সম্যক খান, মেদিনীপুর: এক ভূমিপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে সারাদিন প্রচারে অপর ভূমিপুত্র। এ যেন কেশপুরের অলিগলি চেনানোর খেলা। কোথায় দাঁড়াতে হবে, কোথায় খালি গলায়, কোথায় আবার মাইক হাতে যেন জনতাকে অভিবাদন জানাতে হবে, তা শেখানোর পালা। শনিবার সারাদিন প্রার্থী দেবের ছায়াসঙ্গী হিসেবে থেকে সেই দায়িত্বই পালন করে গেলেন একসময়কার ‘রবিনহুড’ তকমাধারী মহম্মদ রফিক। চরম গোষ্ঠীকোন্দল থাকলেও কেশপুরে এখনও রফিক গোষ্ঠীরই পাল্লা ভারী। তৈরি করে ফেলেছেন নতুন প্রজন্মের প্রদ্যোৎ পাঁজা, আসিফ ইকবালদের মতো নেতাদেরও। ‘ইউনাইটেড কেশপুর’বা সংক্ষেপে ইউ কে নাম নিয়ে তাঁরাই এখন মূল আসরে।
সালটা ছিল ২০০০। সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়ানে তৎকালীন পাঁশকুড়া (বর্তমান ঘাটাল) লোকসভার উপনির্বাচন। সেইসময়ই প্রচারে বের হওয়া সিপিআই প্রার্থী গুরুদাশ দাসগুপ্তর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে আসেন কেশপুর 'খ্যাত' মহম্মদ রফিক। ঘটনাচক্রে সেই পাঁশকুড়া উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম সরকার জিতে যাওয়ার পর একপ্রকার ‘রবিনহুড’ তকমা পেয়ে যান তিনি। চূড়ান্ত বামফ্রন্ট আমলে ওইসময় কেশপুর থেকে প্রায় ১০ হাজার লিডও এসেছিল একপ্রকার রফিকবাবুর হাত ধরে। তার পর অনেক জল গড়িয়েছে। একসময় ছাড়তেও হয়েছে তাঁর নিজের প্রিয় দল তৃণমূলকে। কিন্তু বেশিদিন বাইরে থাকতে পারেননি। ফের ফিরে এসেছেন।
[আরও পড়ুন; কৃষ্ণনগরে নিজের মেয়ে বনাম রাজবধূ, মতুয়া-সংখ্যালঘু ভোটের অঙ্কে শেষ হাসি কার?]
দীর্ঘদিন দলের মধ্যেই কোণঠাসা অবস্থায় থেকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। পুনরুদ্ধার করেছেন নিজের হারানো জমি। আর সেই হারানো জমি ফিরে পেয়েই কেশপুরের বুকে আজও তিনি নেতা 'নম্বর ওয়ান'। দল এবার তাঁকে এই কেশপুর থেকে জেলা পরিষদে প্রার্থী করেছিল। প্রায় হাফ লক্ষ ভোটে জিতেছেন। আজ তিন জেলা পরিষদের দলনেতা। কালের নিয়মে বেড়েছে বয়স। হয়ে গিয়েছে বাইপাস সার্জারিও। ভুগছেন নার্ভের সমস্যাতেও। মাঝেমধ্যে হাসপাতালেও ভর্তি থাকতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু ইচ্ছাশক্তিতে এখনও তিনি চিরযৌবন। বেশীক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে না পারলেও আজও তিনি জেলাজুড়ে দলের কর্মসূচিতে চলে যান।
এদিন সকাল থেকে সারাদিনই কেশপুর ব্লকে প্রচারে ছিলেন দেব। একপ্রকার ছায়াসঙ্গী হিসেবেই তাঁর সঙ্গে ঘুরেছেন মহম্মদ রফিক। বিভিন্ন অঞ্চলে খানদশেক পথসভা থেকে শুরু করে ছিল জনসংযোগ, তার সঙ্গে ছিল চায়ের আড্ডাও। সব জায়গাতেই ছায়ার মতো হাজির ছিলেন রফিকবাবু। আর তাঁদের দুদিকে ছিলেন বর্তমান ও প্রাক্তন ব্লক সভাপতি যথাক্রমে প্রদ্যোৎ পাঁজা ও সঞ্জয় পান। অন্যান্য ব্লকের মতো কেশপুর ব্লকেও কোন্দল চরমে। একবার বা দুবার নয়, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির-সই করা চতুর্থ তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। তাও আবার যুগ্ম আহ্বায়ক করতে হয়েছে দুই গোষ্ঠীর দুই নেতা প্রদ্যোৎ ও সঞ্জয়কে। আপাতত কোন্দল ভুলে সকলকে এক হওয়ার বার্তা দিয়েছেন প্রার্থী থেকে শুরু করে খোদ দলনেত্রীও। সেই নির্দেশ পেয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। পিছনে আরও একটি কারণ আছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর মেদিনীপুর সফরকালে এক বৈঠকে দলনেত্রীকে কেশপুর থেকে ৮০ হাজার ভোটে লিড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন রফিকবাবু। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার তাগিদেই তিনি আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন।