সৌরভ মাজি, বর্ধমান: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিধান রায়। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। জেলাশাসকের এহেন মন্তব্যে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না রাজ্যের বিরোধী দলগুলো। লোকসভা ভোটের মুখে এই নিয়ে রাজনৈতিক তরজায় সরগরম বর্ধমান।
শুক্রবার বর্ধমানের স্পন্দন কমপ্লেক্সে ‘সৃষ্টিশ্রী’ মেলার উদ্বোধন হয়। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি গার্গী নাহা-সহ অন্যান্য আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণ দিতে গিয়ে জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর কাজের কথা তুলে ধরেন জেলাশাসক বিধান রায়।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের অনুপ্রাণিত করতে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি মা দুর্গার মতো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন তাহলে আপনারা কেন পারবেন না। একটা জ্বলন্ত উদাহরণ আছে আমাদের সামনে। আমি অনুরোধ করব সেই উদাহরণ সামনে রেখে আপনারা এগিয়ে চলুন। শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠী নয়, সংঘ, মহাসংঘ গড়ে আপনারা এগিয়ে চলুন। ইতিমধ্যে কোম্পানিও গঠন হয়েছে। তাতে বহুবিধ কর্মমুখী কর্মকাণ্ড চলছে। আপনাদের মধ্যে সেই শক্তি রয়েছে। আপনারা অর্থনৈতিক বুনিয়াদ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন।”
বিধান রায়ের এই মন্তব্য নিয়েই শোরগোল পড়ে যায়। সরব হন বিরোধীরা। এনিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে রাজ্য সরকার জেলা প্রশাসনকে দলদাসে পরিণত করেছে। জেলাশাসকের মতো সাংবিধানিক পদে বসে এই ধরনের মন্তব্য করা যায় না। এর থেকেই প্রমাণিত হয় তিনি শাসকদলের হয়ে কাজ করবেন। তিনি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন না।” কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপিও। দলের মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এখন তৃণমূলের কর্মীদের থেকেও বেশি মাত্রায় ক্যাডারে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর তুলনা দেবদেবীর সঙ্গে করছেন। তাতে দেবদেবীদেরও ছোট করা হচ্ছে। আমরা সন্দেশখালি দেখেছি রাজ্য কি ভাবে কাজ করছে।”
এর পর বিজেপিকে পালটা দেন তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “উনি কেন এই মন্তব্য করেছেন সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে রাজ্যকে আগলে রেখেছেন, উন্নয়ন করেছেন সেই কথা ভেবে বলে থাকতে পারেন।” গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদিকে তো ওরা বিষ্ণুর অবতার বানিয়েছে, দেবতা বানিয়ে দিয়েছে। সেই সব করে দেবদেবীর অপমান করেছে বিজেপি।” পালটা বিজেপির মুখপাত্র বলেন, “ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। যদি মোদিকে করা হয়ে থাকে তা করে থাকতে পারেন দলীয় কর্মীরা। কোনও প্রশাসনিক কর্তা তা করতে পারেন না।”