বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: প্লেনারি অধিবেশন। সেখানে দলের আগামী রাজনৈতিক রণকৌশল ও সংগঠন নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। অথচ অধিবেশনে যোগ দিতে আসা প্রতিনিধিদের দিশা দেখাতে পারলেন না রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। সীমাবদ্ধ রইলেন ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যে। যাত্রার সাফল্য ধরে রাখতে এবার পূর্ব থেকে পশ্চিম পদযাত্রা করার পরিকল্পনা করেছে কংগ্রেস (Congress)। অসম থেকে গুজরাট এই পদযাত্রা হবে বলে জানালেন সাংসদ জয়রাম রমেশ। খানিকটা হলেও আগামী নির্বাচন ও দলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। জানালেন, কংগ্রেসের ওপর মানুষের অনেক প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণে দলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এদিকে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তিনি জানান, কংগ্রেস বহু জায়গায় তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে বিজেপিকে পরাজিত করা যায়।
দেশে বিজেপি (BJP) বিরোধী জোট গঠনে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কুণাল। তিনি জানান, এটা তো সময়ের দাবি। সেখানে শুধু কংগ্রেস নয়, আরও দলও রয়েছে। কংগ্রেস বহু জায়গায় তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে তৃণমূল (TMC) বা আরও দল রয়েছে, যারা বিজেপির বিরোধিতা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে বিজেপিকে পরাজিত করা যায়। কংগ্রেস নেতৃত্বকে এখন বাস্তব মেনে চলতে হবে। পুরনো জমিদারী ব্যাপার আর নেই। কংগ্রেসের অবস্থা হচ্ছে জলসাঘরের ছবি বিশ্বাসের মতো। রাহুল গান্ধী পরিক্ষীত ব্যর্থ। তিনি ব্যর্থ বলেই ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি এতগুলো সাংসদ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
[আরও পড়ুন: কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না লোকসান, এক মাসে ১২ লক্ষ কোটি টাকা হারাল আদানি গোষ্ঠী]
গোটা প্লেনারি অধিবেশন জুড়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের একটাই লক্ষ্য ছিল যেনতেন প্রকারে রাহুলকে খুশি করা। প্রত্যেক নেতার মুখেই ঘুরে ফিরে আসে ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যের প্রসঙ্গ। রাহুলই যে আগামী দিনে নতুন কংগ্রেসের হাল ধরবেন সেই বার্তাও দেওয়া হয়। কিন্তু হাজার হাজার প্রতিনিধিকে নিরাশ করে মূলত ভারত জোড়ো যাত্রা এবং আদানিকাণ্ডে বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখেন রাহুল। আগামী দিনে দলের রাজনৈতিক রণকৌশল বা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে করণীয় নিয়ে চুপ থাকেন তিনি।
সংগঠন নিয়ে বার্তা দেন প্রিয়ঙ্কা। জানান, শক্তিশালী কংগ্রেস গঠনে নতুন প্রজন্মকে দলের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সাংগাঠনিক বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা যেন কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। দলের বক্তব্য নিয়ে নেতা কর্মীদের মানুষের দরজায় যাওয়ার পরামর্শ দেন প্রিয়ঙ্কা। সেইসঙ্গে তাঁর সতর্ক বার্তা, নির্বাচন এলেই মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়ে নজর এড়াতে জাতপাত, ধর্ম নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলকে একজোট হতে হবে। সব রাজনৈতিক দল ও মানুষকে জোট বাধার আহ্বান জানান তিনি।
অধিবেশনে ভারত জোড়ো যাত্রার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সময় কাশ্মীর ও চিন নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনায় সরব হন রাহুল গান্ধী। তাঁর মতে, কাশ্মীরের মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার। তাই ভারত জোড়ো যাত্রায় কাশ্মীরের লালচকে লক্ষ লক্ষ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। সেইসঙ্গে চিন ইস্যুতে বিজেপি সরকারকে ‘কাপুরুষ’ বলে আক্রমণ করেন। তাঁর দাবি, আসলে বিজেপি ও সংঘ পরিবার ক্ষমতার জন্য লড়াই করে। আর কংগ্রেস সত্যের জন্য। এখানেই দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক।
[আরও পড়ুন: মদ কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া]
আদানি ইস্যুতে রাহুল বলেন, মোদি সরকার দেশের সব সম্পত্তি একজনের হাতে তুলে দিচ্ছে। সংসদে আলোচনা করতে দিচ্ছে না। আদানিকাণ্ড নিয়ে কোনও বক্তব্য রাখলে তা রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে আদানি নিয়ে তাঁরা যে আরও সোচ্চার হবেন তা স্পষ্ট করার পাশাপাশি দলের তরফে বেশকিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়। ঘোষণা করা হয়, ৬ মার্চ দেশের সর্বত্র এলআইসি দপ্তর ও এসবিআইয়ের শাখার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হবে। এছাড়াও এপ্রিল মাসে প্রতিটি রাজ্যের জেলা ও রাজ্যস্তরে পর্দা ফাঁস কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
অধিবেশনের শেষদিন সক্রিয় রাজনীতিতে সোনিয়া গান্ধীর থাকা নিয়ে যে জল্পনা শুরু হয়েছিল। তাতে জল ঢালা হয়। এই বিষয়ে মুখ খোলেন দিল্লির কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা। সোনিয়া মঞ্চে হাজির থাকাকালীনই তিনি জানান, ম্যাডাম রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছে বলে যে জল্পনা তা ভিত্তিহীন। সোনিয়ার রাজনৈতিক অবসর নিয়ে জল্পনা প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ জানান, উনি বর্ণময় চরিত্র। সর্বভারতীয় কংগ্রেস পরিবারের কর্ত্রী। তিনি কখন অবসর নেবেন বা নেবেন না তা তাঁর ব্যাপার।