shono
Advertisement

করোনার সংক্রমণ রোখার চেষ্টা, ভক্ত ছাড়াই পুরীতে হবে জগন্নাথদেবের স্নান ও রথযাত্রা

৪ জুন থেকে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওড়িশা সরকার। The post করোনার সংক্রমণ রোখার চেষ্টা, ভক্ত ছাড়াই পুরীতে হবে জগন্নাথদেবের স্নান ও রথযাত্রা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:52 AM Jun 01, 2020Updated: 02:59 PM Jun 01, 2020

কৃষ্ণকুমার দাস: করোনা ভীতিকে সরিয়ে রেখেই চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনে এ বছর পুরীর শ্রীমন্দিরের বাইরেই মাহেন্দ্রক্ষণে মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা ও রথযাত্রা পালিত হবে। কিন্তু, ভক্তদের রথের রশি ছোঁয়া দূরের কথা, দেখারও সুযোগ থাকবে না। রথযাত্রার দু’দিন আগে থেকেই পুরীর মন্দিরে প্রবেশের সমস্ত রাস্তা সিল করে দেবে পুলিশ। শুধু তাই নয়, শ্রীমন্দিরের স্নানবেদিতে তিনদেবতার স্নানপর্বও বাইরে রাজপথে দাঁড়িয়েও বাংলা দূরের কথা পুরীর ভক্তরাও দেখতে পারবেন না। কারণ, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে জগন্নাথের স্নানযাত্রার আগের দিন ৪ জুন থেকে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুরী জেলাশাসক। স্নানযাত্রা ও রথযাত্রায় বাইরের লক্ষ লক্ষ ভক্তদের আটকাতে আজ ১ জুন, সোমবার থেকে পুরীমুখী সমস্ত ট্রেন ভুবনেশ্বরেই থামিয়ে দিচ্ছে ওড়িশা সরকার। তাই শিয়ালদহ থেকে দুরন্ত এক্সপ্রেস ছাড়লেও পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত শ্রীক্ষেত্রে যাবে না। অবশ্য এরই মধ্যে কেন্দ্রের ‘আনলক-১’ নীতি মেনে আগামী ৮ জুন থেকে পুরী, কোনারক, লিঙ্গরাজ-সহ সমস্ত মন্দিরেই শর্তসাপেক্ষে নিয়ন্ত্রিত সূচিতে ভক্ত এবং দর্শনার্থী প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ওড়িশা সরকার।

Advertisement

ভক্ত দূরের কথা, করোনা সংক্রমণের ভয়ে পুরীর মন্দিরের সেবায়েত ও পুজারিদের স্নানযাত্রায় উপস্থিতিতেও তীব্র আপত্তি ছিল ওড়িশা সরকারের। ৫ জুন জগন্নাথদেবের পুজোয় যাঁর পালা আছে একমাত্র তিনি ও পুরীর রাজার প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কাউকে স্নানবেদিতে যাওয়ার অনুমতি দিতে রাজি হচ্ছিলেন না জেলাশাসক। কিন্তু, মন্দির পরিচালন কমিটি কার্যত জোর করেই সমস্ত সেবায়েত, শিঙ্গারি, দৈতাপতি, পুজারিদের স্নানবেদিতে থাকার অনুমতি পাস করিয়েছে। বস্তুত এই কারণেই মন্দিরের সমস্ত সেবায়েত ও পুজারি এবং দৈতাপতিদের আজ, সোমবার থেকে লালারস নিয়ে করোনার পরীক্ষা হবে। যদি কোনও সেবায়েতের করোনা ধরা পড়ে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউই স্নানাযাত্রায় আসতে পারবেন না।

[আরও পড়ুন: অবশেষে ভাঙল ঘুম! মুজফ্ফরপুরের মাতৃহারা অসহায় শিশুদের পাশে নেতামন্ত্রীরা ]

মন্দির পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য ও প্রধান শিঙ্গারী নীলকণ্ঠ মহাপাত্র রবিবার জানিয়েছেন, “প্রায় ৭৫ দিন পর স্নানযাত্রায় দেবতার দর্শন থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। যাঁরা ভগবানের নিত্যপুজো করেন, মন্দিরে আসেন তাঁদের অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না।” মন্দির সূত্রে খবর, ১০ দিন পরে শুরু করেও দেবতার তিনটি রথের ৪২টি চাকার নির্মাণ সম্পূর্ণ করেছেন ‘বিশ্বকর্মা’রা।

