সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বড়দিনের খাওয়া-দাওয়া মানে কি শুধুই টার্কি, রেড ওয়াইন আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-র মতো আলুর নানান পদ? প্রচলিত এই ধারণাটা থেকে সরে এসে বড়দিনের বড়াখানায় থাকছে ষোলআনা বাঙালিয়ানা থেকে মানভূঁইয়া ও উপজাতিদের থালি। হ্যাঁ, ঠিক তাই। এই ভরা শীতে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির অযোধ্যা পাহাড়ে বড়দিনের পাতে এমনই আয়োজন।
তবে শুধু যিশুর জন্মদিনে নয়। বছরভর অযোধ্যা পাহাড়ে আসা বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের জন্যই অযোধ্যা হিলটপের কচুরিরাখায় রাজ্যের অর্থে নির্মিত লিজ পাওয়া চারতারা একটি রিসর্টে বাঙালিয়ানার সঙ্গে এমন স্থানীয় ডিস মিলছে। যা বড়দিনের আগে আরও বেশি করে তুলে ধরা হচ্ছে । পর্যটকদেরকে আরও মাটির কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে সেই স্বাদ দিতেই তাদের একাধিক রেস্তরাঁর মধ্যে একটিতে এই এলাহি আয়োজন রয়েছে।
পর্যটকদের পাতে উষ্ণতা ছড়িয়ে মাটির ঘ্রাণ দিতে এখানে কাঠের উনুনে রান্না হয়। স্লো কুকিং পদ্ধতি অবলম্বন করে রান্নাবাটি হয়ে থাকে। যাতে মশলাগুলো খাবারে আরও ভালোভাবে মিশে যেতে পারে। মানভূঁইয়া থালিতে থাকা হান্ডি চিকেন একেবারে মাটির হাঁড়িতে কলাপাতা দিয়ে তার মধ্যে খাড়া মশলায় তৈরি হয়। ৪-৫ ঘন্টা ধরে কাঠের জ্বালানিতে একেবারে ধিমি আঁচে রান্না করে পর্যটকদের পাতে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
সেই সঙ্গে নারকেল বাটা, সরষে বাটা, জিরে বাটা এগুলি খাবারে বেশি করে প্রয়োগ করে ওই তিন রকম থালি বানানো হয়। এই ধরনের ডিসে পরিবেশনও চোখ টানে। কাঁসার থালা, বাটি, প্লেট, গ্লাসে যেমন খাবার দেওয়া হয়। তেমনই থাকে কলা পাতাও। একেবারে মাটিতে বসে উঁচু টুলে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়ার সুযোগ রয়েছে এই হিলটপে। যারা পরিবেশন করেন তাদের পরনে থাকে ধুতি, পাঞ্জাবী, কোমরে গামছা। এই রেস্তরাঁর নামকরণ করা হয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘দ্য ভিলেজ’।
[আরও পড়ুন: কাজ ফুরোলেই… অভিমানে পুরস্কারের টাকা ফিরিয়ে দিলেন উত্তরকাশীর ‘ত্রাতা’ র্যাট হোল মাইনাররা]
ওই চারতারা রিসর্টের জেনারেল ম্যানেজার সুদীপ্ত কুমার বলেন, “পর্যটকরা যখন অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে আসছেন তখন তাদেরকে এখানকার মাটির স্বাদ আমরা দিতে চাই। সেজন্যই আমাদের রিসোর্টে আলাদাভাবে এই তিন থালির আয়োজন। ফলে আমরা কাঠের জ্বালানিতে রান্না করছি। বাটা মশলার ওপরে আমরা বেশি জোর দিই। আগামী বড়দিনে এই তিন থালিকে আমরা আলাদাভাবে তুলে ধরছি। যারা পাহাড়ে বেড়াতে আসছেন আমরা তাদের বলছি একবেলা অন্তত এই খাবারের স্বাদ নিন। যা আক্ষরিক অর্থে আপনাদের একেবারে মাটির কাছাকাছি পৌঁছে দেবে। বলা যেতে পারে যেভাবে শুরু হয়েছিল এই সভ্যতা। সেখানেই ফিরে যান। যা মা, ঠাকুমার সময় থেকেও প্রাচীন।”
তাই এই রেস্তরাঁয় স্থানীয় মহিলাদের হাতে তৈরি মোচার চপ, পোস্ত-র বড়া, আলু-ঝিঙের পোস্ত-র স্বাদ-ই আলাদা। ৬৪৯ টাকার উপজাতি থালিতে রয়েছে দই গন্ধরাজ ঘোল, গ্রিন স্যালাড, ভেজিটেবল চপ, পোস্তর বড়া, লম্বা বেগুন ভাজা, শাক ভাজা, পাঁপড় ভাজা, ভাজা মুগ ডাল, পটল দোরমা ধনিয়া দেশি মুরগি। সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা ঘি দেওয়া সাদা ভাত। এর সঙ্গে চাইলে মিলবে বাসন্তী পোলাও। এছাড়া থালিতে লুচি থাকছে। থাকছে চাটনি, রসগোল্লা মুগ হালুয়া।
মানভূঁইয়া থালি টা প্রায় একই রকম। বদল বলতে একেবারে ধিমি আঁচে তৈরি হান্ডি মটন। ৬৪৯ টাকা তেই রয়েছে এপারে বাংলা থালি। শেফ চম্পা দাস, রাধেশ্যাম বেরা বলেন, ” এই থালিগুলো অন্যতম আকর্ষণীয়। এছাড়া চিকেন, চিংড়ি, মটনের চাহিদা অনুযায়ী রকমারি মেনুও মেলে।” তাছাড়া নিরামিষ পদে ৫৪৯ টাকায় রয়েছে মহাভোজ থালিও। যা জিভে জল আনবে।
দেখুন ভিডিও: