ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ৬ জনের মধ্যে বেঁচে থাকবেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির বাসিন্দা চন্দ্রা দত্ত! পথ দুর্ঘটনায় মাথার আঘাত পেয়েছিলেন চন্দ্রা (৪৫)। ব্রেন ডেথ হয় তাঁর। চন্দ্রার জনমজুর স্বামীকে মরণোত্তর অঙ্গদানের (Organ Transplantation) বিষয়ে বোঝায় হাসপাতাল। রাজি হন তিনি। এরপরেই নজির গড়ল এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতাল। সোমবার চন্দ্রার মরণোত্তর লিভার, হার্ট ও দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপিত হল এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রোগীর শরীরে।
রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশনের (রোটো) যুগ্ম অধিকর্তা অর্পিতা রায়চৌধুরী জানান, শুধু এই অঙ্গগুলির প্রতিস্থাপনই নয়, চন্দ্রার মরণোত্তর কর্নিয়া ও ত্বকও সংগ্রহ করা হয়েছে। সংরক্ষণ করা হয়েছে এই হাসপাতালেই। তাও প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। পিজি তথা রোটোর অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগে হার্ট-লিভার-কিডনি একযোগে প্রতিস্থাপন হলেও ছ’টি অঙ্গ একসঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানের রোগীদের পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। পূর্ব ভারতে প্রথম হওয়া এই ঘটনাকে ‘গর্বের’ আখ্যা দেন তিনি।
[আরও পড়ুন: বন্ধে বাস ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর]
গত ২১ মার্চ পথদুর্ঘটনার কবলে পড়েন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা চন্দ্রা দত্ত। স্থানীয় হাসপাতাল ঘুরে ওই দিনই তাঁকে আনা হয় এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। সেখানে মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও গত শুক্রবার থেকে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। শনিবার রাতে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন, ব্রেন ডেথের দিকেই এগিয়ে চলেছেন বছর ৪৫-এর চন্দ্রা। নিঃসন্তান মহিলার স্বামী স্বপন দত্তকে তখন থেকেই মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়ে বোঝাতে শুরু করেন ট্রান্সপ্ল্যান্ট কাউন্সিলর। পাশাপাশি খোঁজ শুরু হয় ও-পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের গ্রহীতাদের। সেইমতো দুই কিডনি গ্রহীতা এবং একজন করে লিভার ও হার্ট গ্রহীতার খোঁজ মেলে অন্য কোথাও নয়, এসএসকেএমেই।
সোমবার ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয় চন্দ্রার পরিবার রাজি হতেই। এদিন বিকেলের পর থেকে শুরু হয় অঙ্গ আহরণ (রিট্রিভ্যাল) ও সংরক্ষণের (হার্ভেস্টিং) পর্ব। গোটা পর্বে এসএসকেএমের নেফ্রোলজি, গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজি, কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জারি ও কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেটিস্টের একটি দল যুক্ত ছিলেন। সন্ধ্যায় শেষ হয় আহরণ ও সংরক্ষণ পর্ব। রাতে শুরু হয় প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার।
[আরও পড়ুন: নজিরবিহীন! চলতি বছর কোনও অধিবেশনে অংশ নিতে পারবেন না শুভেন্দু-সহ ৫ বিজেপি বিধায়ক]
ইতিমধ্যে দু’টি কিডনি পেয়েছেন সোনারপুর ও হুগলি নয়াসারির দুই তরুণ। যাঁদের কিডনি বিকল। বয়স যথাক্রমে ২৬ ও ২০ বছর। লিভার পেয়েছেন পুরুলিয়ার এক ৫১ বছরের প্রৌঢ় এবং হার্ট পেয়েছেন রাজারহাটের ৩৭ বছরের তরুণী। রাত পর্যন্ত প্রতিস্থাপন পর্ব চলছে।