ভক্তদের দূর থেকেও স্নানযাত্রায় দেবতার দর্শন বন্ধ করায় পুরীতে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কোভিড-১৯ নির্দেশ মানলে রাজ্য সরকারের নিজের প্রচারে ‘বন্দে উৎকল জননী’ কর্মসূচিতে কীভাবে পুরীতে ৩০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়? মন্দিরের সামনে পাঁচ হাজার মানুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ওড়িশা সরকারের জয়গান গাইলে যদি করোনা সংক্রমণ না হয় তবে কেন জগন্নাথের স্নানযাত্রা দূরে দাঁড়িয়ে পুরীর বাসিন্দারাও দেখতে পাবেন না? অবশ্য ৮ জুন থেকে সরকারি নিয়মে পুরীর মন্দিরে ভক্তরা প্রবেশ করতে পারবেন।

কিন্তু অন্যতম প্রবীণ সেবায়েত জগন্নাথ দৈতাপতি এদিন বলেন, “প্রথা মেনে স্নানযাত্রার পরদিন থেকে দেবতাদের জ্বর আসে, শরীর খারাপ হয়। তিন দেবতাই নিভৃতবাসে চলে যান। তাই মন্দির বন্ধই থাকে। তাই তখন ভক্তদের জন্য দরজা খুলে কী হবে?” অবশ্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৮ জুন থেকে ১০-১২ জন করে ভক্ত ‘সোশ্যাল ডিস্টেন্স’ মেনে দফায় দফায় মন্দিরে প্রবেশ করবেন। তাঁরা বেরিয়ে এলে ফের অন্যরা যাবেন। পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ ও ওড়িশা স্বাস্থ্যদপ্তর।

[আরও পড়ুন: রেলের করোনা হাসপাতালেই ‘ফেয়ারওয়েল পার্টি’র আয়োজন, প্রবল বিতর্ক রাজস্থানের কোটায়]

পুরীর মন্দিরেই পরিচালন কমিটি শনিবারের তিন ঘণ্টার বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেনে শ্রীমন্দিরের প্রধান সেবায়েত গজপতি মহারাজ দিব্যজ্যোতি সিং দেবও। ছিলেন মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক ড. কিষাণ কুমার, জেলাশাসক বলবন্ত সিং এবং পুলিশ সুপার উমাশঙ্কর দাশ। এবছর শুধু ভক্ত নয়, করোনা ভীতির জেরে সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশও নিয়ন্ত্রণ করবে রাজ্য সরকার। স্নানযাত্রা ও রথযাত্রা টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট করবে ওড়িশা সরকারের লোক-সম্পর্ক দপ্তর। মন্দির কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শ্রীমন্দির থেকে বেরিয়ে চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনে নন্দীঘোষ রথে চেপেই রাজপথ দিয়েই গুন্ডিচা মাসি বাড়ি যাবেন মহাপ্রভু জগন্নাথ। দাদা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাও নিজস্ব রথে চেপেও মহাপ্রভুর সঙ্গে যাবেন। সেবায়েত, পুজারি ছাড়া পুলিশ প্রশাসনের অফিসাররা রথ টেনে মাসি বাড়ি পৌঁছে দেবে। তবে ‘বহুড়া যাত্রা’র মধ্য দিয়ে দেবতারা রথে উঠে যাওয়ার পর পুরীর মন্দির সিল করে দেওয়া হবে। একই নিয়ম মানা হবে, উল্টোরথ ও সোনাবেশে। সেখানেও কোনও ভক্তকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এতে স্বভাবতই হতাশ পুরীর জগন্নাথদেবের লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও পুণ্যার্থীরা। কার্যত মাথায় হাত পুরীর কয়েক হাজার হোটেল এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদেরও।

The post করোনার সংক্রমণ রোখার চেষ্টা, ভক্ত ছাড়াই পুরীতে হবে জগন্নাথদেবের স্নান ও রথযাত্রা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement