সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: তিন ঘণ্টা জেরার পর বিরতি, ইডি দপ্তর থেকে বেরলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সোমবার সকাল এগারোটা পনেরো নাগাদ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসে পৌঁছন রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। প্রায় ঘণ্টা তিনেকের জেরার পর বিরতিতে ইডি অফিস ছাড়েন তিনি। এদিন সকালে রাহুলের বাড়িতে যান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দাদার পাশে দাঁড়াতে ইডি দপ্তর পর্যন্ত গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। হাজিরার আগে দলের সদর দপ্তরেও গিয়েছিলেন রাহুল। সেখান থেকেই ইডির অফিসে পৌঁছন।একটানা তিন ঘণ্টার জেরার পরে দুপুরে ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে যান রাহুল। এরপর স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে গিয়ে কোভিড আক্রান্ত মা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় প্রাথমিকভাবে রাহুল গান্ধীকে গত ২ জুন এবং তাঁর মা সোনিয়া গান্ধীকে (Sonia Gandhi) আগামী ৮ জুন হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইডি। কিন্তু রাহুল গান্ধী তখন ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে ছিলেন। তাই ইডির দপ্তরে হাজিরা দিতে পারেননি। বদলে চিঠি লিখে তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়েছিলেন। রাহুলের সেই অনুরোধ মেনে তাঁকে ১৩ জুন দিল্লিতে ইডির সদর দপ্তরে হাজিরা দিতে বলা হয়। সেই মতোই এদিন সকাল ১১টা ১৫ নাগাদ ইডি দপ্তরে হাজির হন কংগ্রেস নেতা। সঙ্গে ছিলেন দিদি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
[আরও পড়ুন: ভারতীয় অর্থনীতিতে ফের ধস, বাজার খুলতেই টাকার দামের সর্বকালীন পতন]
কংগ্রেস সাংসদকে তলব করার পরেই দলের তরফে জানানো হয়েছিল, দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখানো হবে। সেই মতোই সোমবার সকাল থেকেই দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরের সামনে ভিড় জমাতে থাকেন সমর্থকেরা। ইডি দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। জনপ্রিয় সিনেমা ‘পুষ্পা দ্য রাইজ’এর সংলাপ অনুকরণে ‘ঝুঁকেগা নেহি’ পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ জানান। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, মোদি সরকার ভয় পেয়েছে। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ‘সত্যের সংগ্রাম’ চলবে। ব্রিটিশ সরকারও কংগ্রেসের লড়াইকে থামাতে পারেনি, সেখানে মোদি সরকার কী করবে?” বেশকিছু বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ।
[আরও পড়ুন: ‘বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা বেআইনি’, যোগী সরকারের ভূমিকায় সরব প্রাক্তন বিচারপতি]
উল্লেখ্য, কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। গতকাল তাঁকে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতাল ভরতি করা হয়। সোমবার ইডি দপ্তর থেকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে বেরিয়ে মা সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করেন রাহুল। সঙ্গে ছিলেন বোন প্রিয়াঙ্কা। গতকালই কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, কংগ্রেস নেত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকদিন তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাহুল গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধীর মালিকানাধীন ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি সংস্থা ২০১১ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড, কোয়াম-ই-আওয়াজ, এবং নবজীবন, এই তিনটি সংবাদপত্র ‘অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেডে’র কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে। অভিযোগ ছিল, ওই অধিগ্রহণ নিয়ম মেনে হয়নি। ঘুরপথে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেডের’ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের ফার্স্ট ফ্যামিলি পরিচালিত ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’। ২০১২ সালে অভিযোগ প্রকাশ্যে এলেও ইডি তদন্ত শুরু করে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালে এই মামলায় গান্ধীরা আগাম জামিন পেয়ে যান। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে তলব করে ইডি। তাঁর বক্তব্যের পরেই ডেকে পাঠানো হয় সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে।