সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে পৃথক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে জুড়ল অযোধ্যা পাহাড়তলির মুরগুমা। বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতায় পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্ক থেকে রাজ্যের অন্যান্য পর্যটন প্রকল্পের সঙ্গে পুরুলিয়ার কোটশিলার অযোধ্যা পাহাড়তলির মুরগুমা ইকো ট্যুরিজম প্রজেক্টের ভারচুয়ালি উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যেই পর্যটকদের জন্য দরজা খুলে যাবে এই ট্যুরিজম প্রজেক্টের।
পুরুলিয়ার ওসি ট্যুরিজম ডঃ ওয়ালিউল্লা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে এই পর্যটন প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতি পর্ব একেবারে চূড়ান্ত।” ইতিমধ্যেই এই পর্যটন প্রকল্প বড়দিনের আগেই রঙিন আলোকমালায় সেজে উঠেছে। অযোধ্যা পাহাড়তলির ওই নতুন পর্যটক আবাস আলোকমালায় সেজে ওঠায় পাহাড়ের গায়ে যেন অন্যরূপ ফুটে উঠছে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আলোকমালা সাজানো থাকবে ওই ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে। রাজ্যের পর্যটন বিভাগের তরফে ৯ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা অর্থে এই পর্যটক আবাস গড়ে তোলা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: যৌনতার পরেও পিতৃত্ব অস্বীকার! সদ্যোজাতকে ‘বাবুর বাড়ি’র সামনে রেখে গেলেন পরিচারিকা]
অযোধ্যা পাহাড়ের নিচে থাকা কোটশিলার মুরগুমা ওই পাহাড়ের সাইট সিয়িং হিসাবেই পর্যটকদের কাছে পরিচিত ছিলো। রাজ্যে পালাবদলের পর এই সাইট সিয়িং পৃথক পর্যটন কেন্দ্রের রূপ পেতে শুরু করে। মূলত বেসরকারি বিনিয়োগের হাত ধরেই মুরগুমা আক্ষরিক অর্থেই আলাদা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। আর সেই বৃত্তটাই যেন সফল হলো পর্যটন বিভাগের এই ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে। এই পরিবেশ বান্ধব পর্যটন প্রকল্পের আগে কোন সরকারি পর্যটক আবাস ছিল না এখানে। জলাধার ছাড়িয়ে একের পর এক বেসরকারি বিনিয়োগে পর্যটক আবাস রয়েছে। মুরগুমা জলধারকে ঘিরে একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য পর্যটন বিভাগের। জেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব গিয়েছে পর্যটন বিভাগে। তবে এই পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্পও একেবারে চোখ টানার মতো।
একদিকে মুরগুমা জলাধার। অন্যদিকে টিলা, জঙ্গলের মাঝে এই ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের একের পর এক কটেজ। মোট ২৬ টি রুম। তার মধ্যে ১২টি সিঙ্গেল, ১২ টি ডবল এবং দুটি সুইট। রয়েছে কিচেন, ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, রিসেপশন, সুইমিং পুল, এমনকি স্পাও। সেই সঙ্গে ব্যাডমিন্টন ও ভলিবলের পৃথক কোর্ট। পর্যটকদের কাছে লোক সংস্কৃতি তুলে ধরতে দুটি মুক্ত মঞ্চ। থাকছে বারবিকিউও। এই পর্যটন প্রকল্প নিয়ে প্রথম থেকেই জমি জট তৈরি হয়। বনদপ্তরের সঙ্গে নানা টানাপোড়েনের পর ২০১৯ সালে পুজোর আগে থেকে এই পর্যটন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তারপর কোভিডে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কাজ শুরু হলে আবারও জটিলতা তৈরি হয়। পরে অবশ্য সেই বাধা কাটিয়ে পুরোদমে কাজ চলে।
জলাধার, জঙ্গল, টিলার মিশেলে মুরগুমা একেবারে ‘বহুরূপী’। ছয় ঋতুতে ছয় রূপ এই পাহাড়তলির। এই মুরগুমাকে ঘিরে কত যে পাহাড়ি ঝরনা আছে তার বোধহয় সঠিক হিসাব নেই। জানা-অজানা কামসুতিয়া, মাছকান্দা, পিটিতিরি, গিরগিরি, পাড়াপানি ঝরনা যেন মুরগুমার রূপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তাই শীতে একেবারে পর্যটকের ঢল এই পাহাড়লিতে। বড়দিনের আগে পূর্ণিমা পড়ায় জ্যোৎস্নাস্নাত ওই মায়াবী রাতে মুরগুমার মোহময়ী রূপ দেখতে এখানের সমস্ত কটেজ, পর্যটক আবাস একেবারে হাউসফুল। আর তার মধ্যেই পরিবেশবান্ধব এই পর্যটন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।