অর্ণব আইচ: রাজারাম রেগের হাত ধরেই শিব সেনার শীর্ষনেতাদের উপর হামলা চালাতে চেয়েছিল মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড ডেভিড হেডলি। সেই তালিকায় ছিলেন বাল ঠাকরে, উদ্ধব ঠাকরেও। তার জন্য রাজারামের সঙ্গে মুম্বইয়ে শিব সেনা ভবনেও দেখা করেছিল সে। মুম্বইয়ে তাঁদের উপর হামলা সম্ভব না হলে কীভাবে রাজারামের মাধ্যমে তাঁদের আমেরিকায় আমন্ত্রণ জানিয়ে হামলার ছক সাজানোর চেষ্টা করে হেডলি। এই ব্যাপারে আইএসআইয়ের আধিকারিক মেজর ইকবাল ও লস্কর-ই-তইবার চাঁই সাজিদ মিরের সঙ্গে হেডলির আলোচনাও হয়।
মুম্বই হামলার কয়েক বছর আগে থেকে যখন পাক চর সংস্থা আইএসআইয়ের মদত ও জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তইবার নির্দেশে ডেভিড হেডলি মুম্বইজুড়ে রেইকি করছে, তখন এক লিংকম্যানের মাধ্যমে রাজারামের সঙ্গে যোগাযোগ হয় হেডলির। তখনও রাজারাম নিজেকে ‘কনসালট্যান্ট’ বলে পরিচয় দিত। হেডলিকে জানিয়েছিল, বিশেষ ক্ষেত্রে একশো কোটি টাকা পর্যন্ত ‘কনসালট্যান্সি চার্জ’ নেয় সে। এর পর পেরিয়ে গিয়েছে ১৬-১৭ বছর। সোমবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিকরা যখন রাজারামকে নিয়ে বিমানে কলকাতার দিকে রওনা দিচ্ছেন, তখনও সে গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, সে পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু ‘কনসালট্যান্সি’তেই তার রোজগার। কিন্তু তার পেশা সংক্রান্ত বিষয়ে রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশা। এতেই বিপুল টাকা রোজগার করে সে মুম্বইয়ের মাহিমে ফ্ল্যাটও কিনে পরিবার নিয়ে থাকে।
[আরও পড়ুন: ফেসবুক বান্ধবীর টাকা-গয়না হাতিয়ে হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ! মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার যুবক]
সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর হামলার ছক কষার অভিযোগে মুম্বইয়ের মাহিম থেকে গ্রেপ্তার রাজারাম রেগের সঙ্গে লস্কর ও আইএসআইয়ের যোগের সন্ধান পেয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। ডেভিড হেডলি শিকাগোর আদালতে জানায় যে, রাজারাম রেগে তার কাছে দাবি করেছিল যে, তার সঙ্গে মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাটের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ, তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর যোগাযোগ রয়েছে। রাজারাম রেগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ডেভিড হেডলির পুরনো বক্তব্যকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। মুম্বই হামলার তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের জেরায় রাজারাম রেগে দাবি করেছিল যে, বিলাস ওয়ারকে নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার সঙ্গে হেডলির যোগাযোগ হয়। মিনিট দুয়েকের জন্য হেডলি ও বিলাস তার সঙ্গে শিব সেনা ভবনের সামনে দেখা করে। হেডলি ওই ভবনের ভিতর ঢুকতে চায়। কিন্তু রাজারাম তাকে ভিতরে নিয়ে যায়নি। যদিও হেডলির দাবি, রাজারাম মুম্বইয়ের দাদারে শিব সেনা ভবনের ভিতরই তার সঙ্গে দেখা করেছিল। নিজেকে রাজারাম শিব সেনার জনসংযোগ আধিকারিক হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল। যদিও এনআইএ-র কাছে রাজারাম দাবি করেছিল, শিব সেনা ভবনে তার যাতায়াত রয়েছে। একজন শিব সেনা সদস্য হিসাবে অনেকেই তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাই হেডলি মনে করেছিল রাজারামই জনসংযোগ আধিকারিক। গোয়েন্দাদের মতে, যেহেতু দু’জনকে কখনও মুখোমুখি বসানো যায়নি, তাই দু’জনের বক্তব্যে ফারাক রয়ে গিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আইএসআই ও লস্করের হামলার লক্ষ্য ছিলেন মুম্বইয়ের শিব সেনা নেতারা। তাই ডেভিড হেডলির লস্কর ই তৈবার হ্যান্ডলার বা নির্দেশক সাজিদ মির ও আইএসআইয়ের হ্যান্ডলার মেজর ইকবাল হেডলিকে ছক কষতে বলে। ডেভিড ওই জঙ্গি নেতাদের জানায়, তার সঙ্গে রাজারাম রেগে নামে একজনের যোগাযোগ হয়েছে। তার মাধ্যমে বাল ঠাকরে ও উদ্ধব ঠাকরেকে কোনওমতে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া গেলে সেখানেই দু’জনের উপর হামলা চালানো সম্ভব হবে। এদিকে, নিজেকে বিশ্বাসয়োগ্য করে তুলতে রাজারাম রেগে মেল করে ডেভিড হেডলিকে জানায়, দিল্লি, মুম্বই, গুজরাটে ভাল যোগাযোগ থাকার ফলে তার কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প রয়েছে। কোনও মার্কিনি ব্যবসায়ী তার মাধ্যমে লগ্নি করলে লাভবান হবেন। বাঁধ তৈরি, বিদ্যুৎ, সেচ, ওযুধ, শিক্ষা ও আইটি সংক্রান্ত বহু প্রকল্পে সে লগ্নি করানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এর বদলে সে শুধু কনসালট্যান্সি ফি বা চার্জ নেবে। রাজারাম রেগের ওই মেল ডেভিড হেডলি পাকিস্তানে তার দুই হ্যান্ডলার সাজিদ মির ও মেজর ইকবালকে পাঠায় সে। সেই মেলগুলিও উদ্ধার হয় বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।