দিতে চেয়েছে। এক ছেলে রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়েছে।

[আরও পড়ুন- নির্বাচনের আগে সংঘর্ষে কাঁপল ছত্তিশগড়, গুলির লড়াইয়ে নিকেশ ৪ মাওবাদী ]

ভোটপ্রসঙ্গ এসেই পড়ল। লোকসভা ভোট সামনেই। খবরে নজর রাখছেন। বললেন, “ভোট দিতে তো অবশ্যই যাব। মোদিজির উপর বিশ্বাস আছে আমাদের। যেভাবে ১৩ দিনের মাথায় শহিদদের বদলা নিয়েছেন তাঁকে তো ভোট দিতেই হবে।” কিন্তু মা উর্মিলাদেবী, বুঝলাম, এখনও শোক সামলে উঠতে পারেননি। অদ্ভূত এক নীরবতা ভদ্রমহিলাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ছেলে অমিতের কথা বলার সময়েই ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস। এটা উত্তরপ্রদেশের গ্রাম, এখানে উর্মিলাদেবীরা ভোট দেবেন কি না, কাকে দেবেন, ছেলে সেনায় যাবে কি না – সব ঠিক করে পরিবারের পুরুষরা। তাই মেনে নেন তাঁরা। শুধু সন্তান হারানোর নীরব শোকেই তাঁর একান্ত অধিকার। কথা বলতে বলতে বেলা অনেকটা গড়িয়ে গিয়েছিল। উঠব উঠব করতেই মা’য়ের কাতর অনুরোধ, “খানা বন গ্যায়া হ্যায়। খানা খাকে যাইয়ে।” প্রবল ঝড়েও তাঁরা আতিথেয়তা ভোলেননি, যা উত্তরপ্রদেশের এই অঞ্চলের ঐতিহ্য।

The post প্রত্যাঘাতের ‘পুরস্কার’ দিতেই নির্বাচন কেন্দ্রে যাবেন পুলওয়ামা হামলায় স্বজনহারারা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement