নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেল। সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষের আগের দিন, আগস্টের ৯ তারিখ নির্বাচন হবে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষদিন ৮ আগস্ট। সোমবার সকালে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে অনুরোধ করেন, সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমারও সর্বসম্মতিক্রমে তাঁদের প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য বিরোধীদের অনুরোধ করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। কিন্তু তাতে কোনওভাবেই রাজি নয় বিরোধী শিবির। নির্বাচন হবেই এবং তাঁরা প্রার্থী দেবে বলে এদিন বিরোধী শিবির স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদকে কেন্দ্র করে শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কোনও পক্ষই ‘বিনা যুদ্ধে সূচ্যাগ্র মেদিনী’ ছাড়তে রাজি নয়। তাই দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর পর এই পদে নির্বাচন হতে চলেছে। শেষবার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯২ সালে।
[আরও অসুস্থ করুণানিধি, আগামী ২৪ ঘণ্টা রাখা হবে কড়া নজরে]
শাসক শিবির তথা এনডিএ-র পক্ষ থেকে রাজ্যসভার জেডিইউ সাংসদ হরিবংশ নারায়ণ সিং-কে ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রার্থী করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেছিলেন, চলতি অধিবেশনে আর ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে না। শাসকপক্ষ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করবে না বলেও অনেকে যুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু সব জল্পনা কার্যত উড়িয়ে দিয়ে সরকার পক্ষ যেভাবে তড়িঘড়ি অধিবেশন শেষের আগের দিনটি নির্বাচনের জন্য বেছে নিয়েছে, তাতে তারা পদটি নিজেদের দখলে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও রাজ্যসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির নির্বাচনে এনডিএ-র প্রার্থী হিসাবে হরিবংশ এদিনই হেরে গিয়েছেন। বিরোধী শিবিরের প্রার্থী টিডিপি সাংসদ সি এম রমেশ শতাধিক ভোট পেয়ে জিতেছেন। পিএসসি-তে দু’টি পদ খালি থাকার সুবাদে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে ভূপেন্দ্র যাদব ও এনডিএ—র প্রার্থী হিসাবে হরিবংশকে প্রার্থী করা হয়েছিল। পিএসসি—তে সদস্য নির্বাচনের ঘটনা খুবই কমই ঘটে। সচরাচর সর্বসম্মতিক্রমেই তা নির্বাচন করা হয়। বিগত পাঁচ বছরে এ নিয়ে মাত্র দু’বারই এই ধরনের নির্বাচন হল। হরিবংশের এদিনের হারের পরে স্বাভাবিকভাবেই ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটবে কি না, জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিজেপি শিবির অবশ্য জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
[বড়সড় সাফল্য এনআইএ-র, দিল্লি বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার লস্কর জঙ্গি]
ডেপুটি চেয়ারম্যান পদটি সরকারপক্ষের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে কোমর বাঁধছে বিরোধীরাও। গতকালই বিরোধী শিবিরের ১৪টি দল কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে প্রথম দফার বৈঠক করেছে। আজ, চূড়ান্ত বৈঠকের পরেই বিরোধী শিবিরের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যসভায় শাসক ও বিরোধী জোটের সাংসদ সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। এর বাইরে রয়েছেন টিআরএস—এর ছয় ও বিজেডি—র ন’জন সাংসদ। দুই দলই সরকারপক্ষের প্রার্থীকেই সমর্থন করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। আবার শাসক শিবিরের শিবসেনার তিন সাংসদ বিরোধী প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে দাবি করেছেন বিরোধী শিবিরের প্রথম সারির এক নেতা। অবশ্য বিরোধী পক্ষের কিছু সাংসদ ক্রস ভোটিং করতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ এই নির্বাচনের জন্য কোনও রাজনৈতিক দলই হুইপ জারি করতে পারবে না। সব মিলিয়ে ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে।