সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনীতির জ্বালাযন্ত্রণা যাই-ই থাকুক, মায়ের মন তো মানে না৷ তাই মান-অভিমানের পালা শেষ করে এবার ছেলেকে ঘরে ফেরাতে চাইছেন মা৷ বলছেন, ‘অনেক হয়েছে৷ এবার ঘরে ফিরে এসো৷ আর দূরে দূরে থেকো না৷’ যিনি ডাকছেন, তিনি বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী৷ আর যাঁকে ডাকা হচ্ছে, তিনি আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ এবং রাবড়ি দেবীর বড় ছেলে তেজপ্রতাপ৷
[ আরও পড়ুন: সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে উত্তপ্ত সোপিয়ান, গুলিতে নিকেশ ২ জঙ্গি]
পারিবারিক এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সেই গত বছর৷ বিয়ের পরপরই স্ত্রী ঐশ্বর্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে যান তেজপ্রতাপ৷ এনিয়ে বাবা লালুপ্রসাদের সঙ্গে মতানৈক্য হয় তাঁর৷ সেই থেকে বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকছেন তেজপ্রতাপ৷ দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে বাড়ি ফেরা তো দূরের কথা, লোকসভা নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ের আগে রাষ্ট্রীয় জনতা দলেই ভাঙন ধরান লালুর জ্যেষ্ঠপুত্র৷ আরজেডি-র বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে, দলের বাইরে বেরিয়ে তৈরি করেন নতুন সংগঠন৷ আর বাবা, মাকে শ্রদ্ধা জানাতে নতুন দলের নাম দেন ‘লালু-রাবড়ি মোর্চা’৷ সারন লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিনি নিজে অথবা তাঁর মা রাবড়ি দেবী প্রার্থী হোক, চেয়েছিলেন তেজপ্রতাপ৷ কিন্তু লালুঘনিষ্ঠ চন্দ্রিকা রাই, যিনি আবার তেজপ্রতাপের শ্বশুরও বটে, তাঁকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে আরজেডি৷ আর তাতেই ক্ষুব্ধ লালুর বড় ছেলের দলত্যাগ এবং নতুন দলগঠন৷ লোকসভা নির্বাচনের মুখে তেজপ্রতাপের এই কাজে মহাসংকটে পড়েছে যাদবকুল৷ বিরোধী মহাজোটেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে৷ এতে বিজেপি কিছুটা সুবিধা লাভ করবে বলে মনে করা হলেও, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তেজপ্রতাপ নিজেই৷ তাঁর কথায়, ‘বিজেপি এমনই হাবুডুবু খাচ্ছে৷ ওদের আর কী সুবিধা হবে?’
[ আরও পড়ুন: ‘ভোট না দিলে চাকরিও দেব না’, মানেকা গান্ধীর মন্তব্যে চরম বিতর্ক]
নির্বাচনের ভরা মরশুমে এসব ডামাডোলের মাঝেই এল রাবড়ি দেবীর কান্নাভেজা বিবৃতি৷ রীতিমতো কাকুতি-মিনতি করে তিনি বড় ছেলেকে ঘরে ফেরার বার্তা দিচ্ছেন৷ ছেলেকে শেষবার দেখেছিলেন সেই গত বছর, রাঁচিতে৷ তারপর থেকে বিহারে থাকলেও, তেজপ্রতাপ বাড়িতে থাকছেন না৷ আলাদা থাকছেন৷ এই বিচ্ছেদ আর মেনে নিতে পারছেন না মা রাবড়ি৷ বরং দুই ছেলের মধ্যে চিড় ধরার যে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর দাবি, ‘কেউ বা কারা আমাদের পরিবারে বিভাজনের চেষ্টা করছে৷ আরজেডি-তে ভাঙনের খবর মোটেই সত্যি নয়৷ আমাদের ছেলেদের কেউ প্রভাবিত করছে৷ আমাদের রাজনৈতিক শত্রু, বিজেপি, জেডিইউ-র কেউই এসব করছে৷’
[ আরও পড়ুন: মোদির বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কারনান]
আসলে, এই মুহূর্তে আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ নিজে রাঁচির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি জেলবন্দি৷ তাঁর অনুপস্থিতিতে যাঁকে সবচেয়ে বেশি ভরসা করতে পারেন রাবড়ি দেবী, সেই বড় ছেলে বেশ কয়েক মাস বাড়ির বাইরে৷ যাদব পরিবার ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে বেশ কিছুটা অসহায় হয়ে পড়েছেন রাবড়ি দেবী৷ হয়তো তাই তিনি ছেলেকে ফিরে পেতে চাইছেন৷ তবে মায়ের ডাকে কি সাড়া দেবেন তেজপ্রতাপ? অভিমান ভুলে ফিরবেন ঘরে? ভোটের মরশুমে সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের৷
The post ‘ফিরে এসো’, অভিমানে ঘরছাড়া ছেলেকে কাতরস্বরে ডাক পাঠালেন রাবড়ি appeared first on Sangbad Pratidin.