সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত পাঁচ মাসে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে একের পর এক চিতার মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে তেজস ও সুরজ নামের দু’টি চিতার। তাই এহেন ঘটনা রুখতে বিশেষ পদক্ষেপ করছে বনদপ্তর। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দশটি চিতার রেডিও কলার খুলে ফেলা।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দু’জন বিশেষজ্ঞ আসছেন। ভারতে চিতা আনার ঐতিহাসিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ অ্যাড্রিয়ান টর্ডিফ বলেন, “রেডিও কলার চিতা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে এটাই যে একমাত্র কারণ তা নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার শুষ্ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত ওই চিতাগুলি। এই প্রথম ভারতীয় বর্ষা দেখছে তারা। ফলে নানান সমস্যা তৈরি হতে পারে।”
এই বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রক রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “রেডিও কলারের কারণে চিতার মৃত্যু হচ্ছে, এই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক কারণে সমস্ত চিতার মৃত্যু হয়েছে।” প্রসঙ্গত, চিতার গলায় ‘রেডিও কলার’ ব্যবহার করা হয় তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য।
[আরও পড়ুন:টাকার বিনিময়ে সেনার তথ্য পাচার ISI-কে! চরবৃত্তির অভিযোগে উত্তরপ্রদেশে গ্রেপ্তার যুবক]
মধ্যপ্রদেশের চিফ ফরেস্ট কনজারভেটর জে এস চৌহান জানিয়েছেন, “রেডিও কলার নিয়ে আগামিকাল একটি বৈঠক করা হবে। বর্ষাকালে এই রেডিও কলার থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই সময় বাতাসে আদ্রতা অনেক বেশি থাকে। ফলে কলারের আশপাশে চুলকোয় চিতাগুলি। নখের আঁচড়ে সেখানে ক্ষত তৈরি হয়। সেই জায়গায় মাছি বসে সংক্রমণ ছড়ায়। এর থেকে তাদের মৃত্যু হতে পারে।” তিনি আরও জানান, “আমাদের আরও পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হবে। মৃত্যুর অন্যান্য কারণগুলিও খতিয়ে দেখতে হবে। যে চিতাগুলির মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে দু’টি চিতার হার্ট, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই রেডিও কলার মারাত্মক বিষয় না হলেও মৃত্যু সঙ্গে এর যোগ থাকতে পারে।”
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার তেজসের মৃত্যুর পর দেখা গিয়েছিল তার গলায় ক্ষত রয়েছে। তবে তার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা ছিল, চিতাটি ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কিছুদিন আগে জঙ্গলের আর একটি চিতার সঙ্গে তার লড়াই বাধে। সে সময় শরীরে একাধিক ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। ওই লড়াইয়েরই রেশ কাটাতে পারেনি তেজস। তারপর থেকেই আতঙ্কে ভুগছিল আফ্রিকা থেকে ভারতের জঙ্গলে আনা চিতাটি। এরপর শুক্রবার মৃত্যু হয় সুরজের। যদিও তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে চিতাগুলির মৃত্যুর পিছনে ‘রেডিও কলারের’ বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না বনদপ্তর।
[আরও পড়ুন: মন্দির চত্বরে প্রেম প্রস্তাবের জের! কেদারনাথে নিষিদ্ধ মোবাইল ফোন]
বন্যদপ্তর জানিয়েছে, নামিবিয়া থেকে আনা দুটি চিতা গৌরব ও শৌর্যের একই রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই পর্যবেক্ষণ করার জন্য দশটি চিতার গলা থেকে রেডিও কলার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চিতাগুলি যেহেতু জঙ্গলে রয়েছে তাই তাদের গলা থেকে কলার খোলা সহজ হবে না। এই কাজ করতে কতদিন সময় লাগবে তাও বলা যাচ্ছে না।