মণিশংকর চৌধুরি, শিলং: শিলংয়ের তাপমাত্র অনেকটাই কম। ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের স্থান হিসেবে শিলং বেছে নেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘শিলং ঠান্ডা জায়গা, মাথা ঠান্ডা হবে।’ পরিবেশটা খানিকটা তেমনই। শিলংয়ে এখন ঝড়ের আগের স্থিতাবস্থা। আর ঘণ্টাখানেক পরেই (সকাল দশটায়) সিবিআই দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে।
[সিবিআইয়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর নাগেশ্বর রাওয়ের স্ত্রীর সংস্থায় তল্লাশি কলকাতা পুলিশের]
মেঘালয়ে কনরাড সাংমার এনপিপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের অংশ বিজেপিও। কিন্তু সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা-সহ উত্তরপূর্বের অন্য রাজনৈতিক দলগুলির। আর তার জেরেই রাজীব কুমারকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছে উত্তরপূর্বের রাজনৈতিক মহল। সিবিআই দপ্তরের সামনেও নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআইয়ের বিশেষ দলও প্রস্তুত হচ্ছে। সূত্রের খবর, সিবিআই আধিকারিকরা তিনটি ছোট ছোট দলে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই তিনটি দলেই তিনজন করে আধিকারিক আছেন, এরা দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করবেন রাজীবকে।তৈরি হয়েছে কঠিন প্রশ্নমালা। প্রশ্নগুলি কেমন, দেখে নিন একনজরে-
১. সারদা তদন্ত সংক্রান্ত কী কী নথি কলকাতা পুলিশের কাছে আছে, কী কী তথ্য সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে?
২. কাশ্মীর পুলিশ সুদীপ্ত সেনের যে নথিগুলি বাজেয়াপ্ত করেছিল, সেগুলি সব সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়েছে কিনা?
৩. সুদীপ্ত সেন যে পেনড্রাইভের কথা বলেছিল, পাওয়া যায়নি। বাজেয়াপ্ত হওয়া পেনড্রাইভ ও ল্যাপটপ ফেরত দেওয়া হয়েছিল। কাকে ফেরত দেওয়া হয়েছিল এবং তাতে কী কী আছে?
৪. সুদীপ্ত সেনের যে লাল ডায়েরির কথা বলছেন, তাঁর আদৌ কোনও অস্তিত্ব আছে কিনা?
৫. তদন্তে যে সিট গঠন করেছিল হাই কোর্ট, সেই সিটের আধিকারিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগ আছে কিনা, থাকলে কাদের সঙ্গে?
এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। সিবিআইয়ের আরও একটি দল দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে শিলং যাবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই তলব করা হয়েছে কুণাল ঘোষকে। তাঁকে ও রাজীব কুমারকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে।
[রাজীব কুমারকে জেরা করতে আজই শিলং যাচ্ছে সিবিআইয়ের ‘স্পেশ্যাল ১০’ টিম]
গতকাল বিকেলেই শিলং পৌঁছেছেন রাজীব। সঙ্গে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) জাভেদ শামিম এবং ডিসি (এসটিএফ) মুরলীধর শর্মা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন আইনজীবী ও মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব। আপাতত তিনি আছেন শিলংয়ের সিবিআই দপ্তর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরা ক্যাসলে। রাজীব কুমার ‘ওয়াই ক্যাটাগরি’র নিরাপত্তা পান। তাই মেঘালয় সরকার তাঁর জন্য গাড়ি ও পাইলট কারের ব্যবস্থা করেছিল। খানিকটা নজিরবিহীনভাবে মেঘালয় পুলিশ স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দিচ্ছেন কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে। ত্রিপুরা ক্যাসলের সামনে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে মেঘালয় পুলিশের বিশেষ কমান্ডো। সূত্রের খবর, শিলংয়ে রাজীব কুমারের যাবতীয় খরচ বহন করছে মেঘালয়ের সরকার।
The post শিলংয়ে সিবিআই দপ্তরে বেনজির নিরাপত্তা, রাজীব কুমারের জন্য তৈরি কঠিন প্রশ্নমালা appeared first on Sangbad Pratidin